ভেঙে দেওয়া হলো সাদিক অ্যাগ্রোর সম্পূর্ণ খামার
খামার করতে প্রয়োজনীয় কোনো অনুমোদনই নেওয়া হয়নি এমন অভিযোগে সাতমসজিদ হাউজিংয়ের সাদিক অ্যাগ্রোর পুরো খামার ভেঙে দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
শনিবার (২৯ জুন) তৃতীয় দিনের মতো অভিযান চালিয়ে খামারটি পুরোপরি ভেঙে দেয়া হয়।
অভিযানসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রোর খামারটি ছিল একেবারে রামচন্দ্রপুর খালের পাড় ঘেঁষে। খালের প্লাবন ভূমির (ফোরশোর) ৩০ ফুটের মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ না করতে উচ্চ আদালতের আদেশ রয়েছে।
এছাড়া স্থাপনা নির্মাণের জন্য সাদিক অ্যাগ্রোর রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কোনো অনুমতিও ছিল না। খামারের জন্য সিটি করপোরেশনের থেকেও ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া হয়নি।
অভিযান পরিচালনা করেছেন ঢাকা উত্তর সিটির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বির আহমেদ এবং ডিএনসিসির সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব হাসান।
মোতাকাব্বির আহমেদ বলেন, 'বৃহস্পতিবার আংশিক ভেঙে দিয়ে তাদের [সাদিক অ্যাগ্রো] ট্রেড লাইসেন্স, ফার্মের স্থাপনা নির্মাণের অনুমতিপত্র চাওয়া হয়েছিল। তারা সেদিন এসবের কিছুই দিতে পারেনি।
'সেদিন তারা নিজেরাই ভেঙে দেবে বলে দুদিন সময় নিয়েছিল। আজ গিয়ে দেখা যায়, ভাঙেনি। তাই বাকিটাও ভেঙে দেওয়া হয়েছে।'
সাদিক অ্যাগ্রো ছাড়াও তিনদিনের অভিযানে প্রায় ৭০টি স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়ে এখন পর্যন্ত ২০ বিঘা জমি উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া রামচন্দ্রপুর খালের ১০ টন বর্জ্য পরিষ্কার করে খনন কাজ চালানো হয়।
ঢাকা উত্তর সিটির জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, আজ সকাল সাড়ে ১০টায় অভিযান শুরুর কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে এটি বিলম্বিত হয়। পরে দুপুর ১২টায় উচ্ছেদ শুরু হয়।
তৃতীয় দিনের অভিযানে সাদিক অ্যাগ্রোর খামারটি ছাড়াও আরও ৯টি অবৈধ পাকা স্থাপনা, একটি হাউজিংয়ের ফটক ও আশপাশের কিছু ছোট স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়।
ঈদুল আজহার আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কেনার ঘটনায় আলোচনায় আসেন মতিউর। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে থেকে তিনি বিপুল সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করেছেন, উঠতে শুরু করে এমন অভিযোগ।
একইসঙ্গে এই ছাগলকাণ্ডে সাদিক অ্যাগ্রোকে নিয়েও গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হতে থাকে। খালের অংশ দখলে নিয়ে খামার গড়ে তোলার বিষয়টিও এরপর সামনে আসে।
এদিকে খালের জায়গা ও সিটি করপোরেশনের জমি দখল করে দীর্ঘদিন খামার পরিচালনা করে আসলেও, এর আগের উচ্ছেদ অভিযানগুলোয় কোনো আঁচড় পড়েনি সাদিক অ্যাগ্রোতে। কেন এমনটা হলো সঙ্গতকারণেই তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এর আগে ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি সাদিক অ্যাগ্রোর সাতমসজিদ হাউজিংয়ের খামার থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরত্বের বসিলায় অবৈধভাবে দখল হওয়া লাউতলা খালকে দখলমুক্ত করতে অভিযান চালায় ডিএনসিসি। যেখানে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ট্রাক টার্মিনাল উচ্ছেদ করা হয় উত্তরের মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে।
সম্প্রতি গত ২৩ জানুয়ারি লাউতলা খালের কাছের আরও একটি অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে ঢাকা উত্তর। তখন খাল দখল করে ১০তলা একটি নির্মানাধীন ভবন ভেঙে ফেলা হয়।
কিন্তু অবৈধভাবে খাল দখল করে গড়ে তোলা সাদিক অ্যাগ্রো তখনও ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিভিন্ন সময় সাদিক অ্যাগ্রোর দখলদারি নিয়ে মিডিয়ায় নিউজ কিংবা ঢাকা উত্তর খালের সীমানা নির্ধারণ করলেও তা উদ্ধার করতে সচেষ্ট হয়নি সিটি করপোরেশন। যদিও ডিএনসিসির কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা এবছরে ঈদুল আজহার আগেই সাদিক অ্যাগ্রোকে নোটিশ পাঠিয়েছিলেন।
জানা যায়, সাতমসজিদ হাউজিংয়ে অবস্থিত খামারটির জমির মালিক হলেন জনৈক আব্দুল রশিদ তালুকদার। তবে এর তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁর ভাই আব্দুল আলীম। তাঁর থেকে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে পৌনে পাঁচ শতক জমি ভাড়া নেন সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন । এরপরে রামচন্দ্রপুর খালের আরও ১৫ শতাংশ জায়গা দখল নিয়ে সেখানে গবাদিপশুর শেড তৈরি করেছিলেন।
চলতি বছরের ১ এপ্রিল আরও তিন বছরের জন্য জমির ইজারা চুক্তির নবায়ন করেন ইমরান।
আব্দুল আলীম টিবিএসকে বলেন, '(ভাড়া দেওয়া) জমির পরিমাণ ৪.৮৬ শতক। এর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সিটি করপোরেশন কর্তৃক জমির সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল।'
সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ)-র সভাপতি। খামারের সঙ্গেই অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয় ছিল। অভিযানে কার্যালয়টিও ভাঙা পড়ে।
ইমরান হোসেন বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। যখন খালগুলোর দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশন পায়, তখন ভবন খালের বাইরে আছে এমনটাই জানিয়েছিল জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। যদিও ভবন আমার না, আমি ভাড়াটিয়া।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি এই জমিতে ভাড়ায় ছিলাম, তাই উচ্ছেদ অভিযানে আমার কিছু যায় আসে না। আমি অন্য জায়গায় চলে যাব। জায়গার মালিক শেড করেছেন, আমি নিচতলা ভাড়া নিয়েছি। খাল ভরাটসহ যা কিছু বলা হচ্ছে, সবই মালিকের করা।'