চট্টগ্রাম রোড-হাতিরঝিল হাইওয়ে নির্মাণ হবে পিপিপি ভিত্তিতে
রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে বনশ্রী ও ডেমরা হয়ে চট্টগ্রাম রোড পর্যন্ত সড়কটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে চার লেনে উন্নীত করার কাজ পাচ্ছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসিএল) ও এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশন (সিআরবিসি)।
এলিভেটেড অ্যান্ড অ্যাট গ্রেড সমন্বয়ে ১৩.৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে এ দুই সংস্থার কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে ২০৯৪ কোটি টাকার চুক্তি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
প্রস্তাবিত সড়কে ডেমরা থেকে সুলতানা কামাল সেতু পার হয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নিকটবর্তী তারাবো পর্যন্ত একটি এক্সটেনশন নির্মাণ করা হবে।
এই সড়কের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক জ্যাম এড়িয়ে রাজধানীর উত্তর ও পূর্ব পাশের লোকজন সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ ও দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে যাতায়াত করতে পারবেন; সম্ভব হবে পণ্য পরিবহণ।
এক্সেস কন্ট্রোল এ সড়কটি ২১ বছর ধরে রক্ষণাবেক্ষণ করবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এ সময় পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি টোল আদায় করে সরকারের কোষাগারে জমা দেবে। আর বিনিয়োগের অর্থ সরকারের কাছ থেকে পাবে ৪২ কিস্তিতে।
সরকারের পিপিপি অফিস সূত্র জানায়, কানাডাভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের ফিজিবিলিটি স্টাডিতে সড়কটি নির্মাণে ব্যয় প্রাক্বলন করা হয়েছে ২৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বিনিয়োগকারী নির্বাচনে রিকুয়েস্ট ফর কোয়ালিফিকেশন (আরএফকিউ) নোটিশ প্রকাশের পর ৭টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করলে সংক্ষিপ্ত তালিকায় উঠে আসে চারটি। কারিগরি, বাণিজ্যিক ও আর্থিক প্রস্তাব মানদণ্ডে সর্বোচ্চ স্কোর অজর্ন করে সিসিসিসিএল ও সিআরবিসির কনসোর্টিয়াম।
এ সড়ক পিপিপি ভিত্তিতে নির্মাণে ২০১৬ সালের শুরুতে নীতিগত অনুমোদন দেয় ক্যাবিনেট কমিটি অন ইকোনোমিক অ্যাফেয়ারস। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটিতে উপস্থাপন করা হলে গত বছরের শেষের দিকে আরও কিছু তথ্য যোগ করতে প্রস্তাবটি ফেরত পাঠানো হয়।
বাজার ঝুঁকি সরকারের
পিপিপি প্রস্তাবটি প্রক্রিয়াকরণে 'ট্রাঞ্জেকশন অ্যাডভাইজার' এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্মাণ শেষে উন্মুক্ত করা হলে ২০২৫ সাল নাগাদ প্রতিদিন প্রায় ৩২ হাজার যানবাহন সড়কটি ব্যবহার করবে। ২০৩৫ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ৫৫ হাজারে ও ২০৫০ সাল নাগাদ ৮৫ হাজারে উঠবে।
তবে প্রকৃত পক্ষে কী পরিমাণ যানবাহন সড়কটি ব্যবহার করবে, টোলের পরিমাণই বা কত হবে, এ বিষয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে হচ্ছে না বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে।
চুক্তির আওতায় প্রতি ছয় মাস অন্তর কনসোর্টিয়ামকে ১০৭.৭০ কোটি টাকা করে পরিশোধ করবে সরকার। ২১ বছরে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান পাবে ৪৫২৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে চীনের বিনিয়োগকারীদের লাভ থাকবে ২৪২৯ কোটি টাকা।
সীমিত ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন ব্যয়
সড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে প্রয়োজনীয় ভূমির অন্তত ৯০ শতাংশের মালিকানা সরকারের রয়েছে বলে জানিয়েছে এডিবি। এর ফলে পূনর্বাসন বাবদ অর্থ ব্যয়ও হবে কম।
অবশ্য এর আগেই ভূমি অধিগ্রহণ ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির কাজ শেষ করতে ১২০৯.৬০ কোটি টাকা ব্যয়ের পৃথক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে সড়ক নির্মাণে প্রায় নিষ্কন্টক জমি পাবে চীনের কনসোর্টিয়াম।
যা বলছে এডিবি
অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে দেশে পরিবহণের চাহিদা প্রতি বছর ৮-১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। এসব যানবাহনের ৮০ শতাংশই ঢাকাকেন্দ্রিক।
দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে মানুষ ও পণ্যবাহী গাড়িগুলো একটি পথে রাজধানীতে প্রবেশ করে। এর ফলে যানজটে বিপুল পরিমাণ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। এ অবস্থায় দক্ষিণ দিক থেকে রাজধানীতে প্রবেশ পথ বাড়ানো দরকার।
এডিবি আরও বলেছে, প্রস্তাবিত সড়কটি ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর মাধ্যমে রাজধানীর উত্তর ও পূর্ব পাশের যানবাহন ঢাকার যানজট এড়িয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উঠতে পারবে।
ছয় বছর আগে নির্মাণ হয়েছে বিদ্যমান সড়ক
ডেমরা থেকে বনশ্রী হয়ে হাতিরঝিল পর্যন্ত বিদ্যমান ১০ কিলোমিটার দুই লেনের সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে ২০১৫ সালে। ২০০৩ সালে শুরু করা সড়কটির কাজ শেষ করতে ব্যয় হয় ১০৬.৫৪ কোটি টাকা।
যা বলছে পিপিপি অফিস
পিপিপিএ অফিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও সরকারের সচিব সুলতানা আফরোজ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'দেশের উত্তর অঞ্চলের জেলাগুলো থেকে দক্ষিণ দিকের জেলাগুলোতে পণ্য পরিবহণে রাজধানী ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম একটি বড় বাধা। ঢাকার যানজটের কারণে বিপুল পরিমাণে কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। এ জটের কারণে পরিবহণ ব্যয়ও বেড়ে যায়। বিষয়টি বিবেচনায় প্রস্তাবিত সড়কটির উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।'
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক পর্যায়ে পিপিপি'র বেস্ট প্র্যাকটিস মেনে প্রকল্পটি তৈরি করা হয়েছে। এ প্রকল্পে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মার্কেট ঝুঁকি, তথা যানবাহন পরিবহণ ও টোল আদায়ের ঝুঁকি না নিলেও সড়কটি নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ, মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রার বিনিময় হার সংক্রান্ত ঝুঁকি নিচ্ছে।
তা ছাড়া রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও কোম্পানির হাতে থাকায় নির্মাণ কাজ ভালো হবে বলেও তিনি মনে করেন।