শেরেবাংলা নগরে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ৪,২৬৪ কোটি টাকার আবাসন প্রকল্পের প্রস্তাব
অর্থনৈতিক সংকটের মাঝে সরকার যখন কৃচ্ছতা সাধণ করছে; ঠিক তখনই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সুইমিং পুল, বোট হাউজ, আধুনিক লেক প্লাজাসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
প্রস্তাব অনুযায়ী, রাজধানীর শেরে বাংলানগরে ৪৩ একর জায়গায় মোট ৪২টি ১০ তলা ভবনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে মোট ৪২৬৩.৯৭ কোটি টাকা।
এছাড়া এতে আধুনিক পানি সরবরাহের জন্য ডিপ টিউবল ছাড়াও রয়েছে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা। একইসাথে পরিবেশগত দিক বিবেচনায় বর্জ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে থাকবে টাওয়ার।
প্রকল্পটি চলতি অর্থবছরে বাস্তবায়ন করতে চায় গণপূর্ত অধিদপ্তর। ২০২৭ সাল নাগাদ প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শেষ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে এলাকাটিতে এক ও দুই তলার ৪৭টি আবাসিক ভবন রয়েছে। যা ১৯৬০-এর দশকে নির্মাণ করা হয়েছিল।
গতকাল (মঙ্গলবার) পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ-এর সভাপতিত্বে প্রস্তাবিত প্রকল্পের ওপর মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে এমদাদ উল্লাহ টিবিএসকে জানান, পিইসি সভায় প্রকল্পটির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, "শেরে বাংলানগর একটি অফিস পাড়া হিসেড়ে গড়ে উঠেছে। ফলে প্রস্তাবিত আবাসন প্রকল্প যৌক্তিক হবে কি-না, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আরো পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে।"
তিনি আরও জানান, বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য কী পরিমাণ আবাসন চাহিদা রয়েছে, তা পর্যালোচনা করে প্রকল্প প্রস্তাব পুনর্গঠন করতে বলা হয়েছে।
এমদাদ উল্লাহ বলেন, "সরকার এখন সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্তা সাধণ করছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশনা রয়েছে। যদিও প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনেক সময় লাগবে। এক্ষেত্রে সব দিক বিবেচনায় এখন এই প্রকল্পে বাস্তবায়ন করা যৌক্তিক হবে কি-না সে বিষয়ে আরো পর্যালোচনা দরকার রয়েছে।"
অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধার বড় আবাসন প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "আমরা আমাদের প্রস্তাব দিয়েছি, যেখানে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য একটি মানস্মত আধুনিক সুবিধা-সুবিধার প্রস্তাব রয়েছে। এখন সরকার এটা করবে কি-না, সেটা সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। প্রস্তাব দিতেও সমস্যা নেই।"
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, সভায় প্রকল্পের বিস্তারিত ডিজাইন উপস্থাপন করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। যে প্রস্তাব এই প্রকল্পে করা হয়েছে তাতে প্রস্তাবের চেয়ে আরো বেশি ব্যয় করতে হবে।
তাছাড়া ইতোমধ্যে শেরে বাংলানগরের সরকারের বিভিন্ন গুরুত্ব সরকারি দপ্তরের কার্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। ফলেও প্রস্তাবিত জায়গায় আবাসিক ভবন নির্মাণ হবে না-কি সরকারের অনান্য অফিস ভবন হবে, সে বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন ।
এর আগে গৃহায়তন গণর্পূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে শেরে বাংলানগরের বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রের পশ্চিত পাশে সচিবালয় স্থানান্তরে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনেও পাঠানো হয়। কিন্ত সরকার ওই স্থাপনে সচিবালায় নির্মাণের প্রস্তাবে সম্মতি দেয়নি এবং প্রকল্প প্রস্তাব ফেরত পাঠানো হয়।
প্রকল্পের যৌক্তিকতা
প্রকল্প প্রস্তাবে গৃহায়ণ গণপূর্ত অধিদপ্তর বলছে, ঢাকা শহরে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীর সংখ্যা ১৪৮৯১৫ জন। কিন্তু তাদের বসবাসের জন্য ১৩,০৫২টি ফ্ল্যাট রয়েছে।
যা মোট চাহিদার মাত্র ৮ ভাগ এবং প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ফলে অনেক কর্মকর্তা/কর্মচারী সরকারি বাসা না পেয়ে অধিক ভাড়া দিয়ে বেসরকারি বাসায় থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। যা তাদেরকে আর্থিক অসুবিধার মধ্যে ফেলছে।
সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসন সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সুবিধা ৮ ভাগ থেকে ৪০ ভাগে উন্নীতকরণের অনুশাসন প্রদান করেন।
সেই অনুযায়ী বিদ্যমান আবাসন সংকট নিরসনে ঢাকার শেরে বাংলা নগরে পুরাতন ১ তলা/২ তলা ভবন ভেঙে সেখানে হাউজিং প্রকল্প গ্রহণ করার পরামর্শ প্রদান করা হয়।
প্রকল্পে যা আছে
প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, ১২৫০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট বিশিষ্ট ২০টি ১০ তলা ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৮০.৮৯ কোটি টাকা।
অন্যদিকে ১৫০০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট বিশিষ্ট ১০ তলা ভবন নির্মাণ হবে ১১টি। যাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮৫ কোটি তাকা। এছাড়া ১৮০০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট বিশিষ্ট ১১টি ১০ তলা ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। যাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৫৪ কোটি টাকা।
প্রস্তাবে ২২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আবাসিক এলাকায় একটি কিমিউনিটি ফ্যাসেলিটি জোন স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। যেখানে ৬ তলা পাঁচটি ভবনে স্কুল, কলেজ, মসজিদ, শপিংমল ও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
কমিউনিটি সেন্টারের ছাদে ২.৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সুইমিংপুল স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে লেকপাড় ওয়াকওয়ে নির্মাণের প্রস্তাবও রয়েছে। এছাড়া ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে কর্মকর্তাদের জন্য দুটি বোট হাউজ নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর লেকপ্লাজা নির্মাণে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে রান্নাঘরের কেবিনেট, ওয়াল আলমারি, ফলস সিলিং-এর মতো অভ্যন্তরীণ ডেকোরেশনে ধরা হয়েছে প্রায় ১৫৫ কোটি টাকা। এছাড়াও প্রকল্পটিতে পাঁচটি ৬ তলা ভবন এবং চারটি ৩ তলা বিল্ডিংও রয়েছে।