সীতাকুণ্ড বিস্ফোরণ: তদন্ত কমিটি মালিকপক্ষকে দায়ী করলেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ
সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় গঠিত ছয়টি তদন্ত কমিটির দুটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। দুই প্রতিবেদনেই ডিপো কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি ডিপো মালিকের আরেক প্রতিষ্ঠান আল রাজী কেমিক্যালকে এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়েছে। এ ঘটনায় ৫১ জনের প্রাণহানি হলেও মালিকপক্ষকে বাদ দিয়ে একটি মামলা দায়ের করা ছাড়া দৃশ্যত কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমরা এখনো তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাইনি, পেলে ব্যবস্থা নেব।'
এদিকে ডিপোর মালিকপক্ষের অনেকেই ইতোমধ্যে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ক্ষত শুকোনোর আগেই আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর এমন দায়হীন আচরণকে পুঁজি করে স্মার্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিএম ডিপোর ম্যানেজিং পার্টনার মুজিবুর রহমান হজ পালনের জন্য গেছেন মক্কায়। এছাড়া স্মার্ট গ্রুপের আরেক পরিচালক তারেকুর রহমান সস্ত্রীক বেড়াতে গেছেন তাজিকিস্তানে। ১ জুলাই তারা দেশ ছাড়েন।
ডিপো মালিকদের বিদেশ ভ্রমণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান।
বিএম ডিপো ও আল রাজী কেমিক্যাল দু্টোই স্মার্ট গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে, আল রাজী কেমিক্যালের অনিয়ম এবং বিএম কন্টেইনার ডিপোর অব্যবস্থাপনার কারণেই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্তে মালিকপক্ষসহ তদারকি সংস্থাগুলোর গাফিলতির প্রমাণও পেয়েছে কমিটি।
বুধবার চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিনের কাছে ২৫৯ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সব ধরনের ল্যাব পরীক্ষা করে কমিটি নিশ্চিত হয়েছে ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছাড়া অন্য কোনো রাসায়নিকের অস্তিত্ব ছিল না। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড বিস্ফোরণ থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়; যেগুলোর মালিক স্মার্ট গ্রুপের আরেক প্রতিষ্ঠান আল রাজী ক্যামিকেল।
ডিপো কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনার ত্রুটি তুলে ধরে তদন্ত কমিটির প্রধান মোহাম্মদ মিজানুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'তদন্তে গিয়ে আমরা সিসিটিভি ফুটেজ পাইনি, কোনো সফটওয়্যার পাইনি। মালিকপক্ষ জানিয়েছেন এগুলোর কোনো ব্যাকআপ ছিল না। এটা মালিক পক্ষের একটা ব্যর্থতা, কারণ ২০২২ সালে ক্লাউডে বা অন্যত্র কোনো নিরাপদ জায়গায় সিসিটিভি ফুটেজ সেভ থাকবে না, এটি আধুনিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যায় না। বিশেষ করে একজন বিদেশি নাগরিক যেখানে এর মালিক।'
'ডিপো কর্তৃপক্ষ অবশ্যই এ ঘটনার জন্য দায়ী। তবে যারা এটি তদরকি করতেন- তারাও তাদের দায়িত্ব অবহেলার বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারেন না। ডিপো পরিচালনার সঙ্গে জড়িত উচ্চপর্যায়ের দুয়েকজনের সঙ্গে আমরা কথা বলতে পারিনি। এর মধ্যে একজন মহাব্যবস্থাপক বিদেশ ছিলেন, আরেকজন হলেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক। উনার নামে মামলা থাকায় তিনি পলাতক রয়েছেন,' যোগ করেন মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
তিনি জানান, বিএম ডিপোর এমডি মোস্তাফিজুর রহমান ও পরিচালক মুজিবুর রহমানকে কমিটি জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তাদের বক্তব্য রেকর্ড করে। তবে ডিপোটির নির্বাহী পরিচালক ব্রি. জেনারেল (অব.) জিয়াউল হায়দার এবং ডিপোর জিএম (মার্কেটিং) নাজমুল আখতার খানকে ডাকা হলেও তারা আসেননি। রিপোর্টের একটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো, যারা ডিপো পরিচালনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন তাদের মধ্যে প্রায় ১৬ জন ডিপো কর্মী দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।
এদিকে ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে ডিপো কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা ঘাটতির কারণেই ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত মাসের শেষ দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহানের কাছে ২৪ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি।
বন্দর কর্তৃপক্ষের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'বিএম কনটেইনার ডিপোতে ক্যামিকেলসহ বিপজ্জনক পণ্যের কনটেইনার এবং পোশাকসহ অন্য রপ্তানিবাহী পণ্যের কনটেইনার একসঙ্গে রাখা হতো। নিয়ম মেনে বিপজ্জনক পণ্য আলাদা রাখা হলে এত মানুষ হতাহত হতো না। একই সঙ্গে ধোঁয়ার সূত্রপাত হওয়ার সময়ই নির্দিষ্ট কনটেইনারটি নিরাপদে সরিয়ে নিতে পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেত না। মূলত পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব, অগ্নি নিরাপত্তার জন্য ফায়ার হাইড্রেন্ট না থাকা ও প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে; যার দায় ডিপো কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না।'
