বুড়িগঙ্গার তীরের ২৭ প্রতিষ্ঠান বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশ
পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকায় রাজধানীর সদরঘাট থেকে শ্যামপুর পর্যন্ত এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরের উত্তর পাড়ে গড়ে ওঠা ২৭টি প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
পরিবেশ অধিদপ্তরকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতি এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
এদিকে ওয়াসার পক্ষ থেকে লিখিতভাবে হাইকোর্টকে জানানো হয়েছে, বুড়িগঙ্গায় ওয়াসার কোনো সুয়ারেজ লাইন নেই। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পৃথক এক প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, ওয়াসার অনেক সুয়ারেজ লাইন রয়েছে।
এ অবস্থায় আদালতের আদেশ অমান্য করা এবং মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে শোকজ করেছেন হাইকোর্ট। তাকে ১৫ দিনের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ’র হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার (১৭ নভেম্বর) এ আদেশ দেন। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা এক রিট আবেদনে এ আদেশ দেওয়া হয়।
রিট আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার মনজিল মোরসেদ। বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষে আইনজীবী ছিলেন সৈয়দ মফিজুর রহমান। ওয়াসার পক্ষে লিখিত জবাব দাখিল করেন ব্যারিস্টার এ এম মাছুম।
যে ২৭টি প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা হলো- মেডিকেয়ার ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড হাসপাতাল ও রিভারসাইট হাসপাতাল লিমিটেড, চাঁদনি টেক্সটাইল মিলস, কদমতলী ডায়িং অ্যান্ড প্রিন্টিং, টিপিআই টেক্সটাইল প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি, নুরানী টেক্সটাইল মিলস, এ মজিদ অ্যান্ড সন্স ডায়িং, খাদিজা টেক্সটাইল প্রসেসিং অ্যান্ড প্রিন্টিং, অগ্রণী ডায়িং অ্যান্ড প্রিন্টিং, সুবর্ণা ডায়িং অ্যান্ড প্রিন্টিং, মাসুদ টেক্সটাইল, সোনিয়া ডায়িং অ্যান্ড প্রিন্টিং, জেদ্দা ডায়িং, সেবা টেক্সটাইল প্রসেসিং লিমিটেড, মলিনা টেক্সটাইল লিমিটেড, শামস ডায়িং, এম জে ডায়িং, রাফসান ডায়িং, আজিজ মেটাল, আলিফ মেটাল, এনএক্স করপোরেশন, অগ্রণী মল্ডিং, মতলব আয়রন, পারফেক্ট ওয়্যার, এসএস ইলেক্ট্রপ্লেটিং ওয়ার্কস, খান রেডিমিক্স ও মোহাম্মদীয়া পাইপ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, কেরানীগঞ্জের চর রঘুনাথপুর, কামরাঙ্গীরচর, জিনজিরা, সদরঘাট, ওয়াইজঘাট, বাদামতলী, বাবুবাজার, মিটফোর্ড, শ্যামপুর, কদমতলী, ফতুল্লা, ধোলাইখাল, মিল ব্যারাক, ফরিদাবাদ, গোসাইবাড়ি, মিল ব্যারাক মাজার, লালবাগের সোয়ারীঘাট ও নলখোলা এলাকায় ৫০টি স্থান দিয়ে ওয়াসার সুয়ারেজ লাইনের মাধ্যমে দূষিত বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় ফেলা হচ্ছে।
কিন্তু ওয়াসার আইনজীবীর স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াসার সুয়ারেজ লাইন দিয়ে বুড়িগঙ্গার কোথাও বর্জ্য ফেলা হয় না।
এই দুই প্রতিবেদন দেখার পর ওয়াসার এমডিকে শোকজ করেন হাইকোর্ট।
এইচআরপিবির করা এক রিট মামলায় হাইকোর্ট ২০১১ সালে এক রায়ে বুড়িগঙ্গা নদীর তীর থেকে সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দেন। এছাড়া নদীর পানি যাতে দুষিত না হয় সেজন্য সব ধরণের বর্জ্য ফেলা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। এই রায়ের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু এখনও কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে তরল বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে, যা নদীর পানিকে দূষিত করছে। সেটি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষ থেকে আদালতের নজরে আনা হয়। হাইকোর্ট গত ১৩ অক্টোবর এক আদেশে পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে প্রতিবেদন চান। এ অবস্থায় পরিবেশ অধিদপ্তর প্রতিবেদন দাখিল করে।