ফার্মগেট মোড়ে ফুটওভার ব্রিজ চালু হবে কবে?
গত রবিবার দুপুরে ফার্মগেট গোলচত্বরের রাস্তার ডিভাইডার টপকে পারাপার হচ্ছিলেন শাহিদা বেগমসহ বেশ কয়েকজন। রাস্তার পূর্ব দিকের চলমান গাড়ি থামিয়ে রাস্তার ডিভাইডারে এসে ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন কিছুক্ষণ; পরে দুইজনের সহায়তায় ডিভাইডারের রেলিং টপকে পার হন শাহিদা।
শাহিদা বেগম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এতোদূর গিয়ে ফুটওভার ব্রিজ পারাপার হয়ে গাড়িতে উঠতে আবার এখানেই আসতে হবে তাই একটু কষ্ট হলেও রেলিং পারাপার হয়ে এসেছি। গোলচত্বরের ফুটওভার ব্রিজটি চালু হলে তো আর এ ঝুঁকি নিতাম না।"
ফার্মগেট পুলিশ বক্সের সামনে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশনা না মেনেই শিক্ষার্থী, পথচারীরা বিশৃঙ্খলভাবে রাস্তা পারাপার হচ্ছে। যার ফলে ফার্মগেট এলাকায় অধিকাংশ সময়ই যানজট লেগে থাকে। লোকজন পারাপার হওয়ায় প্রতিবন্ধকতা তৈরী হয় যান চলাচলে। মাঝে মাঝে ছোট-বড় দুর্ঘটনাও ঘটছে।
রাস্তার চলন্ত গাড়ি থামিয়ে পারাপার হওয়া হলিক্রস গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষার্থী রুকাইয়া আক্তার টিবিএসকে বলেন, "যখন ফুটওভার ব্রিজ ছিল তখন ব্রিজ নিয়েই পারাপার হতাম কিন্তু এখন নতুন ব্রিজটি চালু না হওয়ায় আমাদের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়। অনেক সময় সিগনালের জন্য অপেক্ষা না করে কয়েকজন মিলে হাত তুলে গাড়ি থামিয়ে রাস্তা পার হই। গত সপ্তাহে এভাবে দৌড়ে পার হতে গিয়ে আমার এক বন্ধু হাতে ব্যথা পেয়েছে। আমরা চাই দ্রুত ফুটওভার ব্রিজটি চালু করা হোক।"
ফার্মগেট গোলচত্বরের এ চিত্র প্রতিদিনের। প্রায় দেড় বছর ধরে ফার্মগেটের ফুটওভার ব্রিজটি না থাকায় এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয় পথচারীদের।
রাজধানীর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের জন্য দেশের প্রথম ফুটওভার ব্রিজ-ফার্মগেটের ফুটওভার ব্রিজটি ভেঙ্গে ফেলা হয়। ফলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষই এ ব্রিজটি নতুন করে নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য দায়িত্ব নেয়। ইতিমধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলেও ফার্মগেটের ফুটওভার ব্রিজটি চালু হয়নি।
ফার্মগেটের ফুটওভার ব্রিজটির কাজ প্রায় ৩ মাস আগে শেষ হলেও তা এখনও নগরবাসীর ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বলছে, অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে ফুটওভার ব্রিজটি খুলে দেওয়া হবে।
গত ৯ মার্চ ফার্মগেট মোড়েই এলাইক পরিবহনের একটি বাসচাপায় ফাতেমা কাশেম ওয়াফা নামে একজন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক গুরুতর আহত হন। বাসটি তাকে ধাক্কা দিয়ে পা পিষে চলে যায়। এতে তার কোমর ও পায়ের হাড় ভেঙে যায়।
রবিবার সরেজমিনে ফার্মগেট এলাকায় দেখা যায়, নতুন করে তৈরী করা ফুটওভার ব্রিজটির দুই পাশের ল্যান্ডিং স্থানগুলো টিনের প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। ফলে ফুটওভার ব্রিজটি ব্যবহার করতে না পেরে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার করে পথচারীরা। যদিও গোলচত্বর থেকে কিছু দূরে দুই প্রান্তে দুটি ফুটওভার ব্রিজ স্থাপন করা আছে, যা সবাই ব্যবহার করছে না। নগরবাসীর দাবি, আনন্দ সিনেমা হল এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) সংলগ্ন যে দুটি ফুটওভার ব্রিজ আছে তা পার হয়ে আবার রাস্তা পারাপার হতে হয় তাই অধিকাংশ পথচারী সরাসরিই রাস্তা পারাপার হয়।
