পুনর্জন্মের চেয়েও কম না: সীতাকুণ্ডে লরি চাপা থেকে বেঁচে ফেরা বক্কর
লরি চাপা থেকে বেঁচে ফেরা পুনর্জন্মের চেয়েও কম নয় বলে মন্তব্য করেছেন আবু বক্কর। এজন্য তিনি কৃতজ্ঞতা জানান সৃষ্টিকর্তার প্রতি। আজ রোববার (দুপুর ২টায়) চিকিৎসা শেষে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে তিনি এই মন্তব্য করেন।
আবু বক্কর বলেন, 'গতকাল সৃষ্টিকর্তা আমার পরিবারকে যেই বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন- তার শুকরিয়া আদায় করে শেষ করা যাবে না। যে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা হয়েছে- তাতে আমি, আমার দুই মেয়ে, শ্বশুর ও চালকসহ সবাই মারা যেতে পারতাম। অথবা যে কেউই মারা যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু, আল্লাহ আমাদের সবাইকে বাঁচিয়েছেন। আমি মনে করি- এই বেঁচে ফেরা পুনর্জন্মের চেয়েও কম না।'
তিনি আরো বলেন, 'চিকিৎসা শেষে আমি ও আমার দুই মেয়ে আজ বিকেলে বাড়ি (ফটিকছড়ির রায়পুর গ্রাম) ফিরে এসেছি। আমার শ্বশুর এখনো চমেক হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কর্তব্যরত ডাক্তার বলেছেন- উনারও বড় কোনো ইনজুরি হয়নি। তাই উনাকে আগামীকাল (সোমবার) রিলিজ দিয়ে দিবেন।'
এর আগে গতকাল শনিবার দেশে ফেরা দুবাই প্রবাসী আবু বক্করকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আনতে যায় তার দুই মেয়ে আদিবা ও আদিলা। তাদের সঙ্গে ছিলেন নানা মুসা আহাম্মেদ।
আবু বক্কর তাঁর দুই মেয়ে এবং শ্বশুরকে নিয়ে ভাড়ায় চালিত একটি প্রাইভেট কারে করে বিমানবন্দর থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। তাঁদের বাড়ি ফটিকছড়ির লেলাং ইউনিয়নে। আদিবা বাঁ পাশে বাবার গা ঘেঁষে বসে ছিল। আর আদিলা ছিল বাবার কোলে। বাড়ির পথে আধঘণ্টা যেতেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা।
ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের সামনে লরি থেকে ছিটকে পড়া একটি কনটেইনার বক্করদের পরিবহনকারী প্রাইভেট কারটিকে চাপা দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, শুরুতে তাঁরা ভেবেছিলেন চালকসহ গাড়ির পাঁচ আরোহীর সবাই মারা গেছেন।
কিন্তু, হঠাৎ-ই গাড়ি থেকে আদিবা বের হয়ে আসে। স্থানীয় লোকজন আদিবাকে কাছে নিয়ে অভয় দেন। তাঁরা কান্নারত মেয়েটিকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা তখন কনটেইনারের নিচের প্রাইভেট কারে আটকা পড়া চারজনকে নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। এই চারজন হলেন আবু বক্কর, তাঁর শ্বশুর মুসা আহাম্মেদ, মেয়ে আদিলা ও গাড়িচালক। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। কেউ কেউ নিজেদের মতো করে বিভিন্ন সংস্থার দ্বারস্থও হন। দুই ঘণ্টা পর হাইওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের প্রচেষ্টায় চারজনই জীবিত উদ্ধার হন।
উদ্ধারের পর বক্কর ও মুসাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বক্কর বুকে ও ঘাড়ে আঘাত পেয়েছেন। আর মুসা আঘাত পেয়েছেন পায়ে ও বুকে। আজ রোববার দুপুরে হাসপাতাল থেকে রিলিজ পেয়ে গ্রামে ফিরে গেছেন আবু বক্কর। তবে তার শ্বশুর মুসা এখনো চিকিৎসাধীন।
আবু বক্করের ছোট ভাই মোহাম্মদ হাসান বলেন, দুপুরে রিলিজ পাওয়ার পর ভাইয়া দুই মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বড় ভাইয়ের শ্বশুরও মোটামুটি সুস্থ। ডাক্তার বলেছেন- উনাকে কাল রিলিজ দিবেন।
আবু বক্কর ১৮ বছর ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে থাকেন। দুর্ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আবু বক্কর বলেন, কী হয়েছে বুঝতে পারিনি। দুর্ঘটনার পরপর দেখি গাড়ির বাঁ দিকের দরজাটি খুলে যায়। আমার মেয়েটি (আদিবা) বের হয়ে যেতে সক্ষম হয়। আমার বাঁ পা আটকে যায় সামনের আসনের নিচে। কোলে মানে ঊরুর ফাঁকে তখন ছোট্ট আদিলা।
খুব ভয়ের মধ্যে ছিলাম, গাড়ির ভেতর থেকে বের হতে পারবো কি না? কারণ গাড়ির ছাদ যদি এক-দুই ইঞ্চি দেবে যায়, তাহলে শেষ। এরমধ্যে আমার কোলে ছোট মেয়েটি কান্না করছিল। নিজে ভয়ে থাকলেও, তাকে অভয় দিয়েছি।
উদ্ধারের সময় আদিলাকে আগে উদ্ধার করা হয়। এরপর বাঁ পা আটকে যাওয়া বক্করকে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া প্রাইভেট কার থেকে বের করে আনা হয়। একে একে এরপর বের করা হয় শ্বশুর মুসা ও গাড়িচালককে।