দিনভর সংঘর্ষে রণক্ষেত্র চট্টগ্রামে, নিহত দুই, আহত অর্ধশতাধিক
চট্টগ্রাম নগরীতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারি দলের অঙ্গ-সংগঠন ও পুলিশের দিনভর সংঘর্ষে অন্তত দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া পুলিশ, শিক্ষার্থী, পথচারীসহ শতাধিক আহত হয়েছেন। এরমধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য অংশ গুলিবিদ্ধ।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দিনভর নগরীর শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে বহাদ্দারহাট ও মুরাদপুর পর্যন্ত সংঘর্ষ চলার মধ্যেই সন্ধ্যায় গুলিবিদ্ধ দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আনা হলে– তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।
নিহতদের মধ্যে ইমাদ নামে পটিয়া সরকারি কলেজের একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছেন বলে জানা গেছে। আরেকজনের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি।
হতাহতের বিষয়ে রাত ৮টার দিকে টিবিএসকে নিশ্চিত করেন চমেক- এর কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. তুহিন শুভ্র দাশ। তিনি আরও বলেন, এপর্যন্ত অন্তত ৫০ জন এখানে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এদিকে সংঘর্ষ চলাকালে বিকাল পৌনে ৬টার দিকে নগরীর বহাদ্দারহাট মোড়ের পুলিশ বক্সে আগুন দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এছাড়া সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সংঘর্ষস্থলের অদূরে চাঁদগাও থানার হামলার চেষ্টা হয়।
ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে
বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) সকাল থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের শাহ আমানত সেতু (নতুন ব্রিজ) এলাকায় অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তারা সড়ক অবরোধ করলে বাধে সংঘর্ষ। শিক্ষার্থীরা শাহ আমানত সেতু থেকে বহাদ্দারহাট পর্যন্ত কালামিয়া বাজার, রাহাত্তারপুল এলাকায় সড়ক অবরোধ করলে টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে তাদের কয়েক দফা ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ।
পরে বেলা ১টার দিকে শিক্ষার্থীরা নগরীর বহাদ্দারহাট মোড়ে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে স্লোগান দিতে থাকেন।
বেলা সোয়া ২টার দিকে নগরীর বহাদ্দারহাট-কালুরঘাট সড়কের পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনে থেকে ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। এসময় দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় তারা। তখনও পুলিশও যুক্ত হয়।
পরে বহাদ্দারহাট, মোহাম্মদপুর, বাদুরতলা, চাঁদগাও ও মুরাদপুর পর্যন্ত সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে এবং ত্রিমুখী সংঘাতে রূপ নেয়। এই সংঘর্ষ সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আন্দোলনকারীরা বহাদ্দারহাট ছাড়তে শুরু করেন।
এ বিষয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অন্য আন্দোলনকারীরা টিবিএস প্রতিবেদককে জানান, আওয়ামী লীগের হামলার কারণে সংঘাত বড় রূপ নেয়। পুলিশের ভূমিকাও বিতর্কিত ছিল।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (সিএমপি) সাইফুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "পরিস্থিতি দিনের বেলায় ভালোই ছিল। বিকেলে ঝামেলা বাড়ে। বহাদ্দারহাট পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। চাঁদগাও থানায় প্রধান ফটকে হামলা করা হয়। তবে পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একজন ডেপুটি কমিশনারসহ ৮-১০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারীরা প্রচুর ঢিল ছোড়ে।"
অস্ত্রধারীদের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সিএমপি কমিশনার বলেন, "আমরাও শুনেছি অস্ত্রধারীরা ছিল। এখনও তাদের বিষয়ে তথ্য পাইনি। তথ্য পেলে অবশ্যই এবিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।