কমানোর সাড়ে ৩ মাসের মাথায় বাড়লো কার্ডিয়াক স্টেন্টের দাম
গত বছরের ডিসেম্বরে কার্ডিয়াক স্টেন্টের দাম কমিয়ে হৃদরোগীদের যে স্বস্তির খবর দিয়েছিল ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ), তা বাস্তবায়িত হয়নি। উল্টো মাত্র সাড়ে তিন মাসের ব্যবধানে গতকাল (২ এপ্রিল) কার্ডিয়াক স্টেন্টের দাম বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন করে হার্টের রিংয়ের দাম নির্ধারণ করায় রিং ভেদে দাম বেড়েছে ২,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত।
ইউরোপীয় আমদানিকারকেরা রিং সরবরাহ বন্ধ রাখায় বাজারে সংকট তৈরি হয়েছিল বলে দাম কিছুটা বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজেসের পরিচালক ও ডিজিডিএ'র বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য ডা. মীর জামাল উদ্দিন।
তিনি বলেন, "গত বছরের ডিসেম্বরে হার্ট রিংয়ের দাম কমানো হলে ইউরোপিয়ান রিং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আদালতের দারস্থ হয়েছিল। রিটের মিমাংসা হওয়ার পরে তাদের প্যারেন্ট কোম্পানির প্রতিনিধিদের নিয়ে আমরা বসেছিলাম। ওই দামে রিং বিক্রি করলে তাদের ক্ষতি হচ্ছে বলে তারা জানিয়েছে। তাদের পক্ষে ওই দামে রিং সরবরাহ করা সম্ভব নয়।"
দাম পুনর্নিধারণের বিষয়ে ডিজিডিএর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ জানুয়ারি রিট প্রত্যাহার করে নেয় ইউরোপীয় স্টেন্ট আমদানিকারকেরা।
বাজারে ৫০ শতাংশ রিং সরবরাহ করে ইউরোপিয়ান আমদানিকারক আর বাকি ৫০ শতাংশ আমেরিকান আমদানিকারকেরা।
"দাম না বাড়ানোয় তারা ধর্মঘট ডাকলে বাজারে সংকট তৈরি হয়েছিল। শুধু আমেরিকান রিং দিয়ে রোগীদের সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এজন্য অল্প পরিমাণে দাম বাড়ানো হয়েছে," যোগ করেন ডা. মীর জামাল উদ্দিন।
গতকাল ইউরোপীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ২৩ ধরনের হার্টের রিংয়ের দাম নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে ডিজিডিএ।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, হার্টের রিংয়ের মূল্য হ্রাসে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ডিজিডিএ নতুন নির্ধারিত দামের সঙ্গে ২০২১ ও ২০২২ সালের রিংয়ের দামের তুলনা করেছে। সে হিসেবে রিংয়ের দাম কমেছে। তবে সেখানে ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বরে নির্ধারণ করা দামের উল্লেখ নেই।
এর আগে, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর ২৭টি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ৪৪ ধরনের হার্টের রিংয়ের দাম কমায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। একই বছর ১৬ ডিসেম্বর থেকে হার্টের রিংয়ের ওই নতুন দাম কার্যকর করার কথা থাকলেও সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দিন থেকেই ইউরোপীয় স্টেন্ট আমদানিকারকরা দাম পুনর্নিধারণের দাবি জানিয়ে হাসপাতালগুলোকে তাদের রিং ব্যবহার না করার জন্য চিঠি দেয়।
পরে দাম পুনর্নিধারণের দাবিতে হাইকোর্টে রিটও করে ইউরোপীয় আমদানিকারকেরা।
এরপরেও গত ২৭ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যসচিব জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে এক বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত দামেই হার্টের রিং বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হয়। যদিও সে সিদ্ধান্তে অটল থাকলোনা সরকার।
২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ডিজিডিএ অ্যালেক্স প্লাস স্টেন্টের দাম নির্ধারণ করেছিল ৫৩,০০০ টাকা। সাড়ে তিন মাস পর ২ এপ্রিল সেই স্টেন্টের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ হাজার টাকা।
ডিসেম্বরে আলটিমাস্টার টেনসেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬০,০০০ টাকা, নতুন করে সেই স্টেন্টের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৬,০০০ টাকা। ৫৫,০০০ টাকার ডিরেক্ট স্টেন্ট সিরোর নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৬,০০০ টাকা।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ড. মোহাম্মদ ইউসুফ সাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে মঙ্গলবার বলা হয়, বাংলাদেশে ইউরোপীয় এবং অন্যান্য দেশের হার্টের রিংয়ের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি/প্রিন্সিপাল স্থানীয় প্রতিনিধি এবং ইন্টারভেনশন কার্ডিওলজিস্টদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির হার্টের রিংয়ের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সালাউদ্দিন বলেন, হৃদরোগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, হৃদরোগ চিকিৎসক ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে রিংয়ের দাম সমন্বয় হয়েছে।
"সব হাসপাতালে রিংয়ের দামের তালিকা টানিয়ে দিতে বলা হয়েছে, যাতে রোগী ও স্বজনরা নতুন দাম সম্পর্কে জানতে পারেন। ২০২১ সালে যে দাম ছিল তার চেয়ে দাম এখন অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।"
এদিকে, হার্টের রিংয়ের দাম বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "কার্ডিওলজিস্ট ও আমদানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা করেই হার্টের রিংয়ের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছি। ওষুধ কিংবা মেডিকেল ডিভাইসের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।"