ডেঙ্গুর টিকা সংগ্রহের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক
মারাত্মক রূপ নিয়েছে দেশে ডেঙ্গুর বিস্তার। এরমধ্যে আশার আলো হিসেবে দেখা হচ্ছে কিউডেঙ্গা-কে। ডেঙ্গুর এই টিকাটি তৈরি করেছে জাপানের ওষুধপ্রস্তুতকারক তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি।
গত ২ অক্টোবর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও বা হু) ডেঙ্গু প্রতিরোধে এই টিকা ব্যবহারের পরামর্শ দেয়। বর্তমানে বাংলাদেশ এটি সংগ্রহের চেষ্টা করছে বলে নিশ্চিত করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাথে আলাপকালে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, "স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এর আগে বলেছিল, ডব্লিউএইচও কোনো টিকাকে অনুমোদন দেয়নি, এজন্য তাদের পরিকল্পনার অভাব ছিল। কিন্তু, সাম্প্রতিক সময়ে তাকেদার তৈরি ভ্যাকসিন ডব্লিউএইচও'র অনুমোদন পাওয়ায়, এখন এটা তাদের যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশের বাজারের জন্য আমদানি করতে হবে।"
দ্রুত আমদানির তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, টিকা 'ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে রোগের তীব্রতা ও মৃত্যুহার– দুইই কমাবে।"
জেনেভায় এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ডব্লিউএইচও'র মহাপরিচালক তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস– 'যেসব এলাকায় ডেঙ্গুর উচ্চ প্রাদুর্ভাব রয়েছে, এবং রোগীর সংখ্যা বেশি' সেখানে বসবাসকারী ৬ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশুদের ওপর কিউডেঙ্গা টিকা ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
এবিষয়ে ডা. জাহিদুর বলেন, 'আমাদের দেশেও এই বয়সের (৬ - ১৬) জনসংখ্যার মধ্যে মৃত্যুহার বেশি। তাছাড়া, শিশুরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে এই ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। তাই ডেঙ্গুতে শিশুমৃত্যু ঠেকাতে এই টিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।'
ডা. জাহিদুর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ডেন-২ ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কিউডেঙ্গা টিকা কার্যকর প্রমাণিত হয়, এটি মাত্র দুই ডোজ নিতে হয় রোগীকে। ফলে ডেঙ্গু চিকিৎসার বর্তমান উপায়গুলোর চেয়ে এটি অনেক সাশ্রয়ী হবে।
টিকার দামের বিষয়ে তিনি বলেন, সব টিকাই সরকারকে বিনামূল্যে দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
'সরকার যদি আমদানির অনুমতি দেয়, তাহলে দেশবাসী নিজ সন্তানদের জন্য এই টিকা কিনতে পারবে'- মন্তব্য করে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ইতোমধ্যেই অভিভাবকরা শিশু চিকিৎসকদের চেম্বার থেকে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও রোটাভাইরাসের টিকা কিনছে।
'ডেঙ্গু প্রতিরোধে শুধু মশা মারলেই হবে না, ভ্যাকসিনেশনও জরুরি। বর্তমানে বাজারে দুটি টিকা আসায়, বাংলাদেশকে যথাযথ পরিকল্পনা নিতে হবে'- ডা. জাহিদুর বলছিলেন।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকাশিত তথ্যমতে, এপর্যন্ত ৬ - ১৬ বছর বয়সী প্রায় ২৫ হাজার ৭৫৬ জনের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।
এর আগে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন এবং সোসাইটি অব ভাইরোলজিস্ট- এর গবেষণায় বাংলাদেশে ডেঙ্গুর রোগ বাড়তে থাকার চিত্র উঠে আসে। বিশেষত, ডেন-২ ধরনের বিস্তারই বেশি হচ্ছে।
চলতি বছরেই দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে ১০০৬ জনে পৌঁছেছে। এতে অজস্র পরিবারের স্বজন হারানোর হৃদয়বিদারক দৃশ্যই ফুটে ওঠে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এপর্যন্ত ২ লাখ ৬ হাজার ২৮৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে। আরোগ্য লাভ করেছেন ১ লাখ ৯৫ হাজার ৯২৫ জন।
দেশে চলমান ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের মধ্যে গেল সেপ্টেম্বর মাসেই সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এই মাসে ৩৯৬ জনের মৃতয় হয়। আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৯ হাজার ৫৯৮ জন।