মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসছেন বিজিপি, কাস্টমস, সেনা সদস্য ও আহত নাগরিক; বিজিবি হেফাজতে ২৬৪
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাতের জেরে শুধু দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সদস্য না, বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্য, কাস্টমস কর্মী ও আহত সাধারণ নাগরিকরাও।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকাল পর্যন্ত পালিয়ে আসা ২৬৪ জন বিজিবির হেফাজতে রয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের রহমতবিল সীমান্ত দিয়ে ১১৪ জন এবং ঘুমধুম, টেকনাফের সীমান্ত দিয়ে আরও ২ জন পালিয়ে আসে।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানান, পালংখালী সীমান্ত দিয়ে এসেছে ১১৪ জন।
তিনি বলেন, 'এখানে শুধু বিজিপি সদস্য নয়, সেনা বাহিনীর সদস্য, কাস্টমস সদস্য ও আহত মিয়ানমারের সাধারণ নাগরিক রয়েছে। এ মুহূর্তে কতজন আহত রয়েছে, বলা যাচ্ছে না। বিজিবি এদের হেফাজতে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।'
মঙ্গলবার সকাল ১০ টার দিকে কক্সবাজার উখিয়ার পালংখালী সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় বিজিপি সদস্যদের আটক করে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সকাল থেকে পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালীর রহমতের বিল সীমান্ত দিয়ে ১১১ জন বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে ঢুকেছেন। স্থানীয় জনতা তাদের আটক করেছে। তাদের রহমতের বিল সহকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিজিবির জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।'
বিজিবি সদস্যরা তাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা নিয়ে ফাঁড়িতে রেখেছেন বলে জানান তিনি।
আশ্রয় নেওয়া বিজিপি সদস্যদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আহত রয়েছেন। বিজিবির তত্ত্বাবধানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৯ জনকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪ জনকে সোমবার রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) মো. আশিকুর রহমান।
নিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে সীমান্ত শিবির দখলকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী দলগুলোর সংঘর্ষ চলছে। ক্রমাগত গুলি, মর্টার শেল ও রকেট বিস্ফোরিত হচ্ছে।
মিয়ানমার থেকে আসা গোলায় বাংলাদেশের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় এক বাংলাদেশিসহ দুজন নিহত হয়েছেন।
গত তিন দিনের সংঘাতের সীমান্ত-লাগোয়া বিভিন্ন এলাকায় গুলি বা মর্টার শেষ পড়লেও সোমবার দুপুরে মৃত্যুর ঘটনা পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে দিয়েছে।
ঘুমধুম মৈত্রী সড়কের পাশে অবস্থিত নয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের এখানে অনেক বেশি গোলাগুলি চলছে। বিশেষ করে, সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে গোলাগুলির মুহুর্মুহু শব্দ শোনা যাচ্ছে। গুলি এসে বাড়িঘরে পড়েছে। এজন্য পরিবার নিয়ে আমরা এলাকা ছেড়েছি।'
স্থানীয় ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'গত তিন দিন আমার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে তেমন ঝামেলা হয়নি। তবে আজ সন্ধ্যার পর থেকে অবস্থা বেশি খারাপ। মানুষজন যে যার মতো নিরাপদে চলে গেছে।'
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত শনিবার দিবাগত রাত ৩টা থেকে ঢেঁকিবনিয়ার পাশে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) তুমব্রু রাইট ক্যাম্প দখলকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির সঙ্গে গোলাগুলি শুরু হয়। তুমব্রু রাইট ক্যাম্প সীমান্তচৌকিটি বাংলাদেশের বান্দরবানের নাইক্ষ্যাংছড়ি উপজেলার লোকালয়ের একদম কাছাকাছি।
ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি থেকে বাংলাদেশের লোকালয় প্রায় ৮০০ মিটার দূরে। ঢেঁকিবনিয়া ও ঘুমধুমের মাঝখানে নাফ নদীর সরু একটি শাখা ও প্যারাবন রয়েছে। এ কারণে তুমব্রু রাইট ক্যাম্পে গোলাগুলির সময় বাংলাদেশের বসতঘরে গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়েছে।
সংঘর্ষের জেরে সীমান্ত-লাগায়ো বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
থাইল্যান্ড থেকে প্রকাশিত মিয়ানমারের গণমাধ্যম দ্য ইরাবতীর প্রতিবেদন অনুসারে, গত চার দিনে রাখাইনে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বেশিরভাগ ঘাঁটি আরাকান আর্মি দখল করে নিয়েছে। এ পর্যন্ত সংঘাতে জান্তা বাহিনীর অন্তত ৬২ জন সৈন্য নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।