ঘুমকে ‘অলসতা’, ‘অপ্রয়োজনীয়’ ভেবে সহকর্মীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কম ঘুমাতেন বিল গেটস!
মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্কিন বিলিয়নিয়ার বিল গেটসের জীবনেও রয়েছে কিছু অনুশোচনা। সম্প্রতি এক পডকাস্টে এ কথা সোজাসাপ্টা স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি।
গেটস বলেছেন, সুযোগ ফিরে পেলে নিজের পরিবারের সঙ্গে তিনি আরও বেশি সময় কাটাতেন; সন্তানরা যখন বড় হচ্ছিল তখন তাদেরকে নিয়ে ঘুরতে যেতেন এবং সপ্তাহান্তগুলো অন্তত একসঙ্গে উপভোগ করতেন।
কাজের প্রতি নিজের চরম আত্মনিয়োগের বিষয়টি আরও একবার তুলে ধরলেন বিশ্বের সফল এই উদ্যোক্তা। কর্মজীবনে পা দেওয়ার পর নিজেকে বিশ্রামের জন্য কতটুকু সময় দিতেন সে বিষয়েও জানালেন তিনি।
এর আগে, এক ব্লগ পোস্টে গেটস লিখেছিলেন, মাইক্রোসফটে কাজ শুরুর প্রথম দিনগুলোতে তিনি অফিসের পার্কিং লটে নজর রাখতেন যে, কোন কর্মী কাজ শেষে সর্বশেষ বের হচ্ছেন।
কিন্তু এবার তার এক নতুন পডকাস্ট 'আনকনফিউজ মি উইথ বিল গেটস'- এ তিনি বলেছেন, অন্যান্য সহ-কর্মীদের সঙ্গে ঘুম নিয়েও প্রতিযোগীতা করেছেন তিনি। তবে এ প্রতিযোগিতা কতটা বেশি ঘুমানো যায় তা নিয়ে নয়, বরং কতটা কম ঘুমানো যায় সে বিষয়ে। একই পডকাস্টে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন কমেডিয়ান সেথ রোজেন এবং তার স্ত্রী লরেন মিলার রোজেন।
গেটস জানান, ঘুমিয়ে তিনি আপাতদৃষ্টিতে কতটা সময় নষ্ট করেছেন এক সময় সেই হিসেবও কষেছেন।
"আমার বয়স যখন ত্রিশ বা চল্লিশের ঘরে তখন সহ-কর্মীদের সঙ্গে ঘুম নিয়ে আলাপ হতো; কে কত ঘণ্টা ঘুমিয়েছেন সে বিষয়ে আলাপ… একবার আমি বললাম, আমি মাত্র ৬ ঘণ্টা ঘুমাই এবং আমার এক সহ-কর্মী বললেন, 'ওহ, আমি মাত্র ৫ ঘণ্টা ঘুমাই'; এরপর এমনও হয়েছে, মাঝে মাঝে আমি একেবারেই ঘুমাই নি," বলেন গেটস।
"আমার তখন মনে হতো, আমাকে আরও চেষ্টা করতে হবে; কারণ ঘুম আসলে অলসতা, এটি অপ্রয়োজনীয়," যোগ করেন তিনি।
তবে নিজের সেই ধারণা থেকে এখন বেরিয়ে এসেছেন ১৩৩ বিলিয়ন ডলারের মালিক, এই মার্কিন বিলিয়নিয়ার।
পডকাস্টে তিনি আরও বলেন, "এখন আমরা জানি, মস্তিষ্ক সুস্থ রাখার জন্য পর্যাপ্ত ও ভালো ঘুম হওয়া প্রয়োজন। কারণ পর্যাপ্ত না ঘুমালে আলঝেইমারসহ যেকোনো ধরনের ডিমেনশিয়া হতে পারে। এ থেকে বাঁচতে ঘুম অতি জরুরি।"
পডকাস্টে নিজের বাবার মৃত্যুর বিষয়েও তুলে ধরেন গেটস, যিনি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে মারা যান। মৃত্যুর অন্তত এক দশক আগে থেকে আলঝেইমারে ভুগছিলেন গেটসের বাবা।
নিউরোডিজেনারেটিভ রোগকে ঘিরে চারপাশে বিভিন্ন 'বিভ্রান্তি' সম্পর্কে গেটস বলেন, "এটি নিয়ে সমাজে যথেষ্ট সচেতনতার অভাব এবং বিভ্রান্তি দুটোই রয়েছে।"
"আমার বাবার ক্ষেত্রে যা হয়েছিল তা হলো, তারা কখনোই ঠিকভাবে বলেনি যে এটি আলঝেইমার। যদিও তার মধ্যে এর সব লক্ষণই ছিল; যতক্ষণে বোঝা গেল, তখন দেরি হয়ে গেছে। দুঃখজনকভাবে চিকিৎসার তেমন উপায় কিছু ছিল না," বলেন গেটস।
"প্রকৃতপক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে রোগ নির্ণয় করতে পারার সঙ্গে সঙ্গেই তার চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয় না অনেক ক্ষেত্রেই। এটি এমন নয় যে, আপনি বললেন, 'এই নিন; এই অ্যান্টিবায়োটিকটি সেবন করুন এবং নিমিষেই আপনার রোগ নিরাময় হয়ে যাবে,'" যোগ করেন তিনি।
পরবর্তী দশকে বা দ্রুত সময়ের মধ্যেই এসব জটিল রোগের ওষুধ বিকাশ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন গেটস। সেইসঙ্গে, শেষ বয়সে এসব জটিল রোগ এড়াতে আগে থেকেই মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখারও পরামর্শ দেন তিনি।