আগামীকাল দেশব্যাপী প্রার্থনা ও গণমিছিলের ঘোষণা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামীকাল শুক্রবার (২ আগস্ট) দেশব্যাপী প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) গণমাধ্যমকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় গত ১৬ জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীসহ অন্তত ২৬৬ জন মানুষ শহীদ হয়েছেন বলে দাবি করছেন আন্দোলনকারীরা। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
তবে গণমাধ্যমগুলোর খবরে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে ভিন্ন তথ্য দেখা যাচ্ছে। কোনো গণমাধ্যমে মৃতের সংখ্যা ২১১ জন, আবার কোনো গণমাধ্যমের রিপোর্টে নিহতের সংখ্যা ২০৯ বলেও দেখা গেছে।।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গণহত্যা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামীকাল মসজিদে জুমার নামাজ শেষে দোয়া, শহীদদের কবর জিয়ারত, মন্দির, গির্জাসহ সব উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন ও জুমার নামাজ শেষে ছাত্রজনতার গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
ছাত্রদের এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে শ্রমিক, পেশাজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, মানবাধিকারকর্মী, বুদ্ধিজীবী, আলেম-ওলামাসহ বাংলাদেশের সব স্তরের নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
একইসঙ্গে মসজিদের ইমাম ও খতিব এবং মাদরাসার শিক্ষকদের 'ছাত্র জনতার গণমিছিল' বের করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
ছয় দিন পর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয় থেকে ছাড়া পেয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে নিজের ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে প্রশ্ন করেছেন, 'ছয় দিন ডিবি হেফাজতে ছয়জনকে আটকে রাখা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের পুরো তরুণ প্রজন্মকে আটকে রাখবেন কীভাবে।'
তিনি বলেছেন, 'যতদিন গণগ্রেপ্তার, জুলুম ও নির্যাতন চলবে, ততদিন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনও চলবে।'
এর আগে আজ বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পান সারজিসসহ আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক।
জানতে চাইলে সারজিস আলম ফেসবুকে ওই পোস্ট দেওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে বলেছেন, 'পোস্টটি দেওয়ার ঘণ্টাখানেক পরে আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট উধাও হয়ে গেছে। অ্যাকাউন্ট দেখা যাচ্ছে না। সেটি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা চলছে।'
ফেসবুক পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, 'যতদিন না এ বাংলাদেশ আন্দোলনকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে, গণগ্রেপ্তার, জুলুম, নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে; ততদিন এ লড়াই চলবে।'
সারজিস আরও লেখেন, 'কথা দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কাউকে গ্রেপ্তার করবেন না, মামলা দিয়ে হয়রানি করবেন না; আপনারা কথা রাখেননি। আপনারা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর আঘাত করেছেন। সারাদেশে আমার স্কুল–কলেজের ভাইবোনদের ওপর লাঠিপেটা করেছেন। যাকে ইচ্ছা তাকে জেলে পাঠিয়েছেন। আন্দোলনকারীকে খুঁজে না পেলে বাসা থেকে ভাইকে তুলে নিয়েছেন। বাবাকে হুমকি দিয়েছেন! মাশরুর তার উদাহরণ।'
সারজিস আরও লেখেন, 'ছয় দিনের ডিবি হেফাজত দিয়ে ছয়জনকে আটকে রাখা যায়, কিন্তু এই বাংলাদেশের পুরো তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে আটকে রাখবেন? দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থ পাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছেন প্রতিনিয়ত, সেগুলো কীভাবে নিবৃত্ত করবেন?'
সারজিস আরও লিখেছেন, 'পুলিশ ভাইদের উদ্দেশে একটা কথা বলি। এ দেশের মানুষের ক্ষোভ আপনাদের ওপর নয়, পুলিশের ওপর নয়। এই ক্ষোভ আপনার গায়ের ওই পোশাকটার ওপর। যে পোশাকটাকে ইউজ করে বছরের পর বছর আপনাদের দিয়ে এ দেশের অসংখ্য মানুষকে দমন-পীড়ন করা হয়েছে, অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে, জেল আর আদালতের প্রাঙ্গণে চক্কর কাটানো হয়েছে, সেই পোশাকটার ওপর। ওই পোশাক ছেড়ে আসুন আমাদের সঙ্গে, বুকে টেনে নেব।'