১২ মার্চ থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত চার দফায় মোট ৩৮ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ
মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ঘনিষ্ঠ বা সরকারের আস্থাভাজনদের ওপরই মাঠ প্রশাসনের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে যারা নতুন করে দায়িত্ব পাচ্ছেন, তাদের অনেকেই বর্তমান সরকারের মন্ত্রী, মেয়র, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী এবং ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। আর যাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই, তারাও কোনো না কোনোভাবে সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন।
গত ৬ জুলাই থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত তিন দফায় ৩০ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তার আগে গত ১২ মার্চ এক দফায় আট জেলায় ডিসি পরিবর্তন করে নতুনদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি গত ১৩ জুন ১৩ জেলায় দেওয়া হয়েছে নতুন পুলিশ সুপার। জেলাগুলোতে যেসব কর্মকর্তাদের ডিসি ও এসপি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে তাদের আগের কর্মস্থল, স্থায়ী ঠিকানা, শিক্ষা জীবনের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বিবেচনা করে এমন মতামত প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
নতুন নিয়োগ করা ডিসিদের মধ্যে আটজনই এর আগে মন্ত্রী, মেয়র, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পরিচালক ও অন্যান্য পদে ছিলেন ৫ জন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ডিসি পোস্টিং পেয়েছেন ৪ উপসচিব। এছাড়া অন্যান্য মন্ত্রণালয় থেকে যারা ডিসি নিয়োগ পেয়েছেন তারাও সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের পোস্টিং পদায়নের ধরন থেকে দেখা যায় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা এই পর্যায়ের ব্যক্তিরা তাদের ঘনিষ্ঠ, পরিচিত লোকদের একান্ত সচিব হিসেবে বেছে নেন। এসব একান্ত সচিবরা অনেক সময় দলীয় মতাদর্শের হতে পারেন অথবা ব্যক্তিগত চেনাজানাও থাকতে পারে। এককথায় 'আস্থাভাজন' হন।
আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। নতুন ডিসিরাই নির্বাচনের সময় জেলার দায়িত্বে থাকবেন। জেলা পর্যায়ে ডিসি কেন্দ্রীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিত্ব করেন। নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারও থাকেন ডিসিরা। ফলে নির্বাচনে ডিসিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে।
যাদেরকে ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রীর একান্ত সচিব নূর কুতুবল আলম, যাকে পটুয়াখালীর ডিসি নিয়োগ করা হয়েছে। যশোরের ডিসি হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিবের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মাদ আবরাউল হাসান মজুমদারকে.
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের একান্ত সচিব শাহ মোজাহিদ উদ্দিনকে বান্দরবানের ডিসি হিসেবে বদলি করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সচিবের দায়িত্বে থাকা মু. আসাদুজ্জামানকে পাবনার ডিসি নিয়োগ করা হয়েছে।
এছাড়া শরীয়তপুরের ডিসি হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে পানি সম্পদ উপমন্ত্রীর একান্ত সচিব আরিফুজ্জামানকে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিবকে কুমিল্লা জেলার ডিসি করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মাদ মারুফুর রশিদ খানকে মাদারীপুরে ডিসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যুব ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব আবু নাছের ভূঞাকে নাটোরের ডিসি করা হয়েছে।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের একান্ত সচিব মো. কায়ছারুল ইসলামকে টাঙ্গাইলের ডিসি নিয়োগ করা হয়েছে। আর বাণিজ্য সচিবের একান্ত সচিব এস এম রফিকুল ইসলামকে ঝিনাইদহ জেলার ডিসি করা হয়েছে।