এরশাদকে ক্ষমতাদখলের সুযোগ করে দেন খালেদা: প্রধানমন্ত্রী
প্রয়াত এইচএম এরশাদকে ১৯৮২ সালে ক্ষমতাদখলের সুযোগ করে দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তারপর এই সামরিক শাসকের কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার এ কথা বলেছেন। এ সময় জাতীয় সংসদের সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা প্রয়াত এইচএম এরশাদ ও অন্যদের জন্য শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিচ্ছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, “সাত্তার (বিচারপতি আবদুস সাত্তার) ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। রাজনীতিতে না এলেও সে সময় খালেদা জিয়া হঠাৎ করে বিবৃতি দেন সাত্তারকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদ থেকে বিদায় দেওয়ার জন্য। তাই আমি বলতে চাই, ১৯৮২ সালে এরশাদকে ক্ষমতা দখল করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া।”
“এ কারণেই তিনি (এরশাদ) খালেদা জিয়াকে শুধু দুটি বাড়ি নয়, নগদ ১০ লাখ টাকাসহ অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিলেন। যে কারণে জিয়া হত্যার ঘটনায় করা মামলা বিএনপি চালায়নি। বহু বছর পর ১৯৯১ বা ১৯৯৪ সালে খালেদা জিয়া এরশাদকে তার স্বামীহত্যার জন্য দায়ী করেছেন,” যোগ করেন হাসিনা।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, “১৯৮১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিচারপতি আবদুস সাত্তার ছিলেন বিএনপির প্রার্থী। প্রকৃত অর্থে, সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ তাকে (সাত্তার) প্রার্থী করেছেন। বিদেশি সংবাদপত্রে এরশাদ ঘোষণা দেন, তিনি সাত্তারকে প্রার্থী বানিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ এ জাতীয় প্রার্থিতার বিষয়ে আপত্তি তুলে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতার স্বার্থে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছে।”
জিয়াউর রহমান ও এরশাদের ক্ষমতাদখল হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী দুজনের কাউকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে উল্লেখ করা বৈধ নয়।”
সংসদনেতা অবশ্য বলেছেন যে, ব্যক্তিজীবনে এরশাদ ছিলেন অমায়িক এবং তার বিদেহী আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করেন তিনি।
এরশাদের শাসনব্যবস্থার বিষয়ে তিনি এভাবে মত দেন যে, ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হলে তিনি বিতর্কিত হতেন না।
১৯৮৮ সালের নির্বাচনে প্রায় কোনো দলই অংশ নেয়নি এবং ১৯৯০ সালে আন্দোলনের মুখে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন বলে জানান শেখ হাসিনা।
খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালীন ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপিও এ-জাতীয় একটি নির্বাচন করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তখনও প্রায় কোনো দলই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ওই সময়ে নিজেকে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করলেও তিনি ক্ষমতায় থাকতে ব্যর্থ হন।”
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের আন্দোলনের মুখে মাত্র ৪৫ দিনের মধ্যে ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হন।
“এর অর্থ নির্বাচনের বিষয়ে যে যাই বলুক না কেন, দলের যদি কোনো জনসমর্থন না থাকে এবং জনগণ যদি সেই নির্বাচনে সত্যিই ভোট না দেয় তবে কেউই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকতে পারে না”—এভাবেই মত দিলেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য সাবেক এমপি ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। ভারতের সঙ্গে ভূমি-সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে অবদান রাখায় ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকেও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন তিনি।