গাজীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: 'নিয়তি সবসময় গরিবদের উপহাস করে'
"আপনি যদি পারেন দয়া করে একবার হাসপাতালে আসুন। আপনি আমার ছেলে ইয়াসিনকে আর দেখতে পারবেন না। ডাক্তাররা আমাকে ইতোমধ্যেই বলেছে যে, ওর বাঁচার সম্ভাবনা খুব কম। আপনি যদি ওকে জীবিত দেখতে চান তাহলে অনুগ্রহ করে আসুন। ও মারা যাওয়ার আগে দেখুন," শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের বাইরে ফোন করে বোনকে এমনটাই বলছিলেন আয়েশা খাতুন।
গতকাল (বুধবার) তাকওয়া পরিবহনের বাসের হেলপার ইয়াসিন আরাফাত (২১) ইফতার করতে গাজীপুরে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। তখন তিনি কোনাবাড়িতে টপ স্টার গার্মেন্টসের পাশের বস্তিতে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মারাত্মকভাবে আহত হন। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় তাকে শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়।
আয়েশা খাতুন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমি ওকে আইসিইউ-এর মধ্যে দেখেছি। ওর সারা শরীরে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। এমনকি আমি ওকে প্রথম দেখায় চিনতে পারিনি; যাকে আমি জন্ম দিয়েছি।"
"আমার ছেলেকে দেখলে বুঝতে পারবেন ও কী কষ্ট সহ্য করছে। ওর শরীরের ৮০ ভাগ জায়গা পুড়ে গেছে। এখন শ্বাস নিতেও পারছে না," বিলাপ করতে করতে যোগ করেন আয়েশা।
আয়েশা আরও বলেন, "মাত্র ২৪ দিন আগে ও বাবা হয়েছে। আল্লাহর কাছে বলি আমার নাতির মুখের দিকে তাকিয়ে আমার ছেলের জীবনটা ভিক্ষা চাই।"
ইয়াসিনের মা আরও বলেন "আমার ছেলে রোজা রেখেছিলেন। কিন্তু ইফতার করতে পারেননি। নিয়তি সবসময় গরিবদের উপহাস করে।"
আয়েশা একা নন। গাজীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আহতদের পরিবারের সদস্যরা এখন শোকে আছন্ন।
বিস্ফোরণে কমপক্ষে ৩২ জন আহত হয়েছে। যার মধ্যে ১৬ জনের দেহের ৮০ ভাগ পুড়ে গেছে।
বার্ন ইনস্টিটিউটে চার বছর বয়সী জান্নাতি তার বাবার জন্য অপেক্ষা করছে। তার বাবা মাছ বিক্রেতা জহুরুল ইসলাম (৪০) ঐ আগুনে গুরুতর দগ্ধ হয়েছে। তার স্ত্রী গার্মেন্টস কর্মী দুলু তিন মেয়েকে নিয়ে সেখানে স্বামীকে বাঁচানোর লড়াই করছেন।
জহুরুল ইসলামের ভাগ্নে নাজমুল রানা টিবিএসকে বলেন, "আমার মামার শরীরের নিচের অংশে কোমর থেকে পা পর্যন্ত ৬০ ভাগ পুড়ে গেছে। তার অবস্থা এখনও সংকটজনক হওয়ায় তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।"