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বিএম ডিপোয় বিস্ফোরণের জন্য ডিপো মালিক পক্ষ স্মার্ট গ্রুপের আরেক প্রতিষ্ঠান আল রাজী কেমিক্যালকেও দায়ী করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের চালানগুলোর রপ্তানি নিয়ে জটিলতা ছিল। দুর্ঘটনার আগেই ২ জুন এসব কনটেইনার ডিপো থেকে কারখানায় নেওয়ার কথা ছিল। সেটি তারা করেনি। এছাড়া হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড যেসব জার কনটেইনারে রাখা হয়েছিল সেগুলো আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন ছিলো না। বিপজ্জনক পণ্য পরিবহণে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন জার ব্যবহার বাধ্যতামূলক হলেও আল রাজী কেমিক্যাল তা করেনি। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটি দায়দায়িত্ব এড়াতে পারে না বলে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়।
নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশের দুটি প্রতিষ্ঠানের যৌথ বিনিয়োগে বিএম কনটেইনার ডিপো গড়ে ওঠে ২০১১ সালে। এখানে বাংলাদেশের স্মার্ট গ্রুপের অংশীদারত্ব রয়েছে। যে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নামের রাসায়নিক পদার্থ থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেটিও স্মার্ট গ্রুপের আরেক প্রতিষ্ঠান আল রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্স লিমিটেডের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্মার্ট গ্রুপের জিএম মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমরা এখনো রিপোর্ট পাইনি। তবে যেভাবে ঢালাওভাবে দোষারোপ করা হচ্ছে তার কিছুটা সত্য আবার কিছুটা সত্য না। ক্যামিকেলবাহী কনটেইনার যেখানে রাখা হয়েছিল সেখানে যথাযথ পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল। তবে ডিপোতে অগ্নি নির্বাপনের জন্য একটি প্রশিক্ষিত ফায়ার ইউনিটের অধীনে ১৭৭টা ফায়ার ডিস্টিংগুইসার ছিল। এছাড়া দুটি জলাধারও আছে ডিপোর ভেতরেই।'
নিয়ম মানেনি বিএম ডিপো, ছিল না দাহ্য পদার্থ রাখার অবকাঠামো
কনটেইনার ডিপোতে বিপজ্জনক রাসায়নিক বা পণ্য ডিপোতে রাখার জন্য আইএমডিজি কোড মানতে হয়। ডিপো পরিচালনার শর্তেও এই কোড মানার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আন্তর্জাতিক নৌ সংস্থার 'ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ডেঞ্জারাস গুডস' বা 'আইএমডিজি কোড' অনুযায়ী হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড বিপজ্জনক পণ্যগুলোর একটি। কিন্তু বিএম ডিপোতে সে শর্ত মানা দূরে থাক, রাসায়নিক ও সাধারণ পণ্য বা পোশাক পণ্য একসঙ্গেই রাখা হয়েছিলে।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, 'বিএম কনটেইনার ডিপো গার্মেন্টস সামগ্রী ও পোলট্রি ফিড রাখার কথা বলে ছাড়পত্র নিয়েছিল। রাসায়নিক রাখার কথা আবেদনে তারা উল্লেখ করেনি। নিয়মানুযায়ী বিপজ্জনক পণ্য পৃথক কন্টেইনারে রাখতে হয়। কন্টেইনারের গায়ে পণ্যের বিবরণ লিখে দিতে হয়। বিপজ্জনক পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করে দিতে হয়। এছাড়া নির্ধারিত দূরত্বে সংরক্ষিত স্থানে এসব পণ্য সংরক্ষণ করতে হয়। কিন্তু ঘটনা তদন্তে দেখা যায়, ডিপোর কন্টেইনারগুলোতে এসব কিছুই ছিল না।'
এদিকে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে রাসায়নিক পদার্থ রাখার তথ্য জানা ছিল না বিস্ফোরক পরিদপ্তরের। চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য ও বিস্ফোরক পরিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বিএম কনটেইনার ডিপোতে দাহ্য পদার্থ রাখার বিষয়টি আমাদের জানানো হয়নি। এ ধরনের পণ্য সংরক্ষণের জন্য বিশেষ অবকাঠামো প্রয়োজন। কিন্তু ডিপোতে সেই ব্যবস্থা ছিল না।'
চট্টগ্রাম কাস্টমস গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য কাস্টমসের সহকারী কমিশনার উত্তম চাকমা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বিএম কনটেইনার কর্তৃপক্ষের অবশ্যই উচিত ছিল হ্যাজার্ডাস পণ্য আলাদা করে রাখা। এক্ষেত্রে ক্যামিকেল মজুদের নীতিমালা মানেনি ডিপো কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ সময় আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় উচ্চ তাপে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডবাহী কনটেইনার বিস্ফোরিত হয়েছে।'
বিস্ফোরণে আহতরাই মামলার আসামি, তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি আইনজ্ঞদের :
৪ জুন ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় ৭ জুন সীতাকুণ্ড থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশরাফ সিদ্দিকী বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ডিপোর মালিক পক্ষ স্মার্ট গ্রুপের মালিক ও পরিচালকদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ডিপোতে কর্মরত আটজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ৷ ওই মামলার ১ নম্বর আসামি নুরুল আক্তার দুর্ঘটনায় হাত হারিয়েছেন, ২ নম্বর আসামি খালেদুর রহমানের শরীরের ১২ শতাংশ পুড়ে গেছে, অন্য আসামি সাইফুল ইসলাম বিস্ফোরণে চোখে মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন। তবে বি এম ডিপোর এমডি ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মুজিবুর রহমানসহ মালিকপক্ষের কাউকে আসামি করা হয়নি৷
এ ঘটনায় ৫১ জন মানুষের প্রাণ গেলেও হত্যা মামলা না করে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে পুলিশের মামলায়। পুলিশের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় দণ্ডবিধির ৩৩৭, ৩৩৮, ৩০৪(ক) এবং ৪২৭ ধারায় অভিযোগ করা হয়েছে। আইনজ্ঞরা জানিয়েছেন- ৩৩৭ ধারায় অবহেলা বা বেপরোয়াভাবে আঘাতের অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি ছয় মাসের কারাদণ্ড ও পাঁচশ টাকা জরিমানা৷ ৩৩৮ ধারায় গুরুতর আঘাতের অপরাধে দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে। ৩০৪(ক) ধারায় অবহেলা জনিত মৃত্যুর অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তবে উদ্দেশ্য না থাকলে ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। ৪২৭ ধারায় ৫০ টাকা বা তার বেশি ক্ষতি করার অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'যাদের আসামি হওয়ার কথা তাদের আসামি না করে এবং ৩০২ ধরায় মামলা না করে শুরুতেই মামলাটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে দুদিক থেকে দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকার কারণে মানুষের মৃত্যু হতে পারে এটা তো জানা বিষয়৷ মানুষকে মৃত্যুর মুখে রাখা এবং সেই পরিস্থিতিতে মৃত্যু তো সরাসরি হত্যার অপরাধ৷ এখন যেহেতু তদন্ত প্রতিবেদনে ডিপো মালিকদের দায়ী করা হয়েছে, তাই পুলিশের উচিত নতুন করে মামলায় আসামিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা ও তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা।'
এদিকে মামলা দায়েরের পর একমাস পেরিয়ে গেলেও এখনো মামলাটির দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। মামলায় যে আটজনকে আসামি করা হয়েছিল তাদের এখন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ পুলিশের।
সীতাকুণ্ড থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'তদন্ত কমিটির রিপোর্টের বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই। সে সময় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করে তারা যেভাবে বলেছেন আমরা সেভাবে মামলা দায়ের করেছি। এখন তদন্তে যদি নতুন কিছু পাওয়া যায়, আমরা সেই মতে ব্যবস্থা নেব।'
ওসির দাবি মামলায় আসামি করা সেই আট কর্মকর্তাকে এখন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের অনুসন্ধানে জানা গেছে, মামলার পাঁচ আসামি দুর্ঘটনার পর গত মাসের বিভিন্ন সময় আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ও চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট আকতার কবির চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'একদিকে যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও পুলিশ বলছে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে এই ঘটনার জন্য প্রকৃতপক্ষে যারা দায়ী তারা বিদেশ ভ্রমণ করছে! এত বড় ঘটনার তদন্ত চলাকালে মালিক পরিবারের বিদেশ ভ্রমণ আমাদের কাছে আশ্চর্যজনক হলেও একেবারে অনাকাঙ্খিত না; কারণ এ দেশে সবই সম্ভব। তবে আশার কথা হলো সরকারি দুটি সংস্থা মালিক পক্ষকে এ ঘটনায় কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর সুমহান দায়িত্ব কিছুটা হলেও পালন করেছেন।'
গত ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে আগুন থেকে বিস্ফোরণের ঘটনার পর আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনার প্রথম দুই দিনে ৪১টি মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চারজন। বুধবার পর্যন্ত বিভিন্ন সময় আরও ছয়জনের দেহাবশেষ পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১ জনে। এ ঘটনায় আহত হন আড়াই শতাধিক মানুষ।
ঘটনার পর বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে বন্দর কর্তৃপক্ষ, ফায়ার সার্ভিস, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশন, জেলা প্রশাসন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও বিস্ফোরক অধিদপ্তর ছয়টি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করে। গঠিত ছয় কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য তিন থেকে সাত দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিস্ফোরণের প্রায় একমাস পূর্ণ হলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় ছাড়া অন্য কোনো কমিটিই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি।