রাজনৈতিক দল কীভাবে রাজনীতি করবে তার জন্য আইন করা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, রাজনৈতিক দল কীভাবে রাজনীতি করবে তার জন্য আইন করা হবে। সে আইন মেনে যারা রাজনীতি করবেন, তারা পার্টি পরিচালনা করতে পারবেন। আর যারা মানবেন না, তারা রাজনীতি করতে পারবেন না। এজন্য আইন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আজ রোববার (১১ আগস্ট) সচিবালয়ে প্রথম অফিস করতে গিয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'আমি অলরেডি কয়েকজনকে রিকোয়েস্ট করেছি যে, একটা অ্যাক্ট (আইন) তৈরি করে ড্রাফটটা (খসড়াটা) আমার কাছে দেন। এটা নিয়ে আমরা আইনসংক্রান্ত সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করব। আপনি পলিটিক্যাল পার্টি করবেন বাংলাদেশে, রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) করতে হবে। আপনি স্টক মার্কেটে (পুঁজিবাজারে) যখন যান, তখন রেজিষ্ট্রেশন করেন না? আপনি যখন কোম্পানি খোলেন তখন রেজিষ্ট্রেশন করেন না? পলিটিক্যাল পার্টি করলে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে। পলিটিক্যাল পার্টি করবে আর চাঁদাবাজি করবেন! নো মোর। অলরেডি আমরা অনেক রক্ত দিয়েছি। এক হাজার লোক রক্ত দিয়েছে। পুলিশ রক্ত দিয়েছে। দেশটা চাটুকারে ভরে গেছে। মাই গড!'
তিনি বলেন, রাজনীতি করতে হলে পলিটিক্যাল পার্টি অ্যাক্ট অনুযায়ী করতে হবে। তাতে কার অসুবিধা হলো, না হলো– সেটা দেখার বিষয় নয়। আমি যতক্ষণ পর্যন্ত আছি, আমি এটা করে ছাড়ব। আমি ইলেকশন কমিশনে ছিলাম, সেখানে অনেক কিছু করেছি। পলিটিক্যাল পার্টি অ্যাক্টের মধ্যে যদি থাকেন, পলিটিক্স করতে পারবেন, নাহলে পারবেন না। আপনারা ডিক্টেটোরিয়াল ম্যানার (স্বৈরাচারী আচরণ) করে যাবেন, এটা হবে না।
আওয়ামী লীগের উদাহরণ দিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সব রাজনৈতিক দলের জন্য আমি আরেকটি বার্তা দিচ্ছি। 'একটা পলিটিক্যাল পার্টির অবস্থা আজকে দেখেন। এত বড় একটা দল, এত ঐতিহ্যবাহী দল। যার নামের সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা জড়িত, আজকে তাদের সদস্যদের পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। তাদের জায়গায় যদি আপনি মনে করেন, আমি আসলাম দখল করবো। বাজার দখল করবো, ঘাট দখল করবো, এটা দখল করবো, চাঁদাবাজি করবো। কিছুদিন করেন। কিন্তু, আমি সেনাপ্রধানকে অনুরোধ করেছি। পা ভেঙ্গে দিতে আপনাদের। আই ডোন্ট কেয়ার। গো টু হেল।'
এম সাখাওয়াত বলেন, 'কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজি হচ্ছে। শুনছি একটি ব্যাংকের দখল নেওয়ার জন্য মারামারি হয়েছে। একটা বিশেষ পিরিয়ড আছে। করেন, কিন্তু ফল ভালো হবে না। আমি আওয়ামী লীগও না, রাজনীতিবিদও না। আমার ব্যাকগ্রাউন্ড হচ্ছে ফৌজি। যা বলব– তাই কিন্তু করবো। একদিন থাকি, আর তিনদিন থাকি। যে দলই হোক– আমি বারবার বলছি, চাঁদাবাজি করবেন না। আমি জনগণকে বলবো যারা চাঁদাবাজি করতে আসবে, তাদের ওখানেই ধরেন। ল অ্যান্ড অর্ডার নিয়ে আসুন। দেশ এইভাবে চলতে পারে না। এই দেশ আরেক দিকে যেতে পারে না। আমরা কাউকে লিজ বা ইজারা দিতে পারি না।'
