সাভারে কাজ বন্ধ রেখে তিন পোশাক কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ
সাভারের হেমায়েতপুরে দাবি আদায়ের জন্য কাজ বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন এবং বিক্ষোভ করছেন দুই পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।
আজ শনিবার (২ নভেম্বর) সকাল থেকে সাভারের হেমায়েতপুরের তেতুলঝোড়া এলাকায় অবস্থিত ভার্টেক্স গ্রুপ এবং স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে এই কর্মবিরতি পালন ও বিক্ষোভ করছেন।
ভার্টেক্স গ্রুপের নিও ফ্যাশন লিমিটেড-এর শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কারখানার অভ্যন্তরে একটি কন্টেইনারবাহী লরির চাপায় পায়ে গুরুতর আঘাত পান কারখানার একজন নারী শ্রমিক। কিন্তু কারখানা অভ্যন্তরে ওই নারী শ্রমিক আহত হলেও তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিতে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেয়নি কারখানা কর্তৃপক্ষ। আহত অবস্থায় তাকে একটি পিকআপ ভ্যানে করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই নারী শ্রমিক এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পরবর্তীতে, আজ সকালে কারখানার শ্রমিকরা ওই নারী শ্রমিকের ভরণপোষণসহ তাকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং তার যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণের দাবিতে কাজ বন্ধ করে কারখানার অভ্যন্তরে বিক্ষোভ শুরু করেন।
এক পর্যায়ে শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে কর্তৃপক্ষ আজকের জন্য কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন। তবে, শ্রমিকরা বাসায় না গিয়ে কারখানার ভেতরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন।
শ্রমিকরা জানান, এর বাইরেও কারখানার শ্রমিকদের আরও বেশ কিছু দাবি দাওয়া আছে। এছাড়াও, অতিরিক্ত ডিউটি বন্ধ করা, ছুটির বিপরীতে জেনারেল ডিউটি না করানোসহ আরও বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়েছেন তারা।
তবে কারখানার শ্রমিকদের সবগুলো দাবি সম্পর্কে জানা যায়নি।
অন্যদিকে, কয়েকজন স্টাফকে চাকুরিচ্যুত করার দাবিতে কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ করছেন সাভারের হেমায়েতপুর এলাকায় অবস্থিত স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের দুই কারখানা দ্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ারস ওভেন লিমিটেড এবং দ্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ারস ওয়াশ লিমিটেডের শ্রমিকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের একজন কর্মকর্তা বলেন, "গত কয়েকদিন আগে বেশ কিছু দাবিতে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে আন্দোলন শুরু করলে আলোচনার পর কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবিগুলো মেনে নেয়। শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষ কারখানার কয়েকজন স্টাফকে চাকুরিচ্যুত করার সিদ্ধান্তও নেয়। কিন্তু শ্রমিকরা এখন দাবি করছে, তারা কর্মকর্তার বদলে সরাসরি মালিকের কাছ থেকে সেসব স্টাফদের চাকুরিচ্যুত করার ঘোষণা চান। এই দাবিতে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে রেখেছেন।"
এর আগে বিভিন্ন দাবিতে কারখানা শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করলে গত ৩০ অক্টোবর থেকে কর্তৃপক্ষ এই দুটি কারখানা বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। এই ধারা অনুযায়ী, কোন প্রতিষ্ঠানের কোন শাখা বা বিভাগে বেআইনি ধর্মঘটের কারণে মালিক উক্ত শাখা বা প্রতিষ্ঠান আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারবেন এবং এরূপ বন্ধের ক্ষেত্রে ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকরা কোন মজুরি পাবেন না।
পরবর্তীতে ৩১ অক্টোবর শ্রমিক ও মালিকপক্ষের এক সমঝোতা বৈঠকের পর ১ নভেম্বর থেকে কারখানা দুটি খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে আজ আবারও শ্রমিকরা কারখানা দুটিতে কাজ বন্ধ করে কর্মবিরতি পালন করছেন।
কারখানা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবির মধ্যে রয়েছে: নাইট বিল বৃদ্ধি, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, অর্জিত ছুটির টাকা নগদায়ন ইত্যাদি। এর মধ্যে কর্তৃপক্ষ ২২টি দাবি মেনে নিয়ে নোটিশ দিয়েছিল।