এশিয়ান হাইওয়ে: একটি উচ্চাভিলাসী কাগুজে পরিকল্পনা
এক লাখ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পাকা রাস্তা এশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করবে ইউরোপকে। পণ্য ও যাত্রী নিয়ে বিনা বাধায় লরি, বাস ও গাড়ি চলবে সেই রাস্তায়। কাগজে-কলমে পরিকল্পনাটা শুনতে দারুণ লাগে।
প্রকল্পটির নাম এশিয়ান হাইওয়ে। এ প্রকল্পের আওতায় অসংখ্য সড়কের একটা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার কথা ছিল। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যুক্ত হওয়ার কথা ছিল দুই মহাদেশের দুই দূরতম প্রান্তের। কথা ছিল, ইউএন-এসক্যাপের এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক এমন এক রুট নির্মাণ করবে যা ঢাকাকে ছুঁয়ে যাবে। আর ইস্তাম্বুলকে যুক্ত করবে টোকিওর সঙ্গে।
রুট ম্যাপ অনুসারে, একজন যাত্রী ঢাকার একটা হাইওয়েতে প্রবেশ করে বিনা বাধায় তামাবিল হয়ে ভারত ও মিয়ানমার অঞ্চল দিয়ে হো চি মিন সিটি, হ্যানয়, বেইজিং, সিউল পেরিয়ে সবশেষে টোকিওতে পৌঁছাতে পারবেন। অন্য রুটটি বের হবে বেনাপোল দিয়ে। তারপর কলকাতা, নয়াদিল্লি, লাহোর, ইসলামাবাদ, কাবুল, তেহরান হয়ে ইসলামাবাদে গিয়ে শেষ হবে।
এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল ১৯৫৯ সালে, স্নায়ুযুদ্ধের সময়। ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক তৈরির উদ্দেশ্য ছিল এশিয়ার ৩২টি দেশকে ইউরোপের সঙ্গে যুক্ত করা। নেটওয়ার্কটি তৈরির জন্য ২০০৩ সালে ব্যাংককে একটি আন্তঃসরকার চুক্তি গৃহীত হয়েছিল। বাংলাদেশ ২০০৯ সালে আঞ্চলিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে হাইওয়ে নেটওয়ার্কে সংযুক্তির আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেয়।
রুট ম্যাপ অনুসারে, একজন যাত্রী ঢাকার একটা হাইওয়েতে প্রবেশ করে বিনা বাধায় তামাবিল হয়ে ভারত ও মিয়ানমার অঞ্চল দিয়ে হো চি মিন সিটি, হ্যানয়, বেইজিং, সিউল পেরিয়ে সবশেষে টোকিওতে পৌঁছাতে পারবেন। অন্য রুটটি বের হবে বেনাপোল দিয়ে। তারপর কলকাতা, নয়াদিল্লি, লাহোর, ইসলামাবাদ, কাবুল, তেহরান হয়ে ইসলামাবাদে গিয়ে শেষ হবে।
প্রকল্পটি ছিল উচ্চাভিলাষী। মহা উৎসাহ ও ধুমধামের সাথে প্রকল্পটির কাজ শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত তহবিল কমে আসতে থাকে। রাজনৈতিক টানাপোড়েনে বলতে গেলে হিমঘরেই চলে গেছে এশিয়ান হাইওয়ে প্রকল্প। প্রকল্পটির কাজ ফের কখনও শুরু হবে কি না—কিংবা হলেও কবে শুরু হবে—তা-ও নিশ্চিত নয়।
বাংলাদেশের অংশে এশিয়ান হাইওয়ের ১ হাজার ৭৭১ কিলোমিটার তৈরি হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক ও ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে ৩০০ কিলোমিটারেরও কম অংশের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এশিয়ান হাইওয়ে প্রকল্পের এই অংশের কাজই কেবল সম্পন্ন হয়েছে।
আঞ্চলিক সংযুক্তির ধারণাটি জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউএন-এসক্যাপ, সার্ক, আসেক, বিবিআইএন, বিসিআইএম ও বিমসটেকের মতো আঞ্চলিক উদ্যোগের আওতায় এ ধারণা আরও জনপ্রিয় হয়েছে। তা সত্ত্বেও এই উপ-অঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশার সঙ্গে তাল রেখে প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়নি।
এই সংযুক্তির ফলে যেসব অভূতপূর্ব সুফল আসার কথা ছিল—ব্যবসার প্রসার, বিনিয়োগ ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে ট্রানজিট—তার সবই স্বপ্ন থেকে গেছে।
কেন এ অঞ্চল সংযুক্ত হতে পারল না
