আদালত যেটা বলবেন, আমাকে সেটা মানতে হবে: বুয়েট উপাচার্য
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের পর বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেছেন, 'আদালত যেটা বলবেন, আমাকে সেটা মানতে হবে। আদালতের আদেশ শিরোধার্য। আমরা আদালত অবমাননা করতে পারব না।'
আজ সোমবার (১ এপ্রিল) দুপুরে বুয়েট ক্যাম্পাসে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
বুয়েট উপাচার্য বলেন, 'আদালত যা বলবেন, আমরা সেটা মানতে বাধ্য। আদালত আমাদের যে নির্দেশনা দেবেন, আমরা সেই নির্দেশনা মেনে চলব।'
আদালতের আদেশের পর বুয়েটের পদক্ষেপ কী হবে, জানতে চাইলে উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, 'এ বিষয়ে আমাদের আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আদালতকে তো আমরা ভায়োলেট (আদেশ লঙ্ঘন) করতে পারব না। আমাদের আদালতের নিয়মে চলতে হবে। আইন ও নিয়ম অনুযায়ী আমাদের এগোতে হবে।'
এক প্রশ্নের জবাবে বুয়েট উপাচার্য বলেন, 'রাজনীতির পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রশাসন সবাই মিলে একটা রূপান্তর করতে হবে। কীভাবে সেটা করা যায়, তা আলোচনার মাধ্যমে বের করতে হবে।'
উপাচার্য জানান, সব পক্ষের মতামত নিয়েই একটা কিছু করতে পারবেন তারা। তিনি একা কিছু করলে, তা বাস্তবায়ন করা যাবে না। সেটা সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হতে হবে, অর্ডিন্যান্সে যুক্ত হতে হবে। রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের অনুমোদন নিতে হবে। তা না হলে এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্সে ঢুকবে না। তাদের সীমাবদ্ধতা আছে। বিশ্ববিদ্যালয় তার নিয়মে চলে। কিন্তু আদালতের আদেশ শিরোধার্য।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর বুয়েট কর্তৃপক্ষের দেওয়া 'জরুরি বিজ্ঞপ্তির' বৈধতা নিয়ে পুরকৌশল বিভাগের ছাত্র ইমতিয়াজ রাব্বি আজ (১ এপ্রিল) হাইকোর্টে রিট করেন। তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এম হারুনুর রশীদ খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।
হাইকোর্টের আদেশের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, 'আদালত রুল দিয়ে জরুরি বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করে দিয়েছেন। ফলে বুয়েটে এখন থেকে ছাত্ররাজনীতি করায় আর কোনো বাধা থাকল না।'
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে শেরেবাংলা হলে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় আদালত ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। আবরার ফাহাদ হত্যার পর বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
এদিকে গত ২৭ মার্চ মধ্যরাতে ছাত্রলীগের সভাপতির নেতৃত্বে কিছু নেতাকর্মী বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েন বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাসহ সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বুয়েটের হল থেকে ইমতিয়াজের সিট বাতিল করে দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
অপরদিকে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চালু করতে রোববার (৩১ মার্চ) শহিদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশ করে ছাত্রলীগ।