বেইলি রোডে আগুন: পড়ার খরচ জোগাতে ঢাকায় এসেছিলেন নাঈম, ফিরলেন লাশ হয়ে
'আমার বাবারে (নাঈমকে) আমার কাছে আইনা দ্যাও, আমি আর এক মিনিট আমার বাবার সাথে কথা কইমু।'
একমাত্র ছেলে নাঈমকে হারিয়ে এভাবেই আহাজারি করছিলেন বাবা নান্টু মিয়া। তার আহাজারিতে যেন ভারি হয়ে উঠেছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট প্রাঙ্গন।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের একটি বহুতল ভবনে আগুনে নিহতদের মধ্যে নাঈম আহমেদও (২২) রয়েছেন। তার বাবা নান্টু মিয়া পেশায় দিনমজুর। বাড়ি বরগুনার বড় গৌরিচেনা গ্রামে। ছেলেকে হারিয়ে তিনি এখন পাগলপ্রায়। সকালেই বরগুনা থেকে ঢাকায় এসেছেন তিনি।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের কাছে বিলাপ করছিলেন নান্টু মিয়া। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ''আমার বাবা (নাঈম) রাত সাড়ে ৯টায় সময় ফোন করছিল। ও বলছিল, 'বাবা, মার্কেটে আগুন লাগছে। আমরা আটকা পড়ছি, আমাকে উদ্ধার করো।''
নান্টু মিয়া জানান, নাঈম সে সময় তাকে জানিয়েছিলেন যে তিনি ভবনের সাত তলার ছাদে আটকা পড়েছেন। তিনি ফোনে নাঈমকে নিচে নামতে নিষেধ করে ছাদের ওপরই থাকতে বলেন। তখনই ফোনটি কেটে যায়। এর পর সারারাত ফোন করলেও নাঈমের ফোনে কল ঢোকেনি।
কথাগুলো বলতে বলতেই আবারও হাউমাউ করে কান্না করে দেন নান্টু মিয়া। বলেন, '…আমি আমার বাবার সাথে আরেকবার, আরেকটা মিনিট কথা কইতে চাই…।'
দুই ভাই-বোনের মধ্যে নাঈম বড়। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির খরচ জোগাতে।
বাবা নান্টু মিয়া বলেন, 'আমার ছেলে ইন্টার পরীক্ষা দিয়ে অনার্সে ভর্তি হতে চেয়েছিল। আমাকে বলেছিল, বাবা তুমি তো খরচ চালাতে পারবা না। আমি ঢাকায় গিয়ে কাজ করে যে টাকা পাব, সেটা দিয়েই ভর্তি হয়ে যাব। তাহলে তোমার আর কষ্ট হবে না।'
নাঈমের চাচাত ভাই আরিফ বলেন, 'ঢাকায় এসে নাঈম গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে একটি এটিএম বুথের নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করছিল। সেখান থেকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের আগুন লাগা ওই ভবনের নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ নেয়।'
রাজধানীর বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৬ জন মারা গেছেন। হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় এখন ১২ জন ভর্তি রয়েছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা সামন্তলাল সেন বলেছেন, বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই কার্বন মনোক্সাইড পয়জনে মারা গেছেন। আগুন লাগলে বদ্ধ ঘরে যখন কেউ বের হতে না পারে, তখন সেখানে সৃষ্ট ধোঁয়া তাদের শ্বাসনালীতে চলে যায়। এখানেও তাই হয়েছে।
শুক্রবার (১ মার্চ) সকাল পৌনে ১১টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'এই পয়জন যাদের বেশি হয়েছে তারা কেউ বাঁচতে পারেনি। এখনো যারা চিকিৎসাধীন আছেন তারা কেউ শঙ্কামুক্ত না। আমরা শুরু থেকেই তাদের ট্রিটমেন্ট করছি।'
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো আটটি লাশ হস্তান্তরের জন্য বাকি রয়েছে। এর মধ্যে যেগুলো এখনো শনাক্ত করা যায়নি, সেগুলো আমাদের প্রচলিত পদ্ধতি অনুযায়ী ব্যবস্থা করা হবে। ডিএনএ টেস্ট করা হবে।