বলা হয়, অন্যদের মতো বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও উদ্যোগের অভাবে এ প্রকল্প আর এগোয়নি। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ ইঙ্গিত করেছেন, ভারত নেতৃত্ব নিতে পারেনি বলেই এ প্রকল্প থমকে গেছে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, 'চীনের মতো ভারতেরও সুযোগ ছিল এই আঞ্চলিক সংযোগ নিশ্চিটের কাজে নেতৃত্ব দেওয়ার। কিন্তু তারা তা করেনি।
তিনি আরও বলেন, এই সড়কগুলো তৈরি না হওয়ায় বাংলাদেশ অনেক অর্থনৈতিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যেমন, কুনমিং পর্যন্ত একটা ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা ছিল। চীন রাস্তাটি তৈরি করতে রাজি হয়েছিল, সম্মতি দিয়েছিল মিয়ানমারও। কিন্তু গত দশকের শেষ দিকে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার চুক্তি করতে অসম্মতি জানায়। কাজটি করা গেলে বাংলাদেশ সরাসরি কুনমিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারত।
১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক তৈরির উদ্দেশ্য ছিল এশিয়ার ৩২টি দেশকে ইউরোপের সঙ্গে যুক্ত করা। নেটওয়ার্কটি তৈরির জন্য ২০০৩ সালে ব্যাংককে একটি আন্তঃসরকার চুক্তি গৃহীত হয়েছিল। বাংলাদেশ ২০০৯ সালে আঞ্চলিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে হাইওয়ে নেটওয়ার্কে সংযুক্তির আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেয়।
অথচ সম্প্রতি মিয়ানমার ও ভারত সেভেন সিস্টার্স রাজ্যকে—অরুণাচল, আসাম, মেঘালয়, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও ত্রিপুরা—প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার নেটওয়ার্ক সড়কের মাধ্যমে মিয়ানমারের সিটওয়ের সাথে সংযুক্ত করেছে।
বাংলাদেশ সহজেই এই নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে পারত। এর ফলে সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলো প্রবেশ করতে পারত বাংলাদেশের বন্দরগুলোতে। ফলে বেড়ে যেত ব্যবসা।
অধ্যাপক শামসুল বলেন, 'একটা চুক্তি করতেই দীর্ঘ সময় লেগে গেছে। ইউরোপে অর্থনৈতিক সংযোগ রয়েছে, কিন্তু আমাদের অঞ্চলে নেই। এরকম অর্থনৈতিক সংযোগের উপকারিতা বুঝতে আমাদের অনেক সময় লেগেছে।'
শামসুল হক বলেন, আঞ্চলিক সংযুক্তি গড়ে তোলায় ভারতের সবচেয়ে বড় ভূমিকা নেওয়া উচিত ছিল। চীন অনেক উদ্যোগ নিলেও ভারত এরকম কোনো উদ্যোগই নেয়নি।
তিনি বলেন, 'কানেক্টিভিটি কীভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে, সে বিষয়ে বাংলাদেশের কোনো পরিকল্পনা বা গবেষণা নেই। মাঝে মাঝে আমরা এই বিষয়ে কথা বলি বটে, কিন্তু আমাদের কোনো দূরদৃষ্টি নেই। এমনকি কাগজে-কলমেও আমাদের কানেক্টিভিটির স্বপ্ন নেই।'
ভারতীয় বিশেষজ্ঞ, আসিয়ান-ইন্ডিয়ান সেন্টারের সমন্বয়ক প্রবীর দে অবশ্য আঞ্চলিক সংযুক্তির ক্ষেত্রে ভারতের নেতৃত্ব দেওয়ার ব্যর্থতার কথা অস্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, 'ত্রিদেশীয় হাইওয়ের কাজ আগামী বছর সম্পন্ন হবে। এটি ভারত, মায়ানমার ও থাইল্যান্ডকে সংযুক্ত করবে।'
বাস্তব চিত্র
বর্তমানে এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কে ৪৪টি পৃথক রুট রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি রুট—এএইচ১, এএইচ২ ও এএইচ৪১—পড়েছে বাংলাদেশে।
তিনটি রুটের কাজই চলমান, কিন্তু শেষ হতে এখনও অনেক দেরি।
২০১৬ সালে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ কর্তৃক প্রস্তুত করা রিজনাল রোড কানেক্টিভিটি বাংলাদেশ পারস্পেকটিভ অনুযায়ী, বাংলাদেশে তিনটি এশিয়ান হাইওয়ে (এএইচ) রুট থাকবে। এগুলো হলো: এএইচ১ (তামাবিল-বেনাপোল ৪৯২ কিলোমিটার), এএইচ২ (তামাবিল-বাংলাবান্ধা ৫১৭ কিলোমিটার) এবং এএইচ৪১ (টেকনাফ-মোংলা ৭৬২ কিলোমিটার)। মোট দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৭৭১ কিলোমিটার।
তিনটি রুটই রাজধানী ঢাকাকে ছুঁয়ে যাবে। দুটো রুট দুই প্রান্তে ভারতকে সংযুক্ত করবে। অন্য রুট, এএইচ৪১ বাংলাদেশের মধ্যে আছে, তবে টেকনাফ দিয়ে মিয়ানমারসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে নেওয়া হতে পারে।
প্রকৃতপক্ষে জাতীয় মহাসড়কগুলো এই রুট তিনটির অন্তর্ভুক্ত। এই মহাসড়কগুলো কমপক্ষে ২৬ প্রকল্পের অধীনে তৈরি হয়েছে কিংবা তৈরির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
কুনমিং পর্যন্ত একটা ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা ছিল। চীন রাস্তাটি তৈরি করতে রাজি হয়েছিল, সম্মতি দিয়েছিল মিয়ানমারও। কিন্তু গত দশকের শেষ দিকে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার চুক্তি করতে অসম্মতি জানায়। কাজটি করা গেলে বাংলাদেশ সরাসরি কুনমিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারত।
তামাবিল-কাঁচপুর, কাঁচপুর-ঢাকা, ঢাকা (দক্ষিণ)-মাওয়া-ভাঙ্গা, পদ্মা সেতু, জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা, এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-বগুড়া-রংপুর, পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা, টেকনাফ-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-দাউদকান্দি এবং জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা প্রকল্পগুলো কাগজে-কলমে এশিয়ান হাইওয়ে নয়, কিন্তু সরকারি নথিপত্র অনুযায়ী এগুলো তিন এএইচ রুটেরই অংশ।
এশিয়ান হাইওয়ের মানে উন্নীত করার জন্য এই প্রকল্পগুলোকে নিয়ে কোনো কাজ করা হয়নি। ঢাকা-সিলেট রুট এখনও টেন্ডার প্রক্রিয়াকরণ পর্যায়েই আছে। জয়দেবপুর-এলেঙ্গা (৭০ কিমি) রুটের কাজ চলছে গত নয় বছর ধরে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে সাসেক উদ্যোগের আওতায় এলেঙ্গা-রংপুর সড়কের প্রায় ৩৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
টেকনাফ থেকে খুলনার মোংলা পর্যন্ত নির্মিত হবে এএইচ৪১। তবে এশিয়ান হাইওয়ের মানে উন্নীত হওয়ার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ককে ছয় বা আট লেনের মহাসড়কে পরিণত করতে হবে। পরামর্শকের ওভাবে এ কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এ প্রকল্পে অর্থায়ন করতে এডিবি প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে।
একইভাবে, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়ককেও (১৩২ কিলোমিটার) এক্সপ্রেসওয়ে বা চার লেনের মহাসড়কে পরিণত করতে হবে। এর জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। প্রকল্পটি জাপানের সাথে গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট (জি২জি) বা পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় শুরু করা হতে পারে। এ বিষয়ে এখনো কোনো কাজ হয়নি।
এই নেটওয়ার্কের অধীনে কক্সবাজার-টেকনাফ রুট বর্তমানে চলমান রয়েছে। এই রুটের রাস্তা প্রশস্ত করতে হবে।
তবে হাটিকুমরুল-মোংলা রুটে কাজ শুরু হয়েছে। এশিয়ান অবকাঠামো বিনিয়োগ অর্থায়নে হাটিকুমরুল-বেনাপোল-ঝিনাইদহ (১৫৩.৫ কিলোমিটার) রুটের কাজ এখনও শুরু হয়নি।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ঝিনাইদহ-যশোর (৪৮.৫ কিলোমিটার) রুটের কাজ শুরু হলেও অগ্রগতি সামান্যই। যশোর-মোংলা রুটের (৯৮.৫কিলোমিটার) সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হলেও কাজ এখনও শুরু হয়নি।
অফিসিয়াল প্রতিবেদনে দেখা যায়, ভাঙ্গায় পদ্মা সেতুর কাছে এবং ভাটিয়াপাড়ায় এএইচ-১-এর দুটি মিসিং লিঙ্ক রয়েছে। বাকি দুই রুটের কোনো মিসিং লিঙ্ক বা নিম্নমানের অংশ নেই। তবে ওই দুটো রুটকে এএইচ মানে উন্নীত করার জন্য সংস্কার করতে হবে।
আরও কিছু উদ্যোগ
