মোংলা বন্দর আইনের খসড়া অনুমোদন, পরিবেশ দূষণে কঠোর শাস্তি
পরিবেশ দূষণে কঠোর শাস্তির বিধানসহ ‘মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৯’ এর খসড়ায় সোমবার (১৯ আগস্ট) নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, চালনা পোর্ট অর্ডিনেন্স ১৯৭৬ বাতিলের লক্ষ্যে এই বিলটি মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হয়েছিল। কেননা এটি সামরিক শাসনামলে চালু হয়েছিল।
তিনি বলেন, বিল অনুযায়ী পানিতে, সৈকতে, তীরে অথবা ভূমিতে কোনো বর্জ্য, ছাই, তৈল বা তৈল জাতীয় পদার্থ বা অন্য কিছু ফেলে, পরিবেশের ক্ষতি করলে এক বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫ লাখ টাকার অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এটা আগে ছিল শুধু ৫০ হাজার টাকা জরিমানা।
সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফংকালে মন্ত্রী পরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম বলেন, ‘এই বন্দরটি চালনা বন্দর হিসেবে শুরু হয় ১৯৭৬ সালে এবং পরে ১৯৮৭ সালে এর নাম পরিবর্তন করে মোংলা বন্দর করা হয়। ‘চালনা পোর্ট অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬’ দিয়ে এটি পরিচালিত হয়ে আসছিল। যেহেতু সামরিক আমলের অর্ডিন্যান্স দিয়ে চলছিল তাই এটি পরিবর্তনের জন্য হাইকোর্ট কর্তৃক একটি বাধ্যবাধকতা ছিল।
তিনি বলেন, ‘আইনটিতে আগের অর্ডিন্যান্সের একটু পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন কিছু সংযোজন এবং বিয়োজন করে একে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে।’
মন্ত্রীপরিষদ সচিব বলেন,‘অভ্যন্তরীণ নৌযান’ (ইনল্যান্ড ভেসেল) এই শব্দটির কোন সংজ্ঞা ছিল না, এটি সংযুক্ত করা হয়েছে। এখানে সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- বাষ্প, তৈল, বিদ্যুৎ অথবা অন্য যান্ত্রিক পদ্ধতিতে অভ্যন্তরীণ জলপথে পরিবাহিত বা পরিচালিত যে যান তাকে অভ্যন্তরীণ নৌযান বলা হবে।
এছাড়া, ‘টার্মিনাল’ শব্দটি আগের আইনে ছিল না, এর সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
‘কন্টেইনার ফ্রেইট স্টেশন’ এই আন্তর্জাতিক শব্দটিও এখানে যুক্ত করা হয়েছে। ফৌজদারী কার্যবিধি শব্দটিও এখানে নিয়ে আসা হয়েছে।
‘বার্থ’ শব্দটিও নতুনভাবে যুক্ত করে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এবং ‘লীজ’ শব্দটিকে ভূমি আইন থেকে এখানে যুক্ত এবং সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
শফিউল আলম বলেন, আগের আইনের মতই এই বন্দর কর্তৃপক্ষ পরিচালনা এবং প্রশাসনের জন্য ৭ সদস্যের একটি বোর্ড থাকবে। যেখানে একজন চেয়ারম্যান এবং ছয় জন সদস্য থাকবেন। যার মধ্যে একজন সরকার কতৃর্ক মনোনীত শিপিং এর সঙ্গে জড়িত বেসরকারি ব্যক্তি থাকবেন।
তিনি বলেন, এখানে কমিটি গঠন সম্পর্কে একটি নতুন ধারা, ৯ ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া নতুন সংযোজিত ১৩ ধারায় ‘সংরক্ষিত বন্দর এলাকা ঘোষণা’ (কর্তৃপক্ষ বিশেষ আদেশ ধারা এ ধরনের ঘোষণা দিকে পারবে) এবং ১৯ ধারাতে ‘অপারেটর নিয়োগ’ ধারাটি নতুন সংযোজন করা হয়েছে।
সচিব বলেন, ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে শাস্তিবিধান নিয়ে ৪১ ধারায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেমন- যদি কোন ব্যক্তি এই আইন ও বিধির কোন বিধান লঙ্ঘন করে তাহলে তা একটি অপরাধ বলে গণ্য হবে এবং সেজন্য তিনি অনূর্ধ্ব ৬ মাসের কারাদন্ড বা ২ লাখ টাকা অর্থ দন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