ফার্মগেট গোলচত্বরের দোকানি সুমন মিয়া টিবিএসকে বলেন, "কয়েকমাস ধরেই ব্রিজটির সিঁড়ি এলাকা ঘিরে রাখা হয়েছে এবং কোনও কাজও হচ্ছে না। যদি কাজ শেষ হয়ে থাকে তবে মানুষের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হোক।"
গত বছরের মে মাসে ফার্মগেটের ফুটওভার ব্রিজের কাজ শুরু হয়। প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকাতে প্রথমবারের মতো এতো সুপ্রশস্ত ফুটওভার ব্রিজটি নির্মিত হয়। কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত সময় নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কনফিডেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার। এ ফ্লাইওভারে পথচারীদের চলাচলের সুবিধার জন্য দুই প্রান্তে স্কেলেটর ও লিফট বসানোর কথা রয়েছে। যদিও প্রাথমিকভাবে শুধু সিঁড়ি স্থাপন হয়েছে।
এ ব্রিজটির হাঁটার পথ প্রায় ১৮ ফুট চওড়া। রয়েছে ৬টি পকেট, যেখানে দাঁড়িয়ে মানুষ শহরকে উপভোগ করতে পারবে। যা হাঁটার পথে বাধা সৃষ্টি করবে না। এ ব্রিজটির নকশা করা হয়েছে জাতীয় সংসদ ভবনের আদলে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ট্রাফিক অবকাঠামো উন্নয়ন ও সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পের পরিচালক মো. ফরহাদ বলেন, "এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ ফুটওভার ব্রিজটি নির্মাণ করছে। তারা আমাদের কাছে কিছু নির্দেশনা চেয়েছে এবং আমরাও দিয়েছি।"
"ফার্মগেট একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এবং আমরা শীঘ্রই ফুটওভার ব্রিজ চালুর বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলব।"
তবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এএইচএমএস আখতার বলেন, "আমরা ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণে অর্থায়ন করেছি, তবে নির্মাণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশন ও ঠিকাদারদের।"
"জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য কবে খুলে দেওয়া হবে তা বলতে পারছি না। সেতু নির্মাণের দায়িত্ব আমাদের নয়।"
কনফিডেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের অ্যাসিসট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, "আমাদের তিন মাস আগেই মূল ব্রিজটির কাজ শেষ হয়েছে এবং তখনই আমরা জনগণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন থেকে ব্রিজের নিচের অন্যান্য সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ শেষ করে খুলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে তাই একটু বিলম্ব হচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, "এ ব্রিজটির কাজের মেয়াদ চলতি মাসের প্রথম দিকে শেষ হলেও আমরা অক্টোবরের মাঝামাঝিতে বাকি কাজ শেষ করে খুলে দিতে পারবো। এখন ব্রিজের নিচের রোড ডিভাইডার ও ফুটপাতের কাজ চলমান আছে।"
মে মাসে শুরু হওয়া কাজ সময় বাড়িয়েও শেষ করতে পারেনি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "এখানে কাজ করতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। বিশেষ করে মাটির নিচের বিভিন্ন সংযোগ লাইনের কারণে সময় লেগেছে। এছাড়া ব্রিজটির নকশা নিয়েও বেশ কিছু সংশোধন করায় কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।"