অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে মিয়ানমারে আটক, দীর্ঘ কারাবাস শেষ ৪৫ জনের ফেরা
নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াই হাজার এলাকার গফুর উদ্দিন। রোববার (৯ জুন) ভোরে কক্সবাজার পৌঁছেই সারাসরি চলে আসেন শহরের বাঁকখালী নদীর মোহনাসংলগ্ন নুনিয়াছড়াস্থ বিআইডব্লিটিএ-র জেটি ঘাটে। টানা ৮ মাসের বেশি সময় পার হওয়ার পর তার ছেলে আবদুল হালিম (৩০) স্বদেশে ফিরছেন।
ছেলে তখনও এসে পৌঁছেননি ঘাটে। কথা হয় বৃদ্ধ গফুর উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, তার ছেলে আবদুল হালিম পেশায় কাঠমিস্ত্রি ছিল। কাজ করে কোনো রকমে ভালোই চলছিল সংসার। কিন্তু হঠাৎ গত বছরের অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে নিখোঁজ হয়ে যান। কোনোভাবেই আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। গত রোজার ঈদের পরের দিন মিয়ানমার থেকে একটা ফোন আসে। ফোনে কথা বলে ছেলে।
ছেলে আবদুল হালিম তার বাবাকে জানিয়েছিলেন, তিনি মিয়ানমারের কারাগারে রয়েছেন। দালাল চক্রের প্রলোভনে কক্সবাজার থেকে সাগরপথে ট্রলার নিয়ে মালয়েশিয়া যাত্রা দিয়েছিলেন তিনি। ওই ট্রলারে আড়াই হাজার এলাকার আরও পাঁচজন ছিলেন। কিন্তু দালালেরা তাদের নিয়ে নামিয়ে দেয় মিয়ানমারে। ওখানে মিয়ানমারের বাহিনীর সদস্যরা আটক করে তাদের পাঠায় কারাগারে।
গফুর উদ্দিন বলেন, 'সরকারের যাচাই-বাছাই শেষে কয়েকদিন আগেই জানানো হয়েছে, ছেলে আজ ফিরছে। তাই ছেলেকে নিতে কক্সবাজার আসা। ৮ মাস পর আজ খুব খুশি লাগছে। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। আমার সাথে আমার এলাকার আরও পাঁচজন এসেছেন। তাদের ছেলেও এখানে রয়েছে। আমরা কোরবানির ঈদ খুব আনন্দের সাথে করতে পারব।'
একই কথা বলেন কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের উত্তরপাড়ার সাইফুল ইসলামও। তিনি জানান, তার ছেলে মোহাম্মদ ইলিয়াছও (২০) এগারো মাস আগে মালয়েশিয়ায় যেতে গিয়ে মিয়ানমারে আটক হয়েছিলেন। ছেলে ফিরছেন, তাই খুশি তিনিও।
ফেরত ৪৫ জনই সাগরপথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার স্বপ্নে যাত্রা শুরু করেছিলেন। কিন্তু মিয়ানমারে আটক হয়ে ৮ থেকে ১৫ মাস কারাভোগ শেষে রোববার স্বদেশে ফিরেছেন তারা। ফেরত আসার পর এসব মানুষের ১০-১২ জনই একবাক্যে অনুরোধ করেছেন দালালের প্রলোভনে যেন আর কেউ এমন ভুল পথে যাত্রা না করেন। এটা প্রতারণা ছাড়াই আর কিছু নয় বলেও মন্তব্য করেন তারা।
মিয়ানমারে কারাভোগ শেষে এই ৪৫ জন বাংলাদেশি রোববার সকাল ৯টার পরপরই কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর মোহনাসংলগ্ন নুনিয়াছড়াস্থ বিআইডব্লিটিএর জেটি ঘাট এসে পৌঁছেন।
বঙ্গোপসাগরের শূন্যরেখার জলসীমায় আসা মিয়ানমারের নৌবাহিনীর জাহাজ ইউএমএস চিন ডুইন থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি গাম বোট বা ছোট্ট জাহাজযোগে আনা হয় এই বাংলাদেশিদের। ওই সময় আসেন সঙ্গে মিয়ানমারের ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল। তারা মিয়ানমারে সংঘাতের জেরে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১৩৪ জন বিজিপি ও সেনা সদস্যকে নিয়ে ফেরত গেছেন।