নেপাল থেকে ৫ বছরে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার
নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। বিদ্যুৎ লাইন চার্জসহ প্রতি ইউনিটের দাম পড়বে ৮.১৭ টাকা।
মঙ্গলবার (১১ জুন) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সচিব (সংস্কার ও সমন্বয়) মো: মাহমুদুল হোসাইন খান।
তিনি বলেন, "ভারতীয় গ্রিড ব্যবহার করে বাংলাদেশে এই বিদ্যুৎ আসবে বলে ভারতকে ট্রেডিং মার্জিন হিসেবে ইউনিট প্রতি ০.৫৯ রুপি দিতে হবে। ভারতকে ট্রান্সমিশন (সঞ্চালন) খরচও দিতে হবে যা এখনও নির্ধারিত হয়নি।"
তিনি আরো বলেন, এই বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) ও নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটির (এনইএ) মধ্যে চুক্তি হবে।
কবে নাগাদ চুক্তি হবে— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, "চুক্তির দিন তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হবে কারণ নেপালের বিদ্যুৎ ভারতের ট্রান্সমিশন লাইন হয়ে আসবে।"
নেপালের বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসতে কতদিন লাগতে পারে— এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "সামনে প্রধানমন্ত্রীর নেপালে সফর আছে। সেখানে হয়ত এই চুক্তি সম্পন্ন হবে।"
মাহমুদুল হোসাইন খান জানিয়েছেন, "প্রাথমিকভাবে ৫ বছরের জন্য চুক্তি করা হবে। প্রতিবছর আনুমানিক ১৩০ কোটি টাকা দিতে হবে। এতে পাঁচ বছরে আনুমানিক ব্যয় হবে ৬৫০ কোটি টাকা। ভারতের গ্রিড ব্যবহার করে বাংলাদেশের ভেড়ামারায় জাতীয় গ্রিডে এই বিদ্যুৎ যুক্ত হবে।"
এর আগে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে ভারতের জাতীয় গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানি করতে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বাবিউবো) আন্তর্জাতিক ক্রয়প্রস্তাব জারি করলে নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি (এনইএ) এবং ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ ভাইপার নিগম লিমিটেড (এনভিভিএন) প্রস্তাব দাখিল করে।
জানা গেছে, নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনার ক্ষেত্রে ভারতের মোজাফফরবাদ সাবস্টেশনে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম ধরা হচ্ছে ৬.৪০ ইউএস সেন্ট। এনভিভিএন ট্রেডিং মার্জিন হবে ০.০৫৯৫ ভারতীয় রুপি। এছাড়া ভারতের সেন্ট্রাল ইলেকট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশনের (সিইআরসি) নিয়ম অনুযায়ী ট্রান্সমিশন চার্জ নির্ধারিত হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র থেকে জানা গেছে, বিপিডিবি চলতি মাসেই নেপালের সাথে চুক্তির বিষয়ে প্রস্তুত রয়েছে। চুক্তির পরে সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে এই বিদ্যুৎ বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। নেপাল ত্রিশুলি প্রকল্প থেকে ২৪ মেগাওয়াট ও অন্য একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি নিয়েছে।
ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে অন্য যেসব প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে
জলবিদ্যুৎ আমদানির প্রস্তাব ছাড়াও গতকাল মন্ত্রিসভা কমিটি আরও কয়েকটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
অপরিশোধিত তেল আমদানি
জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে জ্বালানি তেল আমদানির জাহাজ ভাড়া বাবদ ১৩ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। জ্বালানি বিভাগ এ প্রস্তাব করেছিল।
মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সচিব মো: মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যে জাহাজগুলো গ্যাস ওয়েল, জেট ফুয়েল, ফার্নেস ওয়েল, মোগ্যাস (মোটর গ্যাসোলিন) এবং মেরিন ফুয়েল আনবে সেগুলোর ভাড়া বাবদ এই পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, এই জাহাজ ভাড়া দিয়ে ইউনিপেক সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড এবং ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড থেকে ১৫.৮০ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ১০ লাখ টন গ্যাস অয়েল, ২ লাখ টন জেট ফুয়েল, ২.৫০ লাখ টন ফার্নেস অয়েল, ১ লাখ টন মোগ্যাস এবং ৩০ হাজার টন মেরিন ফুয়েল।
সার ক্রয়
তিউনিশিয়া, কানাডা, মরক্কো, কাতার এবং বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে ৬৮৮ কোটি টাকায় ১.৬৫ লাখ টন সার কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
এরমধ্যে ২৫ হাজার টন টিএসপি, ৪০ হাজার টন পটাশ, ৪০ হাজার টন ডিএপি এবং ৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার রয়েছে।
ইউরিয়া সার আমদানি
এদিকে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি কাতার ও সৌদি আরবের সাথে রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় ইউরিয়া সার আমদানি সংক্রান্ত চুক্তি সই করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়কে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
বর্তমানে জি-টু-জি ভিত্তিতে মুনতাজাত-কাতার থেকে চুক্তির মাধ্যমে ইউরিয়া সার আমদানি করা হচ্ছে। মুনতাজাতের সঙ্গে বিদ্যমান চুক্তির মেয়াদ আগামী ৩০ জুন শেষ হবে। এই চুক্তির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি।
একইভাবে সৌদি বেসিক ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (এসএবিআইসি) সাথেও আগামী এক বছরের জন্য চুক্তি করার প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
টিসিবির জন্য পণ্য ক্রয়
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য ৩৩২ কোটি টাকার সয়াবিন তেল ও ২০৫ কোটি টাকার মসুর ডাল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান জানান, টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী এক কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ২০ হাজার টন মসুর ডাল কেনা হবে। প্রতি কেজি ডালের দাম ধরা হয়েছে ১০২.৫০ টাকা। আর ২.২০ কোটি লিটার সয়াবিন তেল কেনা হবে যার লিটার প্রতি দাম পড়বে ১৫০.৯০ টাকা।