অসহায় আত্মসমর্পণে প্রথমবারের মতো আফগানদের বিপক্ষে সিরিজ হার
বল হাতে সুবিধা করা গেল না, বাংলাদেশের আঘাত আফগান দেয়ালে কাঁপনও ধরাতে পারলো না। বাংলাদেশের বোলারদের কোণঠাসা করে রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে দলকে এনে দিলেন বিশাল সংগ্রহ। যে সংগ্রহ পাড়ি দেওয়া বাংলাদেশের জন্য দুরুহ তো বটেই, সঙ্গে থাকলো রেকর্ড গড়ে জেতার চ্যালেঞ্জও। কিন্তু রান পাহাড় টপকে জেতার লক্ষ্যে মাঠে নামা বাংলাদেশের ইনিংসে শুধু ভাঙনের সুরই বেজে গেল। একমাত্র ব্যতিক্রম মুশফিকুর রহিম একাই লড়ে গেলেও তা যথেষ্ট হলো না। আফগান শাসনে বিশাল হার সঙ্গী হলো বাংলাদেশের।
শনিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৪২ রানের বড় ব্যবধানে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হেরে গেছে বাংলাদেশ। রানের হিসেবে আফগানদের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হার, আগেরটি ছিল ১৩৬ রানে।
রানের হিসেবে আফগানিস্তানের এটা তৃতীয় সর্বোচ্চ জয়। বড় এই হারে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ খোয়ালো লিটন কুমার দাসের দল। এই প্রথমবারের মতো আফগানদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ হারলো বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে ১৪ ম্যাচে আফগানদের বিপক্ষে এটা বাংলাদেশের ষষ্ঠ হার।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা আফগানিস্তান দূরন্ত সূচনা পাওয়ার পাশাপাশি উদ্বোধনী জুটি থেকেই বড় সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায়। ম্যাচসেরা গুরবাজ ও ইব্রাহিমের রেকর্ড গড়া জুটিতে ৯ উইকেটে ৩৩১ রান তোলে আফগানরা। যা বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ও সব মিলিয়ে তৃতীয়।
বিশাল লক্ষ্য পাড়ি দিতে নেমে মুশফিক হাফ সেঞ্চুরির করেন, বাকিদের কেউ ৩০ রানও ছুঁতে পারেননি। পাঁচজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রানও করতে পারেননি। ফজলহক ফারুকী, মুজিব-উর-রহমান, রশিদ খানদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৪৩.২ ওভারে ১৮৯ রানে (১৮৯/৯, চোটের কারণে নামেননি এবাদত হোসেন) শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় দলীয় ১৫ রানেই বিদায় নেন লিটন। ১০ রানের ব্যবধানে ফিরে যান নাজমুল হোসেন শান্ত ও নাঈম শেখ। এরপর কিছুটা প্রতিরোধ, ৬৫ রানে আবারও শুরু উইকেট বৃষ্টি। এতে যোগ দেন তাওহদি হৃদয়, সাকিব আল হাসান ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। মাত্র ৭ রানের ব্যবধানে সাজঘরে ফেরেন এই তিন ব্যাটসম্যান।
৭২ রানে ৬ উইকেট খুইয়ে দিশা হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশকে কিছুটা স্বস্তি এনে দেন মুশফিক ও মেহেদী হাসান মিরাজ। সপ্তম উইকেটে ১০৮ বলে ৮৭ রানের জুটি গড়েন তারা। যদিও এতে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়নি। মিরাজ ৪৮ বলে ২টি চারে ২৫ রান করে আউট হন।
সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলা মুশফিক আরও কিছুটা সময় লড়েন। দলের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ১১৫ বলে ৬টি চারে ৬৯ রান করেন ডানহাতি অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। আগুনে বোলিং করা আফগান পেসার ফারুকী ৭.২ ওভারে ২২ রান খরচায় ৩টি উইকেট নেন। ১০ ওভারে ৪০ রান খরচায় মুজিবের শিকারও ৩ উইকেট। রশিদ ২টি ও মোহাম্মদ নবী একটি উইকেট পান।
এর আগে ব্যাটিং করতে নামা আফগানিস্তান ৭৫ রানের মধ্যে শেষ ৯ উইকেট হারায়। যেকোনো দলের জন্য এটা হতাশার। তবু হতাশা থাকার কথা নয় আফগানিস্তানের। এর আগেই যে আসল কাজটা করে ফেলে তারা। উড়ন্ত সূচনা পায় তারা। সাবলীল শুরুর পর ব্যাট হাতে শাসন শুরু করেন গুরবাজ, তাকে দারুণ সঙ্গ দেন ইব্রাহিম।
উদ্বোধনী জুটিতে ২৫৬ রান যোগ করেন তারা। যা উদ্বোথনী জুটিতে তো বটেই, ওয়ানডে যেকোনো উইকেটেই আফগানদের সেরা জুটি। উদ্বোধনী জুটিতে তাদের সেরা জুটি ছিল ১৪১ রানের, ২০১২ সালে শারজাহতে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জুটিটি গড়েন করিম শফিক ও জাভেদ আহমাদী।
১৫ ওভারেই স্কোরকার্ডে ১০০ রান যোগ হয়ে যায় আফগানদের। ২০০ ছুঁতে লাগে ৩২ ওভার। আড়াই'শ পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত গুরবাজ-ইব্রাহিমের জুটির পথচলা থামে। রেকর্ড গড়া জুটি গড়ার পথে বাংলাদেশের বোলারদের শাসন করে সেঞ্চুরি তুলে নেন গুরবাজ।
শেষ পর্যন্ত ১২৫ বলে ১৩টি চার ও ৮টি ছক্কায় ১৪৫ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন ডানহাতি এই ওপেনার। ওয়ানডেতে এটা তার তৃতীয় সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয়। এই ফরম্যাটে এটা তার সর্বোচ্চ রানের ইনিংস, আগের সেরা ছিল ১২৭, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে।
৩৭তম ওভারে এই জুটি ভেঙে অবশেষে বাংলাদেশকে ব্রেকথ্রু এনে দেন সাকিব আল হাসান। প্রথম উইকেট পতনে যেন খেই হারায় আফগানরা। ১০ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারায় তারা। এরপরও চলতে থাকে উইকেট বৃষ্টি। এর মাঝেই লড়াই চালিয়ে যাওয়া ইব্রাহিম তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি।
আফগান এই ওপেনার ১১৯ বলে ৯টি চার ও একটি ছক্কায় ১০০ রান করে আউট হন। নাজিবুর্লাহ জাদরান ১০ ও শেষ দিকে ১৫ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ২৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন মোহাম্মদ নবী। মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব ২টি করে উইকেট নেন। একটি উইকেট পান এবাদত হোসেন।