রাবনাবাদ চ্যানেলে ড্রেজিংয়ের পর পায়রা বন্দরে এখন ভিড়তে পারবে বড় জাহাজ
ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ হওয়ায় পায়রা সমুদ্র বন্দরে এখন ভিড়তে পারবে বড় জাহাজ। রোববার (২৬ মার্চ) ড্রেজিংয়ের কাজ সম্পন্ন করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের গভীরতম রাবনাবাদ চ্যানেলের নিয়ন্ত্রণ পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছে বেলজিয়ামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জান ডি নুল।
৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও সাড়ে ১০ মিটার ড্রাফটের (গভীরতা) এই চ্যানেল এখন ভাটার সময় ৪০,০০০ টন এবং জোয়ারের সময় ৫৫,০০০ টন পর্যন্ত মালামাল সম্বলিত জাহাজ পরিচালনা করতে পারবে।
এতে পরিবহন খরচ কমে আসায় বন্দরের ব্যবসায় নতুন আশা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
পায়রা বন্দরের কাছে অবস্থিত পায়রা ১,৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা জানান, প্ল্যান্টের জেটিতেই এখন কয়লা বহনকারী বড় জাহাজ ভেড়াতে পারবে কতৃপক্ষ। এর জন্য আর আগের মতো বন্দরের বাইরে নোঙর করে ছোট জাহাজের মাধ্যমে পণ্য আনা লাগবে না।
"বর্তমানে আমরা চট্টগ্রামে ৩০,০০০ টন বহন ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজে পণ্য নিয়ে আসি এবং সেখানেই নোঙর করি। তারপর কয়লা আনলোড করার জন্য আমরা লাইটারেজ হিসেবে ছোট জাহাজ ব্যবহার করি। তবে নতুন চ্যানেলের মাধ্যমে আমরা এখন ৩০,০০০ টন কয়লা বহনকারী জাহাজ সরাসরি পায়রা বন্দরে আনতে পারবো," বলেন তিনি।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহেল রোববার পটুয়াখালীতে স্থানীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা এই বন্দরের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করছেন; তারা এখানে বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজছেন।
বন্দর কর্তৃপক্ষ এখন বন্দরের প্রথম টার্মিনাল প্রস্তুতের কাজ করছে বলে জানান তিনি। কাজ শেষ হলে আগামী মে মাসে প্রধানমন্ত্রী এর উদ্বোধন করবেন।
অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহেল বলেন, "টার্মিনালটি চালু হলে এর মাধ্যমে রপ্তানি ও আমদানি উভয় কার্যক্রমই উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।"
তিনি উল্লেখ করেন, পায়রা বন্দর এখন দেশের গভীরতম বন্দর। এখন থেকে ২২৫ মিটার দীর্ঘ এবং ৩২ মিটার প্রস্থের প্যানাম্যাক্স আকৃতির বড় জাহাজ সরাসরি এই বন্দরে ভিড়তে পারবে।
এদিকে, সাড়ে ৯ মিটার গভীরতা নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দেশের ব্যস্ততম বন্দর হিসেবে পরিচিত। ৩৫,০০০ টন পণ্য বহনের ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ পরিচালনা করতে পারে এই বন্দর। অন্যদিকে, কুতুবদিয়া বন্দরের বহিনোঙরে এক লাখ টন ওজনের জাহাজ ভিড়তে পারে।
রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহেল আরো বলেন, পায়রা সমুদ্র বন্দরের শুল্ক হার চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের তুলনায় ২০% থেকে ৩০% কম।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের তুলনায় পায়রা বন্দর দিয়ে ঢাকায় পণ্য পরিবহনে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা সময় কম লাগবে।
রাবনাবাদ চ্যানেলে ৬,৫০০ কোটি টাকার ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পটি পরিচালনা করেছে বেলজিয়ামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জান ডি নুল। নবগঠিত 'বাংলাদেশ অবকাঠামো তহবিল' থেকে এই প্রকল্পের অর্থায়ন করেছে সরকার।
ক্যাপিটাল ড্রেজিং শেষ হওয়ার পরেও আগামী ২০২৪ সাল পর্যন্ত চ্যানেলের নাব্যতা বজায় রাখার দায়িত্বে থাকবে জান ডি নুল।
বন্দর কর্মকর্তারা জানান, নিজস্ব ড্রেজার অধিগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের; এরপর ধীরে ধীরে ড্রেজিং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেবে তারা।