মান বজায় রাখতে না পারায় খাদ্য রপ্তানিতে পিছিয়ে বাংলাদেশ
আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় খাদ্য ও খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে না বলে উল্লেখ করেছেন কোডেক্স অ্যালিমেন্টারিয়াস কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান সঞ্জয় ডেভ।
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় বাংলাদেশ ফুড সেফটি অথরিটি (বিএফএসএ) আয়োজিত জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস ২০২৩ এর আলোচনা সভার মূল প্রবন্ধে উপস্থাপনকালে এ কথা বলেন তিনি।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, "কোডেক্স (খাদ্য ও খাদ্যপণ্যের স্ট্যান্ডার্ড ও সেইফ ফুডের গাইডলাইন নির্ধারণকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান) এর স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করার কারণে এগ্রি প্রডাক্টের রপ্তানি ১৫ বছরের ব্যবধানে ২২ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।"
"যেখানে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মিটিংগুলোতেই ঠিকমত অংশগ্রহণ করেনি। সেভাবে স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করার বিষয়গুলোতেও প্রতিবেশি দেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে," যোগ করেন তিনি।
এতদিন বিএসটিআই কোডেক্স এর ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে, যেখানে এখন বিএফএসএ কে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী বিএফএসএ নানা ধরনের নীতি ও পলিসি তৈরি করছে খাদ্য নিরাপদ করার জন্য।
অনুষ্ঠানে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, "আমাদের ফুডের মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করতে না পারার কারণে অনেক দেশ আমাদের সার্টিফিকেট একসেপ্ট করে না বলে আমরা বিশ্ববাজারে রপ্তানিতে পিছিয়ে। কোন কোন দেশ আমাদের পণ্য ফিরিয়েও দিয়েছে।"
তিনি বলেন, "আন্তর্জাতিক বাজার এবং স্থানীয় বাজারের জন্য আমাদেরকে এই স্ট্যান্ডার্ড ঠিক করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।"
অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বিএফএসএ এর একটি হটলাইন উদ্বোধন করেন। হটলাইন নাম্বারটি হলো ১৬১৫৫।
টোল ফ্রি এই নাম্বারে ফোন করে যে কেউ নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক যে কোন পরামর্শ বা অভিযোগ জানাতে পারবেন। এটি সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
এ সময় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, "যারা খাদ্যে ভেজাল দেয় তারা সাইলেন্ট কিলার। এই কাজটা যারা করছে, তাদের কাছে আমাদের পৌঁছাতে হবে। সবাই মিলে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।"
খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, "আমরা ১০-২০ বছর নয়, দু এক বছরের মধ্যে নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা তৈরি করতে চাই। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে মানসম্পন্ন খাদ্য দরকার। সেজন্য স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি গড়ে তুলতে হবে, যা বেশ চ্যালেঞ্জিং। তবে অসম্ভব নয়।"
"আমরা খাবারে যে ফুড কালার ব্যবহার করি সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এটা কাপড়ের রং। কারণ ফুড গ্রেড কালার যেটা তার দাম অনেক। ব্যবসায়ীরা বলে, এত দাম দিয়ে মানুষ খাবার খেতে চায় না। কিন্তু সেটা হতে দেওয়া যাবে না। যে সব ব্যবসায়ীরা এসব করছে তাদেরকেও চিন্তা করতে হবে, মানুষের কথা ভাবতে হবে,"
তিনি বলেন, "আমরা চাইলেই রেভল্যুশন গড়ে তুলতে পারি। যেমনটা এবারে ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে হয়েছে। সয়াবিনের দাম বেশি হওয়ার কারণে এবার অনেক বেশি সরিষার চাষ হয়েছে। বিকল্প তৈরি হচ্ছে। এবার হয়তো সরিষা দিয়ে আমাদের চাহিদার ২০-২৫ শতাংশ পূরণ করতে পারবো। এভাবে করে চাইলেই দেশীয় খাদ্যের মান নিয়ে যে আস্থাহীনতা রয়েছে সেটা দূর করতে পারবো।"