চসিকের গৃহকর কমাতে ঘুষ আদায়ের দায়ে দু’জন চাকরিচ্যুত, ১০ শোকজ
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) বর্ধিত গৃহকর কমানোর জন্য ঘুষ আদায়ের দায়ে রাজস্ব বিভাগের দুই কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সোমবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় এই শাস্তির আদেশ চূড়ান্ত করেন মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরী। এছাড়া আরো ১০ জনকে শোকজ করা হবে আজ মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর)।
বর্ধিত গৃহকর কমানোর নামে ঘুষ আদায়ের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। গৃহকর ইস্যুতে আন্দোলন করা সংগঠন চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ গত ১৫ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে ২০০ কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ সামনে আনে। বিষয়টি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন এবং গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে নেমে ১২ জনের একটি তালিকা গত ১৯ অক্টোবর মেয়রকে দেয়। এর প্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
আর্থিক লেনদেনে জড়িত ১২ জনের মধ্যে রাজস্ব সার্কেল-০৭ এর কর আদায়কারী কাজী মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান ও মোছলেহ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া বাকি ১০ জন রাজস্ব সার্কেল-০৩ এর কর কর্মকর্তা (কর) মো. সেলিম উদ্দিন শিকদার, রাজস্ব সার্কেল-০৬ এর উপ-কর কর্মকর্তা (কর) আবুল কালাম, রাজস্ব সার্কেল-০৭ উপ-কর কর্মকর্তা (কর) মো. কামরুল হাসান, রাজস্ব সার্কেল-০৭ এর কর আদায়কারী রাজীব চৌধুরী, রাজস্ব সার্কেল-০১ এর কর আদায়কারী মো. সালাউদ্দিন, রাজস্ব সার্কেল-০২ কর আদায়কারী এম. তৈয়বুর রহমান, রাজস্ব সার্কেল-০৪ এর কর আদায়কারী মো. আনিছ উদ্দিন, রাজস্ব সার্কেল-০৫এর কর আদায়কারী ত্রিদীপ দাশ, রাজস্ব সার্কেল-০৬ এর কর আদায়কারী আবদুল মোমেন পাটোয়ারি এবং রাজস্ব সার্কেল-০৭ কর আদায়কারী মিশকাতুল ইসলামকে শোকজ করা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে চসিক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, "হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। যাদের শোকজ করা হবে তারা সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারলে তাদেরও চাকুরিচ্যুত করা হবে। যারা যারা অনিয়ম করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
মূলত কর পুনর্মূল্যায়নে সিটি করপোরেশন করবিধি ১৯৮৬-এর ২০ ধারা অনুযায়ী, ভাড়ার ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণের বিষয়টি অনুসরণ করা হয়েছে। ওই সময় সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন মাহমুদুল হাসান চৌধুরী। তিনিও এটি বাস্তবায়ন করেননি। চসিকে আয়তন হিসেবেই গৃহকর আদায় হয়ে আসছিল এতো বছর। ২০১৬ সালের ২১ মার্চ গৃহকর পুনর্মূল্যায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। ওই সময় আন্দোলনসহ ব্যাপক বিরোধিতার মুখে পড়েছিল সিদ্ধান্ত। এই আন্দোলনে সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীও মাঠে নেমেছিলেন। উচ্চ আদালতে রিটসহ বিভিন্ন বিরোধিতার মুখে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর গৃহকর পুনর্মূল্যায়ন কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছিল স্থানীয় সরকার বিভাগ। এরপর চসিকের চিঠির প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি গৃহকর পুনর্মূল্যায়ন কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশনাটি প্রত্যাহার করে নেয় মন্ত্রণালয়। চলতি অর্থবছর থেকে বাড়ি ভাড়া হারে গৃহকর আদায় করা হচ্ছে। এই গৃহকর আপিলে কমিয়ে দেওয়ার নামে ঘুষ বাণিজ্য হচ্ছে।