ভারী বৃষ্টিপাতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দুর্যোগ পরিস্থিতি, পানিবন্দী লাখ লাখ মানুষ
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দেখা দিয়েছে দুর্যোগ পরিস্থিতি। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা জেলার বেশ কিছু অঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়াসহ পাহাড় ধসের ঘটনায় মৃত্যুও ঘটছে।
কক্সবাজার জুড়ে প্লাবণে পানিবন্দী লাখো মানুষ, ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো ঘর-বাড়ি:
কক্সবাজারে গত ৫দিন ধরে চলছে টানা বর্ষণ। ভারী বর্ষণে জেলার তিন নদী চকরিয়ার মাতামুহুরী, ঈদগাঁওর ফুলেশ্বরী ও রামুর বাঁকখালীতে পাহাড়ি ঢল নেমেছে। ঢল ও বৃষ্টির পানিতে একাকার হয়ে প্লাবিত হচ্ছে জেলার ৯ উপজেলার উপকুল-নদীরতীর ও সমতল সমেত অর্ধশত ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক গ্রাম।
থেমে থেমে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পানির পরিমাণ কেবল বাড়ছে। প্লাবণের শিকার হচ্ছে নিত্যনতুন এলাকা ও ঘরবাড়ি। টানা কয়েকদিন বাড়ির ভেতর পানি জমে থাকায় হাজার হাজার কাঁচা ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫টি পৃথক পাহাড় ধসে ১৩ জন এবং বানের জলে ভেসে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৮ জন। বুধবার পর্যন্ত ২০ জন মারা যান আর আজ বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) সকালে চকরিয়া পৌরসভার হালকাকারা এলাকায় পানিতে ডুবে মারুফ (২) নামে এক শিশু মারা যায়।
পানিবন্দী পরিবারগুলো তিনদিন ধরে চুলা জ্বালাতে পারছে না। নির্ঘুম রাত কাটানোর পাশাপাশি ক্ষুধার জ্বালায় অতিষ্ট সময় পার করছেন ভুক্তভোগীরা।
প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দেওয়া খাবারে ক্ষুধা কিছুটা নিবারণ হলেও- তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতূল।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, বন্যা ও পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ২৯ জুলাই ৫০ মেট্রিক টন চাউল, ১০ লাখ টাকা ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দিয়েছে ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এর আগে জেলা ত্রাণ অফিস ১৫০ মেট্রিক টন চাউল, ৫ লাখ টাকা বিতরণ করেছে।
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত প্রায় ১০ হাজার মানুষকে নেওয়া হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ে। সেখানে দেয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় খাবার। জেলা প্রশাসনের সাথে কাজ করছে ৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সবকিছু তদারকে বিভাগীয় কমিশনার বুধবার থেকে কক্সবাজার অবস্থান করছেন।
বাগেরহাটে পানিবন্দী ৫০ হাজার পরিবার, ভেসে গেছে দুই সহস্রাধিক মাছের ঘের:
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে অবিরাম বৃষ্টিতে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন উপকূলীয় এলাকার অর্ধলক্ষ পরিবার। ভেসে গেছে দুই সহস্রাধিক মৎস্য ঘের। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বর্ষাকালীন সবজির।
রাতের ঝড়ো বাতাসে উপড়ে পড়েছে কয়েক হাজার গাছ। কাঁচা-পাকা সড়কও ডুবেছে বৃষ্টির পানিতে। গত ২৪ ঘন্টায় শরণখোলা উপজেলায় সর্বোচ্চ ২৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। জেলায় গড় বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ৮৬ দশমিক ২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।
বৃহস্পতিকবার (২৯ জুলাই) সকালে বাগেরহাট সদর উপজেলার খানজাহান পল্লী গোবরদিয়া, কাড়াপাড়া, খানপুর, নাগেরবাজার, সাহাপাড়া, হাড়িখালি-মাঝিডাঙ্গা আশ্রয়ন প্রকল্পসহ বাগেরহাট শহরের বেশ কয়েটি সড়কের উপর এক থেকে দেড় ফুট পানি দেখা যায়।
উপযুক্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানিতেই এই অবস্থা বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।
অন্যদিকে, শরণখোলার খুড়িয়াখালী, সাউথখালী, কচুয়ার নরেন্দ্রপুর, চন্দ্রপাড়া, রাড়িপাড়া, পদ্মনগর, ভান্ডারকোলা, মোরেলগঞ্জ পৌরসভা এলাকা, শানকিভাঙ্গা, চিংড়াখালীসহ অসংখ্য এলাকা এখন পানিতে নিমজ্জিত। এসব এলাকার মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। রান্না-খাওয়াও বন্ধ রয়েছে পরিবারগুলোর। এছাড়া ভেসে যাওয়া ঘেরের মাছ বাঁচাতে বৃষ্টিতে ভিজেই শেষ চেষ্টা চালাচ্ছেন মাছ চাষীরা।
রামপাল উপজেলার পেড়িখালি এলাকার মোতাহার হোসেন বলেন, দুই দিনের বৃষ্টিতে এলাকার মানুষের ঘের-পুকুর সব তলিয়ে গেছে। নেট ও মাটি দিয়েও রাখা যায়নি। বন্যায়ও এত পানি দেখা যায় না।
বাইনতলা এলাকার মোহসিন বলেন, বৃষ্টির পানিতে আমাদের বাড়ি ঘরে পানি উঠে গেছে। আমার পাঁচ বিঘা ঘেরের সব মাছ বের হয়ে গেছে। সবজিরও ক্ষতি হয়েছে ব্যাপকভাবে।
রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কবির হোসেন বলেন, বুধবার বিকেলে বৃষ্টির মধ্যে আকস্মিক ঝড় হয়। এতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার দশটি কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন প্রজাতির অর্ধশতাধিক গাছ উপড়ে পড়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছি।
বান্দরবানে নিম্নাঞ্চল এলাকা প্লাবিত, পাহাড় ধস:
কয়েক দিন টানা বৃষ্টির কারণে বান্দরবানে নিম্নাঞ্চল এলাকা ডুবে গেছে। ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে জেলা সদর এবং লামা পৌর এলাকা নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক'শ পরিবার। এছাড়া আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার কিছু নিম্নাঞ্চল ডুবে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জেলা শহরে নিম্নাঞ্চল বালাঘাটা, পুল পাড়া, কাশেম পাড়া, মেম্বার পাড়া, আর্মি পাড়া, হাফেজ ঘোনা এবং নদীর তীরবর্তী এলাকায় অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে পানি। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে স্থানীয়রা।
বালাঘাটার এলাকার বাসিন্দা কামরুন নাহার ও আল আমিন জানান, ঘরে পানি উঠে অনেক জিনিস নষ্ট হয়েছে। হালকা কিছু মালামাল বের করতে পেরেছেন তারা। ঘরে পানি উঠায় বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে শিশু ও বয়স্করা।
সাঙ্গু নদীর তীরবর্তী এলাকা উজানী পাড়ার বাসিন্দা সামাচিং এবং হ্লামাউ মারমা জানান, উজান থেকে আসা ঢলের পানিতে ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ডুবে যাওয়ায় পাশে স্বজনের বাসায় আশ্রয় নিয়েছি। বৃষ্টি কমলেও উজানের ঢল আসা কমছে না। বাধ্য হয়েি অন্যের বাসায় আশ্রয় নিয়ে থাকতে হবে।
এদিকে টানা বর্ষণের কারণে নিজের সরকারি বাসভবনসহ লামা পৌর এলাকার সরকারি বিভিন্ন অফিস, দোকান এবং বসতি ঘর ডুবে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজা রশীদ।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, উপজেলা পরিষদ ভবন, থানা ভবন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, প্রাণী সম্পদ অফিস, সমাজসেবা কার্যালয় এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ গুরুত্বপূর্ণ সব অফিসগুলোর নিচতলা পর্যন্ত পানি উঠেছে।
চট্টগ্রামে ৪৮ ঘন্টায় ২৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি, পাহাড় ধস-ডুবেছে নিম্নাঞ্চল:
টানা দুই দিনের অতি ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম নগরের অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরের লালখান বাজার এলাকায় ঘটেছে পাহাড় ধসের ঘটনা। আগামী ২৪ ঘন্টার পূর্ভাবাসেও ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এ কারণে চট্টগ্রাম মহানগর ও পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ঝুঁকি এড়াতে ৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছে জেলা প্রশাসন।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারি উজ্জল কান্তি পাল টিবিএস'কে বলেন, "বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় ১৪০ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগের ২৪ ঘন্টায় রেকর্ড করা হয় ১২৯ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টি। আগামী দুই দিন এ ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। একারণে পাহাড় ধসের আশংকা রয়েছে।"
তিনি বলেন, "সাধারণত ২৪ ঘন্টায় ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতকে মাঝারি বৃষ্টিপাত বলা হয়। কিন্তু, গত তিনদিন ধরে একটানা ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। মূলত সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সাগরে লঘুচাপের সৃষ্টি হওয়ায় এমন বৃষ্টি হচ্ছে। তবে এটি নিম্নচাপে রুপ নেবে কিনা- তা এখনই বলা যাচ্ছে না।"
লালখান বাজারের বাইতুল আমান আবাসিক এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে হটাৎ পাহাড়ের একটি বড় অংশ ভেঙ্গে পরে, তবে এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। দুর্ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স।
এদিকে দিনভর টানা বৃষ্টিতে নগরের মুরাদপুর, ষোলশহর, চকবাজার, কাপাসগোলা, বহদ্দারহাট, কাতালগঞ্জ, চাক্তাই, বাকলিয়া, ডিসি রোড, রহমতগঞ্জ, হালিশহর, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, চান্দগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়।
আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার কর বিভাগের কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, "সকালে জোয়ারের পানি আসার আগেই অফিসে গিয়েছি। কিন্তু বিকাল ৪টার দিকে ফেরার সময় বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানিতে পুরো সিডিএ আবাসিক এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। এ কারণে কাকভেজা হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আবাসিক ভবনের নিচতলায় পানি উঠে গেছে।"
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ওমর ফারুক বলেন, প্রবল বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় নগরের বাটালিহিল, মতিঝর্ণা, আকবরশাহ, হিল-১, হিল-২, লিংক রোড পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হচ্ছে। এই লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর নেতৃত্বে মহানগরের ৬ জন এসিল্যান্ড, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করে যাচ্ছে।"
নগরের চারটি আশ্রয়কেন্দ্র গুলো হলো- আল হেরা মাদ্রাসা, রউফাবাদ রশিদিয়া মাদ্রাসা,ফিরোজ শাহ প্রাথমিক বিদ্যাল, লালখান বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, "আশ্রয়কেন্দ্রে আনা পরিবারগুলোর মধ্যে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মাইকিং চলমান রয়েছে। পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনার কাজও অব্যাহত আছে।
বৃষ্টির পানিতে ভাসছে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল:
বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চলও। সাতক্ষীরা সদর, তালা, কলারোয়া, আশাশুনি, দেবহাটা, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও সদরের বিভিন্ন এলাকা প্লাাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এসব মানুষ। ভেসে গেছে জমির ফসল, আমন বীজতলা, মাছের ঘের ও পুকুর।
সাতক্ষীরার সদর উপজেলার ধুলিহর, ফিংড়ি, ব্রহ্মরাজপুর, লাবসা, বল্লী, ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের অধিকাংশ বিলগুলোতে সদ্য রোপা আমন ও বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। শতাধিক মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া নিম্ন অঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে।
সাতক্ষীরা পৌর বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম জানান, গত দুইদিনের টানা মৌসুমী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে কামালনগর, ইটাগাছা, খড়িবিলা, বদ্যিপুর কলোনী, শহরতলীর বকচরা, কাশেমপুর, সরকারপাড়া, আমতলার মোড়সহ বিভিন্ন এলাকা। পানি অপসারনের কোন পথ না থাকায় বৃষ্টির পানি বাড়িঘরে উঠতে শুরু করেছে। সাতক্ষীরা শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রানসায়ের খাল দিয়ে পানি অপসারিত হচ্ছে না।
এদিকে, গদাইবিল, ছাগলার বিল, শ্যাল্যের বিল, বিনেরপোতার বিল, রাজনগরের বিল, মাছখোলার বিল সহ কমপক্ষে ১০টি বিলে পানি থই থই করছে। এসব বিলের মাছের ঘের ভেসে গেছে। বেতনা নদী তীরবর্তী এই বিলগুলির পানি নদীতে নিষ্কাশিত হতে পারছে না।
অতিবৃষ্টিতে গ্রামাঞ্চলের সব পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া কাচা ঘরবাড়ি রয়েছে ঝুকির মধ্যে। দিনভর টানা বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ।
এছাড়া তালার ইসলামকাটি, কুমিরা, পাটকেলঘাটা, মাগুরা, আশাশুনির প্রতাপনগর, আনুলিয়া, খাজরা, বড়দল, শ্রীউলা, আশাশুনি সদর, দরগাহপুর, কাদাকাটিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল পানিতে থৈ থৈ করছে। শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, কাশিমাড়ি, বুড়িগোয়ালিনী, কৈখালি, রমজাননগরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা, মথুরেশপুর, ভাড়াশিমলাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মাছের ঘের ও পুকুর পানিতে ডুবে গেছে বলে খবর দিয়েছেন স্থানীয়রা।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে মঙ্গলবার বিকেল থেকে সাতক্ষীরায় ৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত এই ৬ ঘন্টায় ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আগামী কয়েকদিন এভাবে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, ভারি বর্ষণে জেলার নিম্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে সদ্য রোপা আমন, আউশ বীজ তলার ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের জরিপ করে ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপন করে তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যদি ভারি বর্ষণ থেমে যায়, তাহলে রোপা আমন ও বীজতলার তেমন ক্ষতি হবে না। তারপরও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে।
- প্রতিবেদনটি স্থানীয় প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদের ভিত্তিতে প্রস্তুতকৃত