সারাদেশে মাঝারি-ভারি বৃষ্টি, কৃষকের স্বস্তি
দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচন্ড খরায় যখন সেচের পানি দিয়েও জমির ফাটল রোধ করা যাচ্ছিল না তখনই অঞ্চলভেদে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। এতে করে আমন আবাদকারী কৃষকদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি দেখা দিয়েছে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নূরজ্জামান বলেন, দিনাজপুর জেলায় এখন মোটামুটি প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে কৃষকের সম্পূরক সেচের পরিমাণ কম লাগছে। এই বৃষ্টিপাত কৃষকের জন্য খুবই ভালো। যদি এই বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে, কৃষকের খরচ কম হওয়ার পাশাপাশি ফলন ভালো হয়।
শুধু দিনাজপুরই নয়, গত দুই-তিনদিন ধরে বগুড়া, রংপুর, নওগাঁ, জামালপুর সহ দেশের বেশিরভাগ জেলাতেই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে করে কৃষকদের যেমন সেচের খরচ কমছে, তেমনি ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনাও দেখছেন কৃষকরা। যদিও এই বৃষ্টিপাত এখনো স্বাভাবিকের তুলনায় কম।
বগুড়া সদরের যশোপাড়ার কৃষক আবু আলম টিবিএসকে বলেন, 'এবারে বৃষ্টি কম হওয়ায় মেশিন দিয়ে সেচ দেওয়ার কারণে ধান চাষে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। বিদ্যুৎচালিত মেশিনে সেচ দিলে প্রতি শতকে নেয়া হচ্ছে ৪০ টাকা। আর ডিজেলচালিত সেচে এই খরচ পড়ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। তারপরও জমিতে ফাটল ছিল। এ সময়ে এভাবে বৃষ্টি হলে খরচও কমবে, আবার ফলন নিয়ে যে চিন্তা সেটাও হয়তো দূর হবে।'
গত সোম ও মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেই ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার খরচ পাওয়া গেছে। এই বৃষ্টিতে যারা আমন রোপণের আশা ছেড়ে দিয়েছিল তাদেরও কেউ কেউ নতুন করে আমন লাগিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
টিবিএসের বগুড়া, দিনাজপুর, রংপুর, জামালপুর সহ কয়েকটি জেলার প্রতিনিধিরা জানান, বৃষ্টিনির্ভর আমন মৌসুম এবার পুরোপুরি সেচের উপর নির্ভর হয়েছে, কম বৃষ্টিপাতের কারণে। জমিতে যে পানির দরকার সেটা সেচ দিয়েও পূরণ করা যাচ্ছিল না। এই মুহূর্তে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে কৃষকদের।
কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, এবার সারাদেশে ১.৫৯ লাখ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আগস্টের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ৭০ শতাংশের কিছু বেশি জমিতে আমন ধান রোপণের খবর পাওয়া গেছে।
বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে বগুড়ায়ও ভালো বৃষ্টিপাত হয়েছে। বগুড়া আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক নুরুল ইসলাম জানান, চলতি মাসে মাঝারী আকারে আরও বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
বগুড়া আবহাওয়া অফিস বলছে, গত বছর আগস্ট মাসে অন্তত ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এবার আগস্টে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৩০ দশমিক ৮ মিলিমিটার। মূলত এই সময়ের মধ্যেই আমন রোপণ করা হয়। আমন রোপণের সময় হচ্ছে ১৫ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত। এবার আগস্টে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে সংকটে পড়েছে কৃষকেরা। গত বছর সেপ্টেম্বরে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১১৬ মিলিমিটার। চলতি মাসের সাত দিনে ৬৯ দশমিক ৮ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে।
এরপরও অবশ্য কৃষকদের মধ্যে কিছু হতাশা রয়েছে। বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের কৃষক আতিকুর রহমান বলেন, 'বৃষ্টির অভাবে সময়মতো আমনের ধান রোপণ করতে পারিনি। পরে আগস্টের শেষের দিকে দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করা হয়। কিন্তু ধান গাছ বড় হচ্ছে না। আমনে তো পানি লাগে বেশি। পানি, সার ছাড়া গাছের বৃদ্ধিও হবে না। এখান থেকে ফলন কী পাবো কিছুই বুঝতে পারছি না। তবে এখন কিছুদিন বৃষ্টি পেলে গাছ দ্রুত বাড়তো।'
নওগাঁ সদর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক ময়নুল ইসলাম বলেন, '২ বিঘা জমিতে আমনের ধান লাগিয়েছি। বৃষ্টি না হওয়ায় শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে আমন লাগানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে আবাদ করতে হচ্ছে। এ বছর যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে বা হচ্ছে তা ধানের জন্য যথেষ্ট না। তবে এখন বৃষ্টি হওয়াটা ধান ও সবজি দুটোর জন্যই ভালো।'
তিনি বলেন, প্রতি সপ্তাহে সেচ দিতে হয়। যদি বৃষ্টিপাত বেশি হতো তেল খরচ কিছুটা কমে আসতো। তেলের কারণে আমন চাষে খরচটা বেশি হচ্ছে।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন বলেন, 'বিগত বছরের তুলনায় এবছর আমন মৌসুমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক কম। তবে গত কয়েকদিন থেকে মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে। যদিও এটাও পর্যাপ্ত না।'
কিন্তু তারপরও এ বৃষ্টি আমনের জন্য ভাল। তবে সামনে আরো বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নওগাঁ বদলগাছী উপজেলা কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ১ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৭ দশমিক ৬ মিলিমিটর বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এরমধ্যে ২ সেপ্টেম্বর ২০ দশমিক ৬ মিলিমিটার, ৪ সেপ্টেম্বর ১ দশমিক ৮ মিলিমিটার এবং ৫ সেপ্টেম্বর ৫ দশমিক ২ মিলিমিটার। তবুও এই বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের তুলনায় কম।