চট্টগ্রামে করোনা শনাক্ত শিশুদের শতভাগ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত
চট্টগ্রামে করোনা শনাক্ত হওয়া শতভাগ শিশুর দেহে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। জুন থেকে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আক্রান্ত শিশুদের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
শনিবার জার্মানি থেকে প্রকাশিত ভাইরাসের আন্তর্জাতিক তথ্যভাণ্ডার সংস্থা গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটাতে (জিআইএসএআইডি) এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
গবেষণার নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী ও ডা. আব্দুর রব মাসুম এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চিকিৎসক ও অধ্যাপক ডা. সঞ্জয় কান্তি বিশ্বাস এবং ডা. নাহিদ সুলতানা। সার্বিক পরিকল্পনায় ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ডা. আদনান মান্নান।
গবেষক দলে আরও ছিলেন- চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. মিনহাজুল হক, ডা. রাজদীপ বিশ্বাস ও ডা. একরাম হোসেন এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ডা. ফাহিম হাসান রেজা। জিনোম সিকুয়েন্সিং এর তত্ত্বাবধানে ছিলো আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) ভাইরোলজি বিভাগের গবেষক দল, যার নেতৃত্বে ছিলেন বিজ্ঞানী ড. মুস্তাফিজুর রহমান এবং ড. মোহাম্মদ এনায়েত হোসেন।
অধ্যাপক ডা. আদনান মান্নান বলেন, "গত জুন থেকে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আসা শিশুদের মধ্যে দৈবচয়নের ভিত্তিতে নির্বাচিত ১২ শিশুর নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়। গবেষণায় অন্তর্ভুক্তরা নবজাতক থেকে ১৬ বছর বয়সী (স্কুলগামী) করোনা আক্রান্ত শিশু। আক্রান্ত শিশুদের ৮০ ভাগেরই বয়স ১০ বছরের নিচে। সর্বনিম্ন আট মাস বয়সের শিশুর মাঝে ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট চিহ্নিত হয়েছে।"
এই গবেষক দলের অন্য গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, প্রাপ্ত বয়স্ক করোনা রোগীদের মধ্যে ৮০ ভাগ রোগী পুরুষ হলেও শিশুদের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। মেয়ে শিশুরাও সমানভাবে এই ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত ও আক্রান্ত হচ্ছে। ৫০ ভাগ ছেলে শিশু এবং ৫০ ভাগ মেয়ে শিশুর মধ্যে এই ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি দেখা গেছে। ৯৫ ভাগ শিশুর মধ্যেই জ্বরের লক্ষণ এবং ৭০ ভাগ শিশুর সর্দি ও কাশি ছিলো। একজন শিশু ছিলো পুরোপুরি উপসর্গহীন।
ডা. হামিদুল্লাহ মেহেদী বলেন, "আমাদের গত চার মাসের পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে চট্টগ্রামে আলফা ও বিটা ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপ ছিল মে মাস পর্যন্ত। কিন্তু জুন থেকে ৯০ ভাগ রোগীর মাঝেই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের পাওয়া গেছে। এই পরিবর্তনের সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হচ্ছে শিশুদের মাঝে সংক্রমণ ভয়ংকরভাবে বেড়ে যাওয়া।"