আমের গুণাগুণ: যে ১০ কারণে আমকে ‘ফলের রাজা’ বলা হয়
ফলের রাজা বলা হয় আমকে। মনমাতানো স্বাদ, ঘ্রাণ ও রঙের জন্য আম বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। তবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এই ফলটি স্বাস্থ্য উপকারিতা ও পুষ্টিগুণের কারণেও সমান জনপ্রিয়।
যে কোনো ফলকে ফলের রাজা হিসেবে বিবেচনা করার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় মানদণ্ডের ভিত্তিতে বিচার করা হয়।যেমন: এর স্বাদ, পুষ্টিমান, সাংস্কৃতিক গুরুত্ব, রঙ, আকার এবং প্রাপ্যতা। এর সবগুলো গুণই আমের রয়েছে। আমের স্বাদ যেমন দারুণ, তেমনি প্রকৃতির আশির্বাদে এটি অসংখ্য পুষ্টিগুণে ভরপুর।
আমের অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতার মধ্যে রয়েছে: হজমে সহায়তা করা, ত্বক ভালো রাখা, ক্যান্সার ও হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি হ্রাস এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো প্রভৃতি।
এছাড়া, অনেক সংস্কৃতি আমকে প্রাচুর্য এবং সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে। এসব গুণাগুণ আমকে 'ফলের রাজা' প্রবাদটির যোগ্য করে তুলেছে।
নিচে আমের ১০টি গুণাগুণ বর্ণনা করা হলো:
১. ওজন কমাতে সহায়তা করে
এর স্বাদ মিষ্টি হলেও, মানুষের ওজন নিয়ন্ত্রণের অংশ হতে পারে আম। আমে ক্যালরির পরিমাণ কম এবং ফাইবার অনেক বেশি। তাই আম খাওয়ার পর অনেকক্ষণ পেট ভরা লাগে। যার ফলে 'ওভারইটিং' বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে সাহায্য করে।
এছাড়া, আমকে কম-ঘনত্বের ফল বলা যায়। তাই অন্যান্য উচ্চ-ক্যালরিসম্পন্ন খাদ্যের বদলে সমপরিমাণ আম খেলে শরীর কম ক্যালরি গ্রহণ করে। এভাবে মানুষের ওজন কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে আম।
২. রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। ভিটামিন সি মানুষের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অব্যর্থ। আম শরীরকে ইনফেকশন ও নানা অসুস্থতার বিরুদ্ধে আরও সক্রিয়ভাবে লড়াই করতে সাহায্য করে।
এছাড়া, আমে আছে ভিটামিন এ। এই ভিটামিন ত্বক এবং মিউকাস মেমব্রেন বা শ্লেষ্মা ঝিল্লি ভালো রাখতে সহায়তা করে। শ্লেষ্মা ঝিল্লি জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শরীরের প্রথম প্রতিরোধ স্তর হিসেবে কাজ করে।
৩. ত্বক ভালো রাখে
আম ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিনসহ নানা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ। এগুলো আমাদের সুস্থ ত্বকের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। এসব অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আমাদের ত্বকের বলিরেখা ও অকালে ত্বক কুঁচকে যাওয়া ও ঝুলে পরা রোধ করে এবং ত্বককে টানটান করে। পাকা আম চটকে ত্বকে লাগালে ত্বকের পনিশূন্যতা রোধ করে, ত্বককে সতেজ করে তোলে এবং প্রাকৃতিক গ্লো আনে।
৪.মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়
আমে ভিটামিন বি৬, সি, ফোলেট ও গ্লুটামিনসহ নানা ধরনের পুষ্টিগুণ রয়েছে। এগুলো মানুষের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ভালো রাখতে সহায়ক। ভিটামিন বি৬ মস্তিষ্কের কোষ সুরক্ষিত রাখে। এতে থাকা ফোলেট এবং ভিটামিন সি স্মৃতিশক্তি হ্রাস থেকে বাঁচায় এবং সার্বিকভাবে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। এতে থাকা গ্লুটামাইন অ্যাসিড মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।
৫. রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ
আম একটি লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ফল, অর্থাৎ একটু সতর্কতার সঙ্গে ডায়বেটিক রোগীরাও তাদের খাদ্য তালিকায় আম রাখতে পারবে। আমে থাকা খাদ্য আঁশ রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীরাও নিয়ম মেনে এবং পরিমাণমতো আম খেতে পারে।
৬. হজমে সহায়তা করে
আমের বিশেষ কিছু এনজাইম খাদ্যের প্রোটিনকে ভালোভাবে ভেঙে ফেলতে কাজ করে। যা সামগ্রিকভাবে পরিপাক ক্রিয়ায় অবদান রাখে।
এছাড়া পাকা আমে পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশ জাতীয় উপাদান পেকটিন থাকে, যা পাকস্থলীতে থাকা খাদ্যকে ভালোভাবে পরিপাক হতে, নিয়মিত পেট পরিষ্কার করতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।
৭.দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে
আমে থাকা ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। ভিটামিন-এ ছাড়াও আমে লুটেইন এবং জেক্সানথিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। এগুলো আমাদের চোখের আলোক সংবেদনশীলতা, রাতকানা এবং চোখের চারপাশের শুষ্কভাব দূর করে।
৮.পানিশূন্যতা রোধ করে
আমে প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে যা আমাদের শরীরকে, বিশেষত গ্রীষ্মকালে হাইড্রেটেড রাখতে সহায়তা করে। সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকা, খাদ্য পরিপাক এবং ত্বককে সুস্থ ও সতেজ রাখতে শরীরে পর্যাপ্ত পানি থাকা আবশ্যক।
৯.হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
আমে থাকা আঁশ, পটাশিয়াম ও নানা ধরনের ভিটামিন হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সহায়ক। আমে থাকা উচ্চ আঁশ স্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে, পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং আমে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। সার্বিকভাবে আম হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
১০.পুষ্টিগুণের আঁধার
আমে প্রচুর পরিমাণে মানুষের দেহের জন্য উপকারী ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে। এই ফল ভিটামিন এ, সি, ই এবং বি কমপ্লেক্স যেমন: বি৬, নায়াসিন, ফোলেট এর মতো পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। এসব পুষ্টিগুণ আমাদের সার্বিক স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, ত্বক ভালো রাখতে এবং শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।