রোমাঞ্চকর জয়ে সিরিজ বাংলাদেশের
শেষের ধসে লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়নি, তাই সংগ্রহ নিয়ে স্বস্তিতে থাকার উপায় ছিল না। আয়ারল্যান্ড ব্যাটিংয়ে নামার পর উল্টো আরও অস্বস্তি বাড়ে। একটা সময়ে মনে হচ্ছিল আইরিশদের জয় পাওয়াটা সময়ের ব্যাপার। কিন্তু তখনই দৃশ্যপটে বদল। মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে বোলিংয়ে ভেল্কি দেখালেন ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত। এতে ১৭ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশ খেলায় ফেরে।
লরকান টাকারের পর মার্ক অ্যাডায়ারের ব্যাটে এরপরও রোমাঞ্চ টিকে থাকে। শেষ ওভারে দুই উইকেট নিয়ে সেই রোমাঞ্চ জিতে নেন হাসান মাহমুদ, দলকে উপহার দেন দারুণ এক জয়। চেমসফোর্ডের কাউন্টি গ্রাউন্ডে রোববার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডকে ৫ রানে হারিয়েছে তামিম ইকবালের দল। দারুণ জয়ে আইসিসি সুপার লিগের সিরিজটি ২-০ ব্যবধানে জিতলো বাংলাদেশ।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। অধিনায়ক তামিম ইকবালের হাফ সেঞ্চুরির সঙ্গে নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন কুমার দাস, মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজদের মাঝারি ইনিংসে লড়াকু সংগ্রহ পায় সফরকারীরা। ৪৮.৫ ওভারে ১০ উইকেটে ২৭৪ রানে তোলে বাংলাদেশ। জবাবে পল স্টার্লিং, অধিনায়ক অ্যান্ডি ব্যালবার্নি, হ্যারি টেক্টর, লরকান টাকারদের ব্যাটে জয়ের পথে থাকলেও মুস্তাফিজের তোপে দিক হারায় আইরিশরা। আর শেষ ওভারে দারুণ বোলিংয়ে দুই উইকেট নিয়ে আয়ারল্যান্ডের মুঠো থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নেন হাসান। ৯ উইকেটে ৪৬৯ রানে থামে তারা।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা খারাপ হলেও মুহূর্তে তা সামলে নেয় আয়ারল্যান্ড। দলীয় ১৭ রানেই ওপেনার স্টিফেন ডোহেনিকে হারানো দলটি উইকেট হারায় ১২৬ রানে। দ্বিতীয় উইকেটে ১২৫ বলে ১০৯ রান যোগ করেন স্টার্লিং ও ব্যালবার্নি। ৭৮ বলে ৬টি চারে ৫০ রান করা ব্যালবার্নিকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন এবাদত হোসেন।
২০ রান পর স্টার্লিংকে সাজঘরের পথ দেখান মেহেদী হাসান মিরাজ। ফেরার আগে ৭৩ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ইনিংস সেরা ৬০ রান করেন আয়ারল্যান্ডের ডানহাতি এই ওপেনার। তবুও বিপদে পড়তে হয়নি আয়ারল্যান্ডকে। চতুর্থ উইকেটে ৬৫ বলে ৭৯ রানের জুটি গড়েন টাকার ও টেক্টর। এই জুটিতে ২২৫ রানে পৌঁছে যায় আইরিশরা।
তখন ম্যাচ পুরোপুরি তাদের হাতে। এমন সময়ে ৪৮ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৫ রান করা টেক্টরকে ফিরিয়ে ব্রেক থ্রু এনে দেন শান্ত। এরপর তোপ দাগেন মুস্তাফিজ। ১০ রানের ব্যবধানে কার্টিস ক্যাম্ফার ও জর্জ ডকরেলকে ফিরিয়ে ম্যাচের চেহারা পাল্টে দেন চার ম্যাচ পর একাদশে জায়গা পাওয়া বাংলাদেশের বাঁহাতি এই পেসার।
লরকাট টাকারের ব্যাটে জয়ের আশা বেঁচে থাকে আইরিশদের। কিন্তু দলীয় ২৪২ রানে তাকেও সাজঘরে ফেরান মুস্তাফিজ। ৫৩ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৫০ রান করেন তিনি। অ্যাডায়ারের ব্যাটে জয়ের পথেই থাকা আয়ারল্যান্ডের শেষ ওভারে দরকার পড়ে ১০ রান। কিন্তু ১০ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ২০ রান করা অ্যাডায়ারকে প্রথম বলেই ফেরান হাসান। তৃতীয় বলে অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনকেও আউট করেন তিনি। ৪৪ রান খরচায় ৪ উইকেট নেন মুস্তাফিজ। ৪৪ রান খরচায় হাসানের শিকার ২ উইকেট। একটি করে উইকেট পান এবাদত, মিরাজ ও শান্ত।
এর আগে টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা ভালো ছিল না। দলীয় ১৮ রানেই বিদায় নেন অভিষিক্ত রনি তালুকদার। আট বছর আগে জাতীয় দলে অভিষেক হওয়া ডানহাতি এই ওপেনার ৩২ বছর বয়সে ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে খেলতে নামেন। তবে দিনটা মনে রাখার মতো হলো না তার, ১৪ বলে ৪ রান করে আউট হন তিনি।
প্রথম উইকেট হারানোর চাপ অবশ্য দলকে বুঝতে দেননি তামিম ও শান্ত। দ্বিতীয় উইকেটে ৪৪ বলে ৪৯ রানের জুটি গড়েন তারা। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান শান্ত সাবলীল ব্যাটিং করছিলেন, কিন্তু এদিন বেশি পথ পাড়ি দেওয়া হয়নি তার। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ৩২ বলে ৭টি চারে ৩৫ রান করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন।
শান্তর বিদায়ের পর লিটেনর সঙ্গে জুটি গড়েন ধীর গতিতে ব্যাট চালিয়ে যেতে থাকা তামিম। তৃতীয় উইকেটে ৭৬ বলে ৭০ রানের জুটি গড়েন তামিম-লিটন। তুলে মারতে গিয়ে থামতে হয় লিটনকে। এর আগে ৩৯ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৫ রান করেন তিনি। অভিষেকের পর থেকে দারুণ ছন্দে থাকা তাওহিদ হৃদয় এদিন দ্রুতই থামেন। ১৬ বলে ১৩ রান করেন তরুণ এই ব্যাটসম্যান।
এরপর মুশফিকের সঙ্গে ২৭ রানের জুটি গড়ে বিদায় নেন তামিম। বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক ৮২ বলে ৬টি চারে ইনিংস সেরা ৬৯ রান করেন। ওয়ানডেতে এটা তার ৫৬তম হাফ সেঞ্চুরি। এরপর ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটিটা পায় বাংলাদেশ। ষষ্ঠ উইকেটে ৭২ বলে ৭৫ রান যোগ করেন মুশফিক ও মিরাজ।
মুশফিক ৫৪ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৪৫ ও মিরাজ ৩৯ বলে ৩টি চারে ৩৭ রান করেন। এই দুজন বিদায় নেওয়ার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। অভিষিক্ত মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী ১১ বলে ৮ রান করে আউট হন। দারুণ বোলিং করা আয়ারল্যান্ডের পেসার মার্ক অ্যাডায়ার ৪ উইকেট নেন। অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন ও জর্জ ডকরেল ২টি করে উইকেট নেন। ক্রেইগ ইয়ং একটি উইকেট পান।