ইভ্যালির সিইও রাসেলকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ আদালতের
ধানমন্ডি থানার প্রতারণার আরেক মামলায় বিতর্কিত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম হাসিবুল হক শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিন ধানমন্ডি থানার প্রতারণার এক মামলায় একদিনের রিমান্ড শেষে তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এ মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এ সময় একই থানার প্রতারণার আরেক মামলায় পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে বিচারক জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন।
এর আগে, রিমান্ড চাওয়ার বিষয়টি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ধানমন্ডি জোন) সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহ আল মাসুম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে খবরটি নিশ্চিত করেন।
বুধবার মুজাহিদুর রহমান নামে একজন গ্রাহক সর্বশেষ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন। সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করা সত্ত্বেও ইভ্যালি থেকে অর্ডারকৃত একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণকারী যন্ত্র না পাওয়ায় তিনি এ মামলা করেন।
মামলাটি গ্রহণ করে আদালত ধানমন্ডি থানায় এটিকে ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট (এফআইআর) হিসেবে দায়ের করতে বলেছে।
ধানমন্ডি মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় একদিনের রিমান্ড শেষে আজ (বৃহস্পতিবার) রাসেলকে আদালতে হাজির করা হয়। তার স্ত্রী শামীমাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আগের দিনের জিজ্ঞাসাবাদে মোহাম্মদ রাসেল পুলিশকে বলেন, দ্রুত মুক্তি পেলে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের প্রায় ৯৫০ কোটি টাকার দেনা পরিশোধ করতে পারবেন।
দেশের বাইরে কোনো অর্থপাচার করেননি বলেও দাবি করেছেন রাসেল। এছাড়া মামলায় প্রাণনাশের যে হুমকির অভিযোগ করা হয়েছে তা অস্বীকার করেছেন ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেল।
এদিকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির সব ধরনের সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এর আগে, গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় দায়ের করা একটি মামলায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাসেল ও শামীমাকে গ্রেপ্তার করে।
পরে ১৮ সেপ্টেম্বরে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম প্রাথমিকভাবে এই দম্পতির তিন দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এছাড়াও গত ১৪ সেপ্টেম্বর আইন লঙ্ঘন ও গ্রাহকদের প্রতারণার জন্য ইভ্যালির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
ওই দিন এক প্রেফ ব্রিফিংয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান বলেন, পেনাল কোড ১৮৬০, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা আইনের অনেক বিধান লঙ্ঘন করেছে ইভ্যালি।
এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া দুটি পৃথক বিবরণীতে ইভ্যালি জানিয়েছিল যে গ্রাহকদের কাছে তাদের দেনা ৩১১ কোটি টাকা এবং মার্চেন্টদের কাছে দেনা ২০৬ কোটি টাকা।
ইভ্যালি তাদের সাইটে বিভিন্ন পণ্যে বিশাল ছাড় দিয়ে এবং ৭ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ডেলিভারির প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রাহকদের প্রলুব্ধ করে অগ্রিম পেমেন্ট হিসেবে এ অর্থ সংগ্রহ করেছিল। কিন্তু ক্রেতারা এখনও তাদের অর্ডার করা জিনিস পাননি।
ইভ্যালির ব্যাংক হিসাবে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় গ্রাহকদের দেওয়া রিফান্ড চেক বাউন্স হয়ে গেছে।
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইভ্যালি সম্পর্কিত নথি চেয়ে বেশ কয়েকটি সরকারি সংস্থাকে চিঠি দিয়েছে।
এছাড়া ঢাকার একটি আদালত ই-কমার্স কোম্পানিটির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ চলমান থাকা অবস্থায় মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনের বিদেশভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।