গরু আসলেও ক্রেতা কম চট্টগ্রামের হাটে
কোরবানি ঈদের এক সপ্তাহ বাকি থাকলেও এখনো জমে উঠেনি চট্টগ্রাম নগরীর কোন হাট। মঙ্গলবার নগরীর স্থায়ী ও অস্থায়ী কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে আসা অধিকাংশ পশুই স্থানীয় খামারিদের। বিপরীতে দেশের অন্যান্য প্রান্তের পশুর উপস্থিতি ছিল কম। তাছাড়া অন্য বছর এই সময়ে হাটগুলোতে কিছু ক্রেতার আনাগোনা থাকলেও এবার সেটি অনেক কম।
হাটের ইজারাদাররা জানিয়েছেন, এখন কিছু কিছু আসা শুরু করলেও দু-একদিনের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রাকে করে আরও গরু আসা শুরু হবে। আর ঈদের চারদিন আগে থেকে পুরোদমে চলবে কেনাবেচা।
নগরীর বিবিরহাটে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এসেছেন একদল গরু বেপারী। তাদের একজন মো. রবিউল বলেন, "প্রতি বছর আমরা আরও আগেই চলে আসি এখানে। তবে এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে একটু দেরীতে এসেছি। আমাদের সাথে আছে ৪০টি দেশী গরু। এখানেই থাকবো আগামী এক সপ্তাহ"।
বিবিরহাট বাজারের ইজারাদার মো. ইউনুস বলেন, "আমরাও প্রস্তুতি নিচ্ছি। সরকারের স্বাস্থ্য সুরক্ষার নির্দেশনার বিষয়টি তো থাকবেই। তাছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিতে ও যানজট এড়াতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আগামী দু-তিনদিনের মধ্যেই হাট পুরোপুরি ক্রেতার জন্য প্রস্তুত হবে"।
বিবিরহাটে সকাল থেকে ক্রেতাদের তেমন কোন উপস্থিতি চোখে না পড়লেও বিকেলে কিছু ক্রেতার আনগোনা ছিলো।
নগরীর বহদ্দারহাট থেকে আসা ব্যবসায়ী আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, "এখন আসলে এসেছি পশুর দাম কেমন তা দেখতে। কিনবো আরও তিন চারদিন পর। বাজার ঘুরে মনে হচ্ছে দাম অনেক বেশি"।
নগরীর সাগরিকা গরুর বাজারের ইজারাদার মো. শাহীন বলেন, "এখনো হাট জমে উঠেনি। গরুও সেভাবে আসেনি। তবে যখন গরু সব আসবে তখন অন্তত ১০ থেকে ১২ হাজার পশু এখানে থাকবে। মূলত শেষ চারদিন চলবে বেচাকেনা। করোনা থাকলেও এবার আমরা আশা করছি বিক্রি ভালোই হবে"।
বাজারের ভেতর প্রবেশপথের ডানপাশে শাহেদ এগ্রোর গরুর খামার। সেটির সামনে সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে রাখা হয়েছে বেশ কয়েকটি গরু। মালিক জসিম উদ্দিন জানালেন, এবার বাজারে ২০ থেকে ২৫ টি গরু তুলবেন। দাম পড়বে ২ থেকে ১৪ লাখ পর্যন্ত।
তিনি বলেন, "এবার গরুর দাম আগেরবারের চেয়ে বেশি। কারণ গরুর খাবারের দাম অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। তবে আমার কিছু নিয়মিত কাস্টমার আছেন, তারা আগেভাগেই গরুর অর্ডার দিয়ে রেখেছেন। বিক্রি না হওয়া নিয়ে তাই খ্বু একটা দুশ্চিন্তা নেই"।
এদিকে করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে নগরীর হাটগুলোকে ১৭ শর্ত দিয়েছে প্রশাসন। এসব শর্ত মানতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের কয়েকটি দল মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছেন চসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেলী।
তিনি বলেন, "হাটগুলোতে তারা সব নিয়ম মেনে বেচাবিক্রি করছেন কী না তা আমরা লক্ষ্য রাখব। গত রবিবারও আমরা সিডিএ গরুর বাজারের পাশেই সাগরিকা রোডে অস্থায়ী কোরবানির পশুর বাজার উচ্ছেদ করেছি। এরকম নিয়ম ভেঙ্গে যারা বাজার করবেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে"।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রেয়াজুল হক বলেন, "মানুষ খামার থেকেও গরু কিনছে। গরু কিনে ওই খামারেই রেখে দিচ্ছে। কোরবানির আগের দিন নিয়ে আসবে। এখন যে হারে গরু বিক্রি হচ্ছে, তাতে প্রায় ৬০ শতাংশ গরু বেচা-কেনা হয়ে যাবে। বাকি ৪০ শতাংশ বেচা-কেনা হবে হাট থেকে। হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে সেজন্য ইজারাদার মাইকিং করবে। ক্রেতাদের প্রতি পরামর্শ হলো, অতিরিক্ত লোক আনার দরকার নেই। যত দ্রুত সম্ভব গরু কিনে বাজার ত্যাগ করতে হবে"।
ডা. রেয়াজুল হক জানান, নগরে ছয়টিসহ চট্টগ্রামে মোট ২০৬টি হাট বসার কথা রয়েছে। এসব হাটের জন্য ৩০টি ভেটেরিনারি চিকিৎসক টিম থাকবে। চট্টগ্রামে দিনে গড়ে ২০টির অধিক হাট বসবে না।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এস্টেট অফিসার জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, "স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পশুর হাট বসানো হয়েছে। করোনা প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেলে পশুর হাট নিয়ে বিকল্প সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য অস্থায়ী হাটের যে শর্ত রয়েছে, স্থায়ী হাটের ক্ষেত্রেও একই শর্ত। এসব শর্ত মানার জন্য ইতিমধ্যে স্থায়ী হাটের ইজারাদারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে"।