অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ স্থগিত চান জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক শুক্রবার (৩১ মার্চ) অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ বন্ধে বাংলাদেশকে আহ্বান জানিয়েছেন।
'আমি উদ্বিগ্ন যে সারা বাংলাদেশে সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শন এবং অনলাইনে সমালোচনার কণ্ঠরোধ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ব্যবহার করা হচ্ছে,' এক বিবৃতি আজ এ কথা বলেন তিনি।
হাইকমিশনার এ সময় বাংলাদেশকে অবিলম্বে এ আইনের প্রয়োগ স্থগিত করার এবং এটিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে এর ধারাগুলোতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার আহ্বান জানান।
ভলকার টুর্ক বলেন, '২০১৮ সালের ১ অক্টোবর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে সর্বশেষ প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধে মামলাসহ এ আইনে এখন পর্যন্ত ২,০০০-এর বেশি মামলা হয়েছে। শামসুজ্জামানের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তাকে আটক এবং তার ল্যাপটপ, ফোন ও অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। তার জামিনের আবেদন নাকচ করা হয়েছে।
'প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান এবং একজন আলোকচিত্রী সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় আরেকটি মামলা করা হয়েছে। এ মামলাটি করা হয়েছে বাংলাদেশে জীবনযাপনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সৃষ্ট সংকট নিয়ে করা একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে।'
কমিশনের বিবৃতিতে ফেব্রুয়ারি মাসে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে পরিতোষ সরকার নামক এক ব্যক্তিকে এ আইনের আওতায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।
ভলকার টুর্ক বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অতি বিস্তৃত ও অস্পষ্ট ধারাগুলো নিয়ে তার দপ্তর থেকে নিয়মিতভাবে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। 'বাংলাদেশ সরকার এ আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধে সুরক্ষাকবচ রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু গ্রেপ্তার যখন অব্যাহত, তখন এ অঙ্গীকার পর্যাপ্ত নয়। খোদ এ আইনকেই যথাযথভাবে ঢেলে সাজানো দরকার,' তিনি বলেন।
অভিযুক্তদের মুক্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে বর্তমানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে থাকা সব মামলা পর্যালোচনার জন্য একটি স্বাধীন বিচারিক প্যানেল গঠনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার।
এছাড়া ভলকার টুর্ক বর্তমানে নিবন্ধনহীন মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর আদিলুর রহমান খান ও নাসিরুদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে চলমান বিচারপ্রক্রিয়া নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছেন। এ দুজনের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে ভুল প্রতিবেদনের অভিযোগে মামলা হয়েছিল।