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের দৃষ্টিভঙ্গি পরিকল্পনায় বলা হয়েছে ইউএন-এসক্যাপ, সার্ক, সাসেক, বিমসটেক ও বিসিআইএম ফোরামের অধীনে বিভিন্ন আঞ্চলিক উদ্যোগে বাংলাদেশ ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়েছে এবং কৌশলগত পরিবহন রুট চিহ্নিত করেছে।
এই পরিবহন রুটগুলো বাংলাদেশকে আঞ্চলিক ও সাপ্লাই চেইনের সাথে সংযুক্ত করার এবং স্থলবেষ্টিত দেশ ও অঞ্চলগুলোকে চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে প্রবেশের সুযোগ দেবে।
২০১৫ সালে মোটরযান চুক্তি স্বাক্ষর ব্যতীত বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল উদ্যোগও (বিবিআইএন) তেমন এগোয়নি। ওই চুক্তিও ভুটানের পার্লামেন্ট প্রত্যাখ্যান করে দেয়।
২০১৩ সালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার হয়ে কলকাতা থেকে কুনমিং পর্যন্ত একটি গাড়ি মিছিল করা হয়। এটাই বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার (বিসিআইএম) অর্থনৈতিক করিডোরের একমাত্র দৃশ্যমান কার্যক্রম। বিসিআইএম চীনের নেতৃত্বাধীন বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগেরই (বিআরআই) একটি অংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন ও মতবিরোধ বাড়তে শুরু করায় এই উদ্যোগটিও স্থবির হয়ে পড়েছে।
দক্ষিণ এশিয়া উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা (সাসেক) করিডরের মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কাকে এক ছাতার নিচে আনার আশা করা হচ্ছিল। এছাড়াও এ করিডরের মাধ্যমে মিয়ানমার ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হয়ে চীন ও বিশ্ব বাজারকেও সংযুক্ত করার আশা ছিল।
এই উদ্যোগের আওতায় কিছু কাজ এখনও চলমান রয়েছে। চলান কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে জয়দেবপুর-এলেঙ্গা, এলেঙ্গা-রংপুর, রংপুর-বুড়িমারী ও রংপুর-বাংলাবন্দর সড়ক প্রকল্প। শেষ দুটো প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে, প্রথম দুটিতে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
আঞ্চলিক সংযোগ নিয়ে সরকারের কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেই
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, আঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কোনো দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেই।
আঞ্চলিক সড়ক প্রকল্পগুলো সড়ক ও জনপথ বিভাগ (আরএইচডি) বাস্তবায়ন করে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী শিশির কান্তি রউথ বলেন, একমাত্র এডিবির অর্থায়নের সাসেক সংযোগ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন সড়কের উন্নয়নের কাজ চলছে। এর বাইরে এশিয়ান হাইওয়েসহ অন্যান্য সংযোগ প্রল্প শুধু আলোচনায় মধ্যে আছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, বিশ্বের এই অঞ্চলের দেশগুলো ঐকমত্যে আসতে বা আঞ্চলিক সংযোগের গুরুত্ব বুঝতে অনেক সময় নিয়েছে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যভিত্তিক কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে পাঁচ বছরে চার লেনের সড়ক কত কিলোমিটার হবে কিংবা আঞ্চিলক সড়ক কত কিলোমিটার হবে, সেটা বলা আছে।
তিনি আরও জানান, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্পে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে কোন সড়ক কবে নির্মাণ করা হবে, তা উল্লেখ নেই।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন-আল-রশিদও স্বীকার করেছেন যে আঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নে তাদের কোনো দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেই।