আগুন নিয়ন্ত্রণে বড় ভরসা ঢাকা কলেজের পুকুর
রাজধানীতে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের বরাবরই পানির সংকট পোহাতে হয়। সেই সংকটের মধ্যে শনিবারের নিউ সুপার মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে ত্রাতা হিসেবে কাজ করেছে এর পার্শ্ববর্তী ঢাকা কলেজের পুকুরটি।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে হাতিরঝিল থেকে হেলিকপ্টারে করে পানি এনে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হয়েছিল, তবে সেই ঘটনায় সবচেয়ে বড় ত্রাতা হয়ে ভূমিকা রেখেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের পুকুর।
রাজধানীর জলাধার কিংবা পুকুর দিন দিন কমেই যাচ্ছে। যখনই কোনো অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে তখনই এসব জলাধারের গুরুত্ব সামনে আসে নীতিনির্ধারকদের।
ঢাকা কলেজের পুকুর থেকে প্রায় ১৮টি পাম্পের মাধ্যমে পানি সংগ্রহ করে নিউ সুপার মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণ করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। যদি কাছাকাছি এমন পানির জলাধার না পাওয়া যেত তাহলে অগ্নিকাণ্ডে আরও বড় আকারের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল বলে জানান ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
তারা জানান, সকালে শুরুতে ১২টি পাম্প দিয়ে কলেজের পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করলেও এক পর্যায়ে ১৮টি পাম্প লাগানো হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর বিকেলে ধীরে ধীরে সেই সংখ্যা কমানো হয়।সেখানে দায়িত্বরত ফায়ার সার্ভিসের কর্মী আবু মুসা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আগুন লাগার স্থান থেকে কাছাকাছি কোনো জলাধার না পেলে আমাদের আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়।'
তিনি জানান, তাদের এক একটি পাম্প প্রতি মিনিটে ১৪০০ থেকে ২২০০ লিটার পর্যন্ত পানি সরবরাহ করতে সক্ষম। একেকটি পাম্পের কার্যক্ষমতা ভিন্ন ভিন্ন।
তবে পুকুরের পানি সম্পূর্ণ যেন শেষ না হয়ে যায়, এজন্য কলেজের গভীর নলকূপের পাম্প চালু রেখে পুকুরে পানি দেওয়া হয়।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আরও জানান, নিউ মার্কেটের দক্ষিণ দিকের এলাকা থেকেও পানি সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া ইডেন মহিলা কলেজের পুকুর ও আজিমপুর কোয়ার্টার থেকেও পানি সংগ্রহ করা হয়।সকালেই ঢাকা কলেজের পুকুর পাড়ের দক্ষিণ পার্শ্বের নিরাপত্তা দেয়াল ভেঙে পানির পাইপ নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা সার্বিকভাবে ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যদের সহযোগিতা করেছি। ঢাকা কলেজের পানি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ঢাকা কলেজের রোভার রেড ক্রিসেন্ট, বিএনসিসি ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা অগ্নি নির্বাপণে সহযোগিতা করেছে।'
মৎস্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৮৫ সালে ঢাকায় প্রায় দুই হাজার পুকুর ছিল। এখন তা এসে ঠেকেছে মাত্র একশটিতে।
ঢাকার পুকুর নিয়ে কয়েক বছর আগে করা একটি সমীক্ষা রয়েছে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম)। সেখানে বলা হয়েছে, গত সাড়ে তিন দশকে হারিয়ে গেছে ঢাকার ১০ হাজার হেক্টরের বেশি জলাভূমি, খাল ও নিম্নাঞ্চল। জলাশয় ভরাটের এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সাল নাগাদ ঢাকায় জলাশয় ও নিম্নভূমির পরিমাণ মোট আয়তনের ১০ শতাংশের নিচে নেমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এতে আরো বলা হয়, ১৯৭৮ সালে ঢাকা ও আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় জলাভূমির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৯৫২ হেক্টর এবং নিম্নভূমি ১৩ হাজার ৫২৮ হেক্টর। একই সময়ে খাল ও নদী ছিল ২ হাজার ৯০০ হেক্টর। রাজধানীর বৃষ্টির পানি এসব খাল দিয়েই পড়েছে নদীতে। ২০১৪ সালে ঢাকা ও আশেপাশে জলাভূমি কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৩৫ হেক্টর, নিম্নভূমি ৬ হাজার ১৯৮ হেক্টর এবং নদী-খাল ১ হাজার ২ হেক্টর। অর্থাৎ ৩৫ বছরে জলাশয় কমেছে ৩৪.৪৫ শতাংশ। এ সময়ের ব্যবধানে নিম্নভূমি কমেছে ৫৪.১৮ এবং নদী-খাল ৬৫.৪৫ শতাংশ।
জলাধার রক্ষায় ২০০০ সালে পৃথক আইন করা হয়। আইনে বলা আছে, কোনো অবস্থায় খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর ও প্রাকৃতিক জলাশয়ের স্বাভাবিক গতি ও প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না। এমনকি সড়ক-মহাসড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণকালেও প্রাকৃতিক জলাশয়, জলাধার, খাল-নদী ইত্যাদির স্বাভাবিকতা নষ্ট করা যাবে না। জনস্বার্থে ও একান্ত প্রয়োজনে তা ভরাট করতে হলে, সেক্ষেত্রে সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। তবে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে একের পর এক জলাধার ভরাট করে গড়ে তোলা হচ্ছে আবাসন ও স্থাপনা।