অতীতে এখানে ৬ মাসের কারাদন্ড বা ৫০ হাজার টাকার অর্থদন্ডের বিধান ছিল। টুল পরিহারের জন্য (পেনাল্টি ফর ইভেডিং টুলস) অতীত শাস্তি ছিল ৬ মাসের দন্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ডের যে বিধান ছিল সেটি ৬ মাসের কারাদন্ড বহাল রেখে অর্থদন্ডের পরিমাণ ২ লাখ টাকা করা হয়েছে।
দূষণের জন্য শাস্তির ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে।অনূর্ধ্ব এক বছরের কারাদন্ড অথবা ৫ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
শফিউল আলম বলেন, কোন ব্যক্তির দেশিয় জাহাজ যদি বন্দর সীমানার মধ্যে পানিতে, সৈকতে বা তীরে অথবা ভূমিতে কোন বর্জ্য, তৈল বা তৈল জাতীয় পদার্থ বা ছাই বা অন্যকোন কিছু নিক্ষেপ করে অথবা নিক্ষেপ করিবার অনুমতি প্রদান করে যাহা দ্বারা পানি ও পরিবেশ দূষিত হয় এবং জলজ প্রাণি, উদ্ভিদ এবং প্রভৃতির ক্ষতি সাধিত হয় তাহা হইলে উক্ত কার্য হইবে একটি অপরাধ এবং উক্ত কার্যের জন্য এক বছরের কারাদন্ড, অথবা ৫ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইতে হইবে।
তিনি বলেন, অতীতে বিদ্যমান আইন এই অপরাধের জন্য কেবল ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান থাকলেও এখন জেল এবং জরিমানা উভয়ের বিধানই যুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া, টুল,রেট ইত্যাদি ফাঁকির জন্য দন্ড- যদি কোন ব্যক্তি আইনগতভাবে বন্দরের প্রাপ্য কোন ভাড়া, ফি, টোল,রেট,মাসুল বা ক্ষতিপূরণ ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করে সেজন্য একমাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং অনুর্ধ এক লাক টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারে। একইসঙ্গে ৪৫ ধারাতে একটি নতুন ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে- কোম্পানি কর্তৃক অপরাধ সংঘটন।
সচিব বলেন, কোন কোম্পানি কর্তৃক এই আইনের অধীনে কোন অপরাধ সংঘটিত হইলে সেই অপরাধের সহিত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা রহিয়াছে কোম্পনীর এরুপ প্রত্যেক পরিচালক, ম্যানেজার, সচিব এবং কর্মকর্তা-কর্মচারি উক্ত অপরাধ সংঘটন করিয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে। ফৌজদারী এ ধরনের অপরাধগুলোর বিচার ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী হবে। অর্থাৎ ‘সিআরপিসি’ অনুযায়ী বিচার ও শান্তি প্রযোজ্য হবে।
একই দিনে এ বৈঠকে মন্ত্রীসভার বৈঠকে ‘চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন- ২০১৯’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রীসভা।
এছাড়াও বাংলাদেশ প্রকৌশল গবেষণা কাউন্সিল ২০১৯ আইনের খসড়া, নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সম্পর্কিত সমন্বিত বিশেষ শিক্ষানীতিমালা, বাংলাদেশ পাওয়ার ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানী (বিপিইএমসি) লিমিটেড নামে জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানী এবং ‘স্টার্ট আপ বাংলাদেশ’ নামে মোট দুটি কোম্পানী গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা।
একই সাথে এদিন 'জাতীয় স্কুল মিল নীতি ২০১৯' এর খসড়া অনুমোদনও দেয় মন্ত্রিসভা।