‘৫০ কোটি টাকার ক্ষতি’ মাথায় নিয়ে ফের উৎপাদনে যশোরের ৩৪ হ্যাচারি
করোনাভাইরাসের প্রভাবের কারণে প্রায় এক মাস বন্ধ থাকার পর আবারও উৎপাদন শুরু করেছে যশোরের ৩৪টি মৎস্য হ্যাচারি।
ভরা মৌসুমে উৎপাদনে যেতে না পারায় রেণুপোনা খাতের উদ্যোক্তাদের প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান হ্যাচারি মালিকরা।
গত ২৮ মার্চ থেকে উৎপাদন বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। এবার রেণুপোনা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দেড় লাখ কেজি। মার্চ মাস থেকে আগষ্ট মাস পর্যন্ত রেণুপোনা উৎপাদনের ভরা মৌসুম। দেশের মোট চাহিদার ৬০ শতাংশ রেণু পোনা যশোর থেকে সরবরাহ করা হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
চাঁচড়া মৎস্যপল্লীর ৩৪টি হ্যাচারিতে গত বছর প্রায় দু'লাখ ৬০ হাজার কেজি রেণু উৎপন্ন হয়।
রেণুপোণা উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে শ্রমিক সংকট, পোনার দাম কমে যাওয়া এবং বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাবার কারণে হ্যাচারিগুলো বন্ধ করতে তারা বাধ্য হয়েছিলেন।
যশোর জেলা মৎস্য হ্যাচারি মালিক সমিতির সভাপতি ফিরোজ খান জানান, যশোরে গতবছর আমরা দুই লাখ কেজি রেণুপোনা উৎপাদন করেছিলাম। এ বছর অর্ধেকে নেমে এসেছে লক্ষ্যমাত্রা। এতে হ্যাচারি মালিকদের ৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, উৎপাদনের গেলেও আমরা বিদ্যুৎ বিল ও পোনার হরমোন ইনজেকশন পিজি নিয়ে উদ্বিগ্ন। কেননা আগে আমরা বিদ্যুৎ বিল দিতাম কৃষিতে। এখন সেখানে দিতে হচ্ছে শিল্পরেটে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। এ ছাড়া মাছের হরমোন ইনজেকশন পিজি আগে প্রতিপিস ছিল আট টাকা, সেখানে এখন কিনতে হচ্ছে ৪০ টাকায়।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, রেণু পোনা উৎপাদনে যশোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জেলায় ৩৪টি হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে কার্প জাতীয় রেণু পোনা উৎপাদন ৬৪ দশমিক ৮৬ টন। জেলায় রেণু পোনার চাহিদা ১৫ দশমিক ২৩ টন। উদ্ধৃত ৪৯ দশমিক ৬৩ টন দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।
সূত্র আরও জানায়, পাঙ্গাশ রেণু উৎপাদন তিন দশমিক ৬২ টন এবং শিং মাগুর, পাবদা, গুলসা রেণু উৎপাদন শূন্য দশমিক ৮৫ মেট্রিক টন।
যশোরে মোট ৫১টি বাওড় রয়েছে। যার আয়তন ১৮ হাজার ৮৪ হেক্টর। মূলত এসব বাওড় থেকে মাছ উৎপাদন হচ্ছে। এখানকার উৎপাদিত মাছ দেশের অর্ধেক চাহিদা মিটিয়ে থাকে বলে জানায় জেলা মৎস অফিস।
যশোরের হ্যাচারিগুলো রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প, গ্রাসকার্প, বিগহেড, থাইসরপুটি, মিরর কার্প, জাপানি, চিতল, আইড়, তেলাপিয়া, মনোসেক্স তেলাপিয়া, শিং, কৈ, থাই কৈ, পাঙ্গাস প্রভৃতি মাছের পোনা উৎপাদন করে থাকে। হ্যাচারির পাশাপাশি যশোরে ৫/৬ হাজার নার্সারি রয়েছে। জেলার দুই লাখ লোক মাছ উৎপাদন, চাষ এবং এই সংশ্লিষ্ট পেশার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
জেলা হ্যাচারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান গোলদার জানান, সবসময় আমাদের প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে রেণুপোনা উৎপাদন করতে হয়। প্রচন্ড গরমে ব্যাহত হয় রেণুপোনা উৎপাদন। করোনার প্রভাবে ভরা মৌসুমে উৎপাদন করতে পারলাম না। এতে এ খাতের সঙ্গে জড়িত ৫০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
একই এলাকার মাছ চাষী অহিদুল্লাহ লুলু বলেন, করোনা প্রভাবে রেনু পোনা উৎপাদন বন্ধ থাকার পর সেভাবে উৎপাদন হবে না। কেননা সামনে চাহিদা কমে যাবে।
এ বিষয়ে যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাব আমাদের মৎস্য সেক্টরে পড়েছে। দীর্ঘদিন রেণুপোনা উৎপাদন বন্ধ থাকলে দেশের বাজারে এর প্রভাব পড়বে। এজন্য আমরা সামাজিক দূরত্ব মেনে সীমিত আকারে রেণুপোণা উৎপাদনের জন্য হ্যাচারি মালিকদের বলেছি। তারা উৎপাদন শুরু করেছে।