খুলনা সিটি নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থিতা নিয়ে বিড়ম্বনা
খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ১৯ নং ওয়ার্ডে টানা তিন বার বিজয়ী কাউন্সিলর আশফাকুর রহমান কাকন খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য। ইতোপূর্বে নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি দলীয় সমর্থন পেলেও, আসন্ন কেসিসি নির্বাচনে অংশ না নিতে দলের চাপের মুখে রয়েছেন। তবে এলাকার উন্নয়ন করার জন্য তিনি আবারও নির্বাচনে অংশ নিতে চান।
তিনি বলেন, 'এলাকার লোকজন আবারও আমাকে নির্বাচন করতে বলছে। সে কারণে বিএনপি যদি নির্বাচনে না যায় তাহলে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হবো।'
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হাফিজুর রহমান মনিও ১৮ নং ওয়ার্ডে টানা দুইবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বলেন, 'নির্বাচনের জন্য বেশ আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। আমার ওয়ার্ডে আমার থেকে জনপ্রিয় কোন প্রার্থী নেই। এখনো দলের সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশ বিড়াম্বনায় আছি। দলকে জানাব নির্বাচনের আগ্রহের কথা।'
মনির মত এমন মনোভাব ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শমশের আলী মিন্টু ও সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাজেদা খাতুনের, তারা উভয়েই বিএনপি নেতা। তারা বলছেন, 'এখনো আমরা দলের দিকে তাকিয়ে আছি। তবে নির্বাচনে অংশ নিলে বিজয়ী হব।'
বর্তমান বিএনপির কাউন্সিলরদের পাশাপাশি, অনেক নেতারাও নির্বাচনের জন্য বেশ কয়েক ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নাম না প্রকাশ করার শর্তে এ প্রতিবেদকের কাছে অন্তত ১০ জন বিএনপি নেতা জানিয়েছে, তারা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করবেন।
খুলনা সিটি করপোরেশনে (কেসিসি) ৩১ ওয়ার্ড রয়েছে। এছাড়া নারীদের জন্য সংরক্ষিত ১০টি আসন রয়েছে। এই ৪১ টি পদে বিএনপির শতাধিক সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন।
বিএনপি নেতারা জানান, কেসিসিতে ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৫টি নির্বাচন হয়েছে। এরমধ্যে মেয়র পদে ৩ বার বিএনপি ও দুইবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। একইভাবে অনেক ওয়ার্ডে আ. লীগের প্রার্থীর তুলনায় বেশি জনপ্রিয় বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা রয়েছেন।
ক্ষমতাসীন আ. লীগ সরকারের অধীনে ২০১৮ সালের কেসিসি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি; যার ফলাফল ছিল– সাধারণ কাউন্সিলরদের মধ্যে ১৩ জন আ. লীগের, ১০ জন বিএনপির এবং ৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হন। তবে নির্বাচনের পরে এদের মধ্যে বিএনপি ও বিএনপির বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র প্রার্থী) থেকে নির্বাচন করা ১১ জন কাউন্সিলর আওয়ামী লীগে যোগ দেন। বর্তমানে কেসিসিতে ২৬টি ওয়ার্ডে আ. লীগপন্থী ও বাকি ৫টি ওয়ার্ডে বিএনপি-পন্থী কাউন্সিলর রয়েছেন।
অন্যদিকে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা ১০টি আসনের মধ্যে ৭টিতে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। বাকি তিনটির মধ্যে ২টি ছিল বিএনপির ও বাকি একটি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীর (স্বতন্ত্র)। এদের মধ্যে বিএনপির একজন আ. লীগে যোগদান করেছেন। বর্তমানে বিএনপির সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর আছেন মাত্র একজন।
২০১৮ দলীয় মনোনয়নে ধানের শীষ প্রতীকে মেয়র পদে নির্বাচন করেছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর তাকে পদ থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়।
নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, 'দলীয় নেতাকর্মীর অনেকে আ. লীগ যাতে নির্বাচনের ফাঁকা মাঠে গোল দিতে না পারে, সেই মতামত দিচ্ছে। তারা বিনা চ্যালেঞ্জে আওয়ামী লীগকে ছেড়ে না দেওয়ার কথা বলছে। বিএনপিকে পছন্দ করে এ রকম নানা শ্রেণি-পেশার মানুষও একই কথা বলছে। তারা বলছেন, আন্দোলন ও নির্বাচন দুটিতেই বিএনপির থাকা উচিত। আমার অনুসারী অনেকে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী। নির্বাচন ও আন্দোলন দুটিই একসঙ্গে চলতে পারে বলে তারা মতামত দিচ্ছেন। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের আমলে নেওয়া উচিত।'
তবে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের বহিস্কার করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা। খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, 'এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনেই বিএনপি অংশ নিবে না। মেয়র থেকে কাউন্সিলর পর্যন্ত কাউকে দলীয়ভাবে মনোনয়নও দেওয়া হবে না। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি দল থেকে বহিষ্কার করাও হতে পারে।'