ফিনল্যান্ডের মতো চট্টগ্রামেও ভূ-গর্ভস্থ বর্জ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণের উদ্যোগ
নগরীর পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতা ও উন্নত পরিবেশ নিশ্চিতে বর্জ্যের ভূ-গর্ভস্থ সংরক্ষাণাগার নির্মাণের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।
এসব সংরক্ষাণাগার 'সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন' (এসটিএস) হিসেবে ব্যবহার করা হবে। অর্থাৎ, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে খোলা স্থানে বর্জ্যের স্তুপের বিকল্প হিসেবে ভূ-গর্ভস্থ এই সংরক্ষাণাগারগুলো ব্যবহৃত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বাসা-বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে ভূ-গর্ভস্থ এসটিএসতে জমা করা হবে। ফলে খোলা স্থানে বর্জ্য পড়ে থাকবে না; ছড়াবে না দুর্গন্ধ।
ফিনল্যান্ডের মডেলের আদলে প্রতিটি ভূ-গর্ভস্থ এসটিএস নির্মাণে ব্যয় হবে ২ থেকে ২.৫ কোটি টাকা।
চসিকের তথ্যমতে, পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রাথমিকভাবে নগরীর ৬টি স্থানে ভূ-গর্ভস্থ এসটিএস নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সংস্থাটি। প্রত্যেকটি এসটিএস ১০ টন সক্ষমতার হবে।
কমপেক্টর প্রযুক্তিসম্পন্ন এসটিএসগুলোতে হাইড্রোলিক প্রেসারের মাধ্যমে বর্জ্য চাপিয়ে সংকোচন করে অর্ধেক ওজনে পরিণত করা হবে। লিফটের মতো সুইচ চাপলে এসটিএস খুলে যাবে।
ভূ-গর্ভস্থ এসটিএসগুলো ৮০ শতাংশ পূর্ণ হলে স্বয়ংক্রিয় বার্তা আসবে। এসটিএসগুলো পূর্ণ হলে সেখান থেকে বর্জ্যগুলো তুলে ল্যান্ডফিলে নেওয়া হবে।
প্রাথমিকভাবে নগরীর পতেঙ্গার মহাজন ঘাটা, কাঠগড়ের জিএম গেইট, হালিশহরের নয়া বাজার মোড়, কাজির দেউরির আলমাস মোড় এবং দুই নম্বর গেইটে ভূ-গর্ভস্থ এসটিএস নির্মাণের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর বাইরে জিইসি কনভেনশন সেন্টারের পেছনে অথবা নূর আহমদ সড়কে থাকা বর্জ্য ফেলার স্থান— দুটির যেকোনো একটিতে এসটিএস নির্মাণের পরিকল্পনা করছে চসিক।
পাইলট প্রকল্পে সফলতা পেলে পুরো শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ৬০ থেকে ৭০টি ভূ-গর্ভস্থ এসটিএস নির্মাণের জন্য পৃথক প্রকল্প নেওয়া হবে। আগামী একমাসের মধ্যে পাইলট প্রকল্পের জন্য দরপত্র আহ্বান লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে চসিক।
চট্টগ্রাম সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "প্রযুক্তিটি ব্যয়বহুল। তবে গ্রিন সিটি বা ক্লিন সিটি করতে হলে তো সড়কে বর্জ্য পড়ে থাকতে পারবে না। আমরা চেষ্টা করছি, প্রাথমিকভাবে নিজস্ব তহবিল থেকে পাইলট প্রকল্প করতে। আগামী একমাসের মধ্যে ভালো অগ্রগতি আসবে আশা করি।"
মূলত গত বছরের আগস্ট মাসে ফিনল্যান্ডের হাবা গ্রুপ সংস্থাটিকে ভূ-গর্ভস্থ এসটিএস সরবরাহের প্রস্তাব দেয়। এরপর 'হাবা–আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়েস্ট স্টোরেজ সিস্টেম' এর আমন্ত্রণে ভূ-গর্ভস্থ বর্জ্য সংরক্ষাণাগারের পরিচালন প্রক্রিয়া পরির্দশনে গত বছরের ৫ নভেম্বর ১০ দিনের ফিনল্যান্ড সফরে যান সিটি মেয়র রোজউল করিম চৌধুরী এবং তার একান্ত সচিব ও তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম। এরপর মেয়র চট্টগ্রামে এমন এসটিএস নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বর্জ্য নিয়ে সমীক্ষায় চালায় 'জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন' এবং 'ইয়চিও ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন'। এই সমীক্ষার তথ্যমতে, চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিদিন গড়ে ২,১০০ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর ৬৮ শতাংশ খাদ্য বর্জ্য। এরপর ৮০০-১,০০০ টন বর্জ্য হালিশহরে ল্যান্ডফিলে এবং ১,০০০-১,২০০ টন বর্জ্য আরেফিন নগরে ফেলা হয়।
চসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের তথ্যমতে, বর্তমানে নগরীতে চান্দগাঁও ওয়ার্ডের এফআইডিসি রোড, লালখান বাজার ওয়ার্ডের টাইগারপাস, পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ডের বরিশাল কলোনি, উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের সাগরিকা, হালিশহর মুনিরনগর ওয়ার্ডের পোর্ট কানেকটিং রোডের পোর্ট মার্কেট, দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের বিমানবন্দর সড়কের বিজয়নগর এলাকা এবং চান্দগাঁও এক কিলোমিটার ফ্লাইওভারের নিচে এসটিএস রয়েছে।
৭টি এসটিএসের মধ্যে, চান্দগাঁও এক কিলোমিটার ফ্লাইওভারের নিচেরটি চসিকের অর্থায়নে করা। বাকি ৬টি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে করা হয়েছিল। এছাড়া, তিন শতাধিক ছোট-বড় বর্জ্য ফেলার খোলা স্থান আছে।
বর্জ্যগুলো বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করে এসটিএস ও খোলা স্থানে আনা হয়। পরে তা দুটি ল্যান্ডফিলে নেওয়া হয়। সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় ল্যান্ডফিল দুটি পূর্ণ হয়ে বর্জ্যের পাহাড়ে রূপান্তর হয়েছে। এজন্য নগরীর ফতেয়াবাদ এক নম্বর ওয়ার্ডে আরেকটি ল্যান্ডফিল স্থাপনের জন্য ১৫-২০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা নৌ কমান্ডার লতিফুল হক কাজমী টিবিএসকে বলেন, "মূল সড়কে খোলা স্থানে বর্জ্য জমা থাকার কারণে অনেক এলাকাবাসী স্থায়ীভাবে অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছেন। এসটিএস নির্মাণ হলে বর্জ্য চলে যাবে মাটির নিচে। আর কমপেক্টরের মাধ্যমে চাপিয়ে বর্জ্যগুলো বিস্কুটের মতো করা হবে।"
তিনি বলেন, "সংকোচনের ফলে বর্জ্য জায়গা কম নেবে। পরিবহন ব্যয়ও কমবে। এসটিএস নির্মাণের ক্ষেত্রে নগরীতে জলবদ্ধতা বিবেচনা করা হচ্ছে— যেন পানির নিচে তলিয়ে না যায়।"