হার্টের রিংয়ের দাম পুননির্ধারণের দাবি আমদানিকারকদের, ভোগান্তিতে রোগীরা
সম্প্রতি হার্টের রিংয়ের (করোনারি স্টেন্ট) দাম ৪০ শতাংশের বেশি কমিয়ে হৃদরোগীদের বড় সুখবর দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ)। তবে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দিন থেকেই ইউরোপীয় স্টেন্ট আমদানিকারকরা দাম পুনর্নিধারণের দাবি জানিয়ে হাসপাতালগুলোকে তাদের রিং ব্যবহার না করার জন্য চিঠি দিয়েছে। ফলে রোববার হাসপাতালগুলোতে শুধু আমেরিকান আমদানিকারক কোম্পানিগুলোর রিং ব্যবহার করা হয়েছে, যার দাম তুলনামূলক বেশি। এতে করে বিপাকে পড়েছেন রোগীরা।
এমনকি, আমেরিকান আমদানিকারকদের কাছে সঠিক সাইজের স্টেন্ট না পাওয়ায় রিং না পরিয়ে রোগীকে হাসপাতাল থেকে ফেরত পাঠানোর মতো ঘটনাও ঘটেছে।
গত ১২ ডিসেম্বর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর হার্টের রিংয়ের দাম কমানোর ঘোষণা দেয়, যা কার্যকর হয় ১৬ ডিসেম্বর থেকে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর দেশে ২৭টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের জন্য স্টেন্টের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। এরমধ্যে মূলত তিনটি আমেরিকান ও বাকি ইউরোপীয় ও অন্যান্য কিছু দেশের আমদানিকারক রয়েছে।
ইউরোপীয় রিং আমদানিকারকরা বলছেন, এই দাম নির্ধারণে শুধু আমেরিকার তিনটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ২০১৭ সালের মার্কআপ ফর্মুলা অনুসরণ করা হয়েছে। আমদানিকারক বাকি ২৪ প্রতিষ্ঠানের স্টেন্টের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে মার্কআপ ফর্মুলা মানা হয়নি। তাই মূল্য নতুন করে সমন্বয় না করা পর্যন্ত স্টেন্ট সরবরাহ ও বিক্রি বন্ধ রেখেছে তারা।
রোগীদের ভোগান্তি
যেসব হাসপাতালে হার্টের চিকিৎসা হয় সেসব হাসপাতালগুলোতে চিঠি দিয়েছে ইউরোপীয় রিং আমদানিকারক কোম্পানিগুলো। দাম পুনর্নিধারণের বিষয়টি চূড়ান্ত না হওয়ার পর্যন্ত চিঠিতে তারা তাদের আমদানি করা রিং ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা। আর এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ভোগান্তি আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের একজন চিকিৎসক বলেন, "রোববার হার্টের সমস্যা নিয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে আসা এক রোগীর এনজিওগ্রাম করা হলে হার্টে ব্লক ধরা পড়ে। হার্টের ব্লক সারাতে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়।"
"তবে তার হার্টে যে সাইজের রিং প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের রিং সরবরাহকারী তিন প্রতিষ্ঠানের কাছে সেই সাইজের রিং না থাকায় রোগীকে ক্যাথল্যাব থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কয়েকদিন পর রোগীকে হাসপাতালে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে," যোগ করেন তিনি।
ওই চিকিৎসক আরও জানান, হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে একদিনে হার্টের ৪০টি রিং পরানো হলে, সেখানে অন্তত ২৫টি রিং থাকে ইউরোপীয় আমদানিকারকদের।
"ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো রিং বিক্রি বন্ধ রাখায় যে রোগীকে ৬৬ হাজার টাকার রিং পরানো সম্ভব হতো, সাইজ জটিলতার কারণে অনেকক্ষেত্রে এখন তাকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার রিং পরাতে হচ্ছে। এতে রোগীর খরচও বেড়ে যাচ্ছে অনেক বেশি," বলেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউরোপীয় রিং আমদানিকারক বলেন, "আমাদের প্রোডাক্টগুলো হাসপাতালগুলোর ক্যাথল্যাবে দেওয়া থাকে, সেগুলো রোগীর শরীরে পরানোর পর আমাদের দাম দেওয়া হয়। আমরা হাসপাতালগুলোকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি– একেবারে উপায় নেই এমন পরিস্থিতি ছাড়া আমাদের রিং ব্যবহার না করতে। কারণ আমাদের সাথে বৈষম্য করে রিংয়ের দাম কমানো হয়েছে, এতে আমাদের লস হবে। আমরা ডিজিডিএ তে রোববার চিঠি দিয়েছি দাম পুননির্ধারণের জন্য। দাবি না মানলে আমরা সর্বোচ্চ আদালতে যাবো।"
আলোচনার দুয়ার খোলা আছে: ডিজিডিএ
ডিজিডিএর উপ-পরিচালক ও মুখপাত্র নুরুল আলম দাবি করেন, রিংয়ের দামে নৈরাজ্য বন্ধ করতেই দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, "আমরা গত কয়েক বছর ধরে হার্ট স্টেন্টের দাম কমানোর চেষ্টা করছি। গত আগস্টে আমদানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করে তিন ব্র্যান্ডের রিংয়ের দাম কমানো হয়। পরে সব আমদানিকারকদের সঙ্গে দু-তিনবার বৈঠকও করেছি। ডলার সংকটের কারণ দেখিয়ে দাম কমানোর বিপক্ষে ছিলেন আমদানিকারকরা। কিন্তু পরে তারা ১৩ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী দাম নির্ধারণে সম্মত হয়।"
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি আরও বলেন, "স্টেন্টের দাম কমানোর বিষয়টি চূড়ান্ত করার আগে আমরা আমদানিকারকদের জানিয়েছি। এই দামে পণ্য বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে রোগীদের জীবন জিম্মি করে রাখা গ্রহণযোগ্য নয়।"
এ কারণে কোনো রোগীর ক্ষতি হলে এর দায়ভার আমদানিকারকদের ওপর বর্তাবে বলে সতর্ক করেন তিনি।
"রোগীদের দোষারোপ করার পরিবর্তে, সমস্যাগুলো তুলে ধরুন। কোনো দাবি থাকলে আলোচনার মাধ্যমে আমরা সমাধান খুঁজতে পারি," যোগ করেন মুখপাত্র।