কাকরাইলের পর বিজয়নগর, শান্তিনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ
রাজধানীর কাকরাইলের পর এবার বিজয়নগর, নয়াপল্টন, মালিবাগ, রাজারবাগ এলাকায় পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে।
শনিবার (২৮ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটার দিকে বিজয়নগরে পানির ট্যাংক এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। অন্যদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।
জানা গেছে, শনিবার সকালে বিজয়নগরে ১২ দলীয় জোট এবং গণ অধিকার পরিষদের সমাবেশের পরই বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়।
কাকরাইল, বিজয়নগরের পর পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ শান্তিনগর মোড়েও ছড়িয়েছে। সংঘর্ষে শান্তিনগর মোড়ে একটি পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে শনিবার দুপুরে রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া মৎস্যভবন এলাকায় শিল্পকলা একাডেমির সামনে ট্রাকে আগুন দেওয়া হয়েছে।
এর আগে কাকরাইলে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। কয়েকদফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর কাকরাইল মোড় খালি করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। বিজিবির কয়েকটি গাড়িকেও সেখানে টহল দিতে দেখা গেছে।
প্রথমে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মগবাজারের দিক থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পিকআপে গুলিস্তানের দিকে যাচ্ছিলেন। কিন্তু কাকরাইল থেকে আরামবাগ মোড় পর্যন্ত রাস্তাটিতে আগে থেকেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা অবস্থান করছিলেন। ফলে পিকআপটি গুলিস্তানের দিকে যেতে পারেনি।
এ সময়ই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। দুই পক্ষের অনেকের হাতে লাঠিসোঁটা দেখা যায়। বেশ কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। এসময় গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের গাড়িবহরেও হামলা হয়।
পরে পুলিশ ছত্রভঙ্গ করতে চাইলে উল্টো দিক থেকে ইটপাটকেল ছুড়ে মারতে থাকে বিএনপি নেতাকর্মীরা। অনেকে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ঢুকে পড়ে এবং সড়কে, পুলিশ বক্সে ও অডিট ভবনে অগ্নি সংযোগ করে।
পুলিশ জলকামান দিয়ে আগুন নেভায় এবং কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে মারে। পুলিশের তৎপরতার জবাবে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির কাছে মিন্টো রোডে পুলিশকে তাদের ধাওয়া দেয় বিএনপি কর্মীরা।
পরে বিক্ষুব্ধ বিএনপি সমর্থকরা কাকরাইল ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় ভাংচুর করে।
ইতোমধ্যে কাকরাইল মোড়ে পুলিশের অত্যাধুনিক সব সাজোঁয়া যান নিয়ে আসা হয়েছে।
রাজধানীর রমনা পার্কের কাছে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে এ ঘটনাটি ঘটে। ফলে নিরাপত্তার স্বার্থে প্রধান বিচারপতির বাড়ির সামনে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এ এলাকাটি বিএনপির আজকের র্যালির শেষ পয়েন্টের কাছাকাছি। অন্যদিকে, বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশস্থলে পৌঁছানোর জন্য আওয়ামী লীগের সদস্যরাও এই রাস্তা ব্যবহার করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সংঘর্ষের সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলকেই লাঠি হাতে ভাঙচুর করতে দেখা যায়। এতে ক্ষতগ্রস্ত হয় একাধিক যানবাহন।
অডিট ভবনের নিরাপত্তারক্ষী হুমায়ুন কবির টিবিএসকে জানান, দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটের দিকে কিছু লোক অডিট ভবনের পকেট গেটের দিকে ইট ছুড়ে মারে এবং ভাঙচুর চালায়।
এছাড়া, আইডিইবি ভবনের ভেতরেও দুটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে রমনা পুলিশ জোনের সহকারী কমিশনার মুহাম্মদ সালমান ফারসি টিবিএসকে বলেন, "বারবার অনুরোধ করার পরও বিএনপির লোকজন কাকরাইল মসজিদ মোড় খালি করেনি। তারা দুর্ব্যবহার করেছে, পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছে পরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। আমাদের প্রতিক্রিয়া দেখাতেই হতো।"
আজ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় একাধিক রাজনৈতিক দলের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরমধ্যে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দুপুর ২টায় শুরু হয় বিএনপির মহাসমাবেশ; অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে।