‘দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা চলছে’
দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলার প্রতিবাদে আজ রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন সনাতন ধর্মাবলম্বী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।
সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকার প্রধান অবরোধ করে মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা।
অবরোধের কারণে শাহবাগ, পল্টন, সায়েন্স ল্যাব, এলিফ্যান্ট রোড, বাংলামোটর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
বিক্ষোভকারীরা সংখ্যালঘুদের জন্য একটি পৃথক মন্ত্রণালয়ের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন এবং হামলা কেন চালানো হলো, তার জবাব চাইতে থাকেন প্রশাসনের কাছে।
তবে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে দুপুর ২টার দিকে তারা বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, একটি মহল দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
তাদের দাবি অচিরেই পূরণ না হলে ফের রাস্তায় নামার ঘোষণা দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষোভকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলা তদন্ত করা
- হামলার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা
- দেশের সংখ্যালঘুদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় ও কমিশন গঠন করা
- লুটপাটের শিকার হওয়া ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও পরিবারগুলোকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া
- হামলায় আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা
- অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির, বাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনা পুনর্নির্মাণ করা
- সাম্প্রদায়িক হামলার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে নতুন আইন পাস করা
- দেশের জিডিপির ১৫ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য বরাদ্দ করা
- হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সংস্কার করা
- ১৩ অক্টোবরের ঘটনার পর থেকে গ্রেপ্তারকৃত সব হিন্দুকে মুক্তি ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া
- সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার রোধে ব্যবস্থা নেওয়া
- উগ্রবাদী ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা থেকে বিরত রাখা
এর আগে ১৩ অক্টোবর পবিত্র কোরআনের অবমাননার অভিযোগে কুমিল্লায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
সেই ঘটনার জেরে দেশের অন্তত ১০টি জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজামণ্ডপ, মন্দির, বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়।
বেশ কয়েকটি জেলায় মন্দির ও পূজা উদযাপন অনুষ্ঠানে হামলা চালানো হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
রোবববার পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার অভিযোগে বেশ কয়েকটি জেলায় অন্তত ৫০ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করে প্রায় ৪৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে বুধবার কুমিল্লায় 'পবিত্র কোরআন অবমাননা'র ফলে যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, তার পেছনে কোনো নির্দিষ্ট ধর্মীয় সংগঠন বা রাজনৈতিক দল থাকার কথা উল্লেখ নেই মামলাগুলোতে।
বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন এসব হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। রোববার পৃথক বিবৃতিতে তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানায়।
এদিকে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রাম রাজনীতি ও নির্বাচনে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক বিষয় ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞাসহ ছয় দফা দাবি পেশ করেছে।