শ্রীলঙ্কা ও হাসানের দিনে মন খারাপ বাংলাদেশের
চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন শেষে ৪ উইকেটে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ৩১৪ রান। স্কোরকার্ডের চেহারাটা অবশ্য অন্যরকম হতে পারতো, যেখানে থাকতে পারতো বাংলাদেশের দাপট। ৪ উইকেটের জায়গায় ৭ উইকেট হতে পারতো, রানও হতে পারতো আরও কম। কিন্তু কয়েকটি ক্যাচ ও রান আউট মিস করে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ।
এর মাঝেও অভিষেক রাঙিয়েছেন ডানহাতি পেসার হাসান মাহমুদ। ২টি উইকেট নিয়েছেন, রান আউটের থ্রোটিও তার ছিল। আরও উজ্জ্বল হতে পারতো তার দিন, কিন্তু ক্যাচ মিসে তা হয়নি। এরপরও শ্রীলঙ্কার দিনে বাংলাদেশের যা সাফল্য, বেশিরভাগই হাসানের কল্যাণে। সাকিব আল হাসান নেন একটি উইকেট। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শনিবার মাঠে গড়ানো টেস্টের প্রথম দিন শেষে এগিয়ে শ্রীলঙ্কাই। দিনেশ চান্দিমাল ৩৪ ও অধিনায়ক ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ১৫ রানে অপরাজিত আছেন। এর আগে ব্যাট হাতে পথ দেখান নিশান মাদুসকা, দিমুথ করুনারত্নে ও কুশল মেন্ডিস।
উইকেট যে ব্যাটিং সহায়ক হবে, আগেরদিনই বুঝতে পেরেছিলেন ধনঞ্জয়া। তাই টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তই নেন তিনি। প্রথম সেশনটা চরম হতাশায় কাটে বাংলাদেশের। দিমুথ করুনারত্নে ও নিশান মাদুসকার দারুণ ব্যাটিংয়ে ২৭ ওভারের কোনো উইকেট না হারিয়ে ৮৮ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। যদিও এ দুজনকেই ফেরাতে পারতো নাজমুল হোসেন শান্তর দল, কিন্তু নিজেদের ভুলে তা হয়নি। এই সেশনে দুটি ক্যাচ হাতছাড়া করে স্বাগতিকরা।
ষষ্ঠ ওভারেই উইকেটের দেখা মিলতে পারতো। শরিফুল ইসলামের জায়গায় সুযোগ পাওয়া অভিষিক্ত হাসান সুযোগ তৈরি করেন, কিন্তু দ্বিতীয় স্লিপে দাঁড়ানো মাহমুদুল হাসান জয় ক্যাচটি নিতে পারেননি। অফ স্টাম্পের বাইরে করা হাসানের ব্যাক লেংথের ডেলিভারিতে ব্যাট চালান মাদুসকা, সহজ ক্যাচ হলেও তা মাটিতে ফেলে দেন জয়।
জীবন পেয়ে নিজেকে শুধরে নেন লঙ্কান ওপেনার, আরও দায়িত্বশীল হয়ে ব্যাট চালাতে থাকেন। ২২তম ওভারে গিয়ে হাসানের বলে আবারও সম্ভাবনা তৈরি হয়। কিন্তু সাকিব আল হাসান ক্যাচটি নিতে পারেননি। এগিয়ে যাওয়ার কারণে ক্যাচটি কঠিন হয়ে ওঠে, ক্যাচটি তালুবন্দী করতে দুর্বার ফিল্ডিং করতে হতো তাকে।
শেষ মুহূর্তে কেবল ছক্কা বাঁচাতে পারতেন সাকিব। কিন্তু ক্যাচ নেওয়া বা ছক্কা বাঁচানোর কোনোটিই করতে পারেননি প্রায় ৯ মাস পরে টেস্ট খেলতে নামা অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার একবার করে জীবন পেয়ে আর ভুল করেননি। খালেদ, হাসান, সাকিব, মিরাজদের সাবলীলভাবে খেলে সহজেই প্রথম সেশন পার করে দেন করুনারত্নে ও মাদুসকা।
২টি উইকেট হারালেও দ্বিতীয় সেশন নিজেদের দখলেই রাখে সিলেটে বড় ব্যবধানে জেতা শ্রীলঙ্কা। নিজেদের ভুলে এই সেশনে আউট হন মাদুসুকা ও করুনারত্নে। নিজেদের উইকেট বিলিয়ে আসেন এ দুজন। উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া এই দুই ব্যাটসম্যানকে হারানোর সেশনে ৩১ ওভারে ১২৬ রান তোলে সফরকারীরা।
শ্রীলঙ্কার যাওয়া দুই উইকেটেই অবদান রাখেন জাতীয় দলে কয়েক বছরের পথচলার পর টেস্টে অভিষেক হওয়া হাসান। দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই ভাঙে শ্রীলঙ্কার উদ্বোধনী জুটি। হাসানের দারুণ থ্রো থেকে বল পেয়ে দ্রুততার সঙ্গে স্টাম্প ভাঙেন লিটন কুমার দাস। ৫৭ রান করে রান আউটে কাটা পড়েন মাদুসকা।
শ্রীলঙ্কা ২০০ পেরোনোর পর টেস্টে নিজের প্রথম উইকেটের দেখা পান হাসান। যদিও তার কৃতিত্বের চেয়ে করুনারত্বের ভুলই বেশি ছিল। বেশ বাইরে করা হাসানের লেংথ ডেলিভারিতে ব্যাট চালিয়ে নিজের স্টাম্পই ভেঙে দেন করুনারত্নে। ১২৯ বলে ৮টি চার ও একটি ছক্কায় ৮৬ রান করেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
তৃতীয় সেশনেও হতাশা পিছু ছাড়েনি। ৬৬.৪ ওভারে মিরাজের বলে ক্যাচ তোলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। কিন্তু উইকেটরক্ষক লিটন কুমার দাস ও প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো শাহাদাত হোসেন দিপুর মাঝ দিয়ে বল চলে যায়। দিপু চেষ্টা করলেও তার হাতে লেগে বল বেরিয়ে যায়, শ্রীলঙ্কা পায় ৪ রান। দিনের বাকিটা সময়ে অবশ্য আর হতাশ হতে হয়নি। দুটি উইকেট আসে, ভাগাভাগি করে নেন সাকিব ও হাসান।
ম্যাথুসের সঙ্গে ৫৩ রানের জুটি গড়া মেন্ডিসকে সেঞ্চুরি না পাওয়ার হতাশায় ডোবান সাকিব। স্লিপে মিরাজের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে ১৫০ বলে ১১টি চার ও একটি ছক্কায় ৯৩ রান করেন মেন্ডিস। হাসানের দারুণ এক ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ নে ২৩ রান করা ম্যাথুসও, সাবেক লঙ্কান অধিনায়কের ক্যাচটিও নেন মিরাজ।
চট্টগ্রামের ফ্ল্যাট উইকেটে দিনের বাকি ৯ ওভার সহজেই কাটিয়ে পার করে দেন চান্দিমাল ও ধনঞ্জয়া। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট খেলতে নামা হাসান ১৭ ওভারে ৬৪ রানে ২টি উইকেট নেন। চোখের সমস্যায় ছুটি নিলেও নিজে থেকেই দ্বিতীয় টেস্টে ফেরা সাকিব ১৮ ওভারে ৬০ রান খরচায় একটি উইকেট পান। ডানহাতি পেসার খালেদ এবং দুই স্পিনার মিরাজ ও তাইজুল এদিন বলার মতো বোলিং করতে পারেননি। এমনকি সম্ভাবনাও তৈরি করতে পারেননি তারা।