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, 'আপনাদের পূর্বপূরুষ ৩০ লাখ লোক রক্ত দিয়ে, দুই লাখ মা-বোন ইজ্জত দিয়েছে। আপনাদের লজ্জা করে না। এরপর বাচ্চা বাচ্চা ছেলেপেলেরা একটা উন্মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে দিল। আপনাদের লজ্জা করে না। আপনারা তাদের রক্তের ওপর দিয়ে পলিটিক্স করবেন, আর চাঁদাবাজি করবেন! এমন কিছু করবেন না, যাতে পরে আমাকে আপনারা গালাগালি করেন। পলিটিক্যাল পার্টিকে অনুরোধ করছি, আপনারা আপনাদের লোক সামলান।'
পুলিশের কাজে যোগদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'পুলিশ মোর্যালি ডাউন। চেষ্টা করছি যাতে মনোবল ফিরে আসে। পুলিশ ফিরে না আসলে- আপনারা দেখেছেন কি হতে পারে। একটু আগে দেখলাম ব্যাংকের মধ্যে মারামারি। যে যার খুশিমতো করছে।'
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পুলিশদের মধ্যে এখনো যারা জয়েন করেনি, তাদের জন্য শেষ যোগদানের তারিখ হচ্ছে বৃহষ্পতিবার। বৃহষ্পতিবারের মধ্যে তারা যদি জয়েন না করেন, তাহলে ধরে নেওয়া হবে তিনি চাকরি করতে ইচ্ছুক নন। এবিষয়ে আমি আইজিপি, র্যাবের ডিজি, ডিএমপি কমিশনারের সাথে আলাপ করেছি।
তিনি বলেন, এই বৃহষ্পতিবারের মধ্যে যে যার জায়গায় চলে যাবেন। ডিউটিতে থাকবেন। যা হয়ে গেছে, এরপরে অহেতুক কারোর গায়ে কেউ হাত দেবেন না। বিচার করার প্রক্রিয়া আমরা করবো। বিচার বিভাগ, বিচার করবে। যারা দোষী প্রমাণিত হবে, তারা বিচারের আওতায় আসবে। ঢালাওভাবে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না।
পুলিশকে সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য নাগরিকদের উদ্দেশ্যে এম সাখাওয়াত বলেন, 'জনগণকে আমি শুধু এইটুকু বলতে চাই, আপনারা পুলিশের গায়ে হাত উঠাবেন না। আপনারা এখন নিজেরাই দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। কখন কী টেলিফোন আসছে, কখন ডাকাত আসছে– এরকম একটা অবস্থা। আমার কাছে টেলিফোন আসছে যে অমুক জায়গায় ডাকাতি হচ্ছে। আমি বলছি আল্লাহ আল্লাহ করো। আর কী করার আছে! যদি ডাকাতি হয়, আর পুলিশ না থাকে আমরা কী করবো?'
তিনি বলেন, একটু আগে দেখলাম, আনসারের একটি অংশ রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের কিছু দাবিদাওয়া আছে। সবারই দাবিদাওয়া আছে। আমারও দাবিদাওয়া আছে। আমার দাবি হলো– আপনারা কাজে ফিরে যান। আমি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে কথা দিচ্ছি আমারপক্ষে যতদূর সম্ভব করবো।
আনসারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা দয়া করে রাস্তা ছেড়ে দেন। অন্যান্য ফোর্স ও বাহিনী যারা আছে, প্রত্যেকের সাথে আমি কথা বলব। সবাই আমার পরিচিত। আমি যা বলব– তাই করবো। করার চেষ্টা করবো।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে যাওয়ার আগে একটি দলকে (জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবির) নিষিদ্ধ করেছিল, তাদের ক্ষেত্রে আপনাদের সিদ্ধান্ত কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এটা পলিটিক্