একটি চার মারতে না পারার আক্ষেপ বদলে দিয়েছে তৌহিদ হৃদয়কে
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) গত আসরের ফাইনাল, শিরোপার লড়াইয়ে মুখোমুখি হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও ফরচুন বরিশাল। কঠিন সময়ে দায়িত্ব পড়ে তৌহিদ হৃদয়ের ওপর, আট নম্বরে নেমে ৯ বলে ৯ রানে অপরাজিত থাকেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। কিন্তু বরিশাল ১ রানে হেরে যায়। একটি চার মারতে পারলেই বদলে যেতে পারতো ম্যাচের ফল, কিন্তু চেষ্টা করেও বল সীমানা ছাড়া করতে পারেননি হৃদয়। সেই যে আক্ষেপ, সেখান থেকেই চেষ্টার শুরু। মিলেছে সাফল্য, এবারের আসরে তরুণ এই ব্যাটসম্যান দেখা দিয়েছেন দুর্বার চেহারায়।
এবারের বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে খেলছেন হৃদয়। প্রথম ম্যাচে তাকে ব্যাটিং করতে হয়নি, এর আগেই দলের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে ত্রাতার ভূমিকায় বাংলাদেশের যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের এই সদস্য। পাওয়ার হিটিংয়ে অভাবনীয় উন্নতি করে সেটার ছাপ রেখে যাচ্ছেন ২২ গজে। দ্বিতীয় ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করে দলকে জেতানো হৃদয় তৃতীয় ম্যাচেও ব্যাট হাতে নেতৃত্ব দিয়ে জিতেছেন সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার, তুলে নিয়েছেন টানা দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি।
৩৪ বলে ৫৫ রানের ইনিংসের পরের ম্যাচেই ৩৭ বলে ৫৬। পুরোপুরি বদলে যাওয়া এক হৃদয়। কেবল রান করাই নয়, শট বাছাই থেকে শুরু করে শট খেলার সামর্থ্য বাড়ানো, শটের জোন বাড়ানো, পরিষ্কারভাবে টাইমিং করাসহ সব দিক থেকেই নিজেকে আমূল বদলে ফেলেছেন ২২ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। আগের আসরের ফাইনালে একটি চার না মারার আক্ষেপই তাতে তাতিয়ে দেয়, এরপর শুধু চেষ্টা আর চেষ্টা। সেই চেষ্টার ফল অবশেষে পেতে শুরু করেছেন হৃদয়।
নিজেই পুরনো সেই ম্যাচের কথা মনে করলেন হৃদয়, বললেন, 'শেষ বছর যখন খারাপ খেলছিলাম, খেলার পর থেকেই চেষ্টা করছিলাম কীভাবে উন্নতি করা যায়। শেষ বছরটা ভালো খেলতে পারেনি। তারপর থেকে যখনই সুযোগ পেয়েছি, চেষ্টা করেছি টি-টোয়েন্টিতে কীভাবে একটু উন্নতি করা যায়। কিছু শট নিয়ে কাজ করেছি। কিছু ছোট ছোট জিনিস পরিবর্তন করার কারণে ইনশা আল্লাহ ভালো হচ্ছে।'
রেঞ্জ হিটিং নিয়ে কাজ করেছেন জানিয়ে হৃদয় বলেন, 'আমি চেষ্টা করেছি রেঞ্জ হিটিংয়ে কীভাবে উন্নতি করা যায়। একটু কাজ করছি, এইচপিতে ছিলাম। আমি ভালো খেলিনি তারপরও জাতীয় দলের সঙ্গে রেখেছিল ক্রিকেট বোর্ড। এই সুযোগগুলো যখন পেয়েছি, তখন চেষ্টা করেছি কীভাবে আরেকটু সামনের পর্যায়ে যাওয়া যায়। ক্রিকেট বোর্ডের কাছে অনেক কৃতজ্ঞ যে, আমি খুব একটা ভালো না খেললেও আমাকে সাথে রেখেছে।'
গত বিপিএল ফাইনালের পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন হৃদয়। যদিও শোককে শক্তিতে পরিণত করতে সময় নেননি তিনি। তার ভাষায়, 'বিপিএলে ওই ম্যাচটা হারার পর আমি মানসিকভাবে অনেক হতাশ ছিলাম। যদি একটা বাউন্ডারি মারতে পারতাম, খেলাটা একটু পরিবর্তন হতো। যদিও আমি ওই জায়গার ব্যাটসম্যান না, একদমই নিচে। তারপরও ব্যাটসম্যান হিসেবে যেখানে নামাবে, সেখানেই চেষ্টা করতে হবে কীভাবে দলকে এগিয়ে নেওয়া যায়। শেষ বল পর্যন্ত আমার আত্মবিশ্বাস ছিল যে, আমি ম্যাচটা জেতাব, কিন্তু পারিনি।'
টানা দুই ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি, দুই ম্যাচেই ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে হৃদয়ের হাতে। অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, 'প্রতিটা খেলোয়াড়ের জন্যই ভালো একটা অনুভূতির ব্যাপার। আলহামদুল্লিলাহ যে ব্যাক টু ব্যাক ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছি। আমার একটা জিনিস আমি অনুভব করি, আমি অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে যখনই ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছি, ব্যাক টু ব্যাক ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছি। আজকে আত্মবিশ্বাস ছিল, হয়তো ভালো শুরু করতে পারলে খেলাটা শেষ করতে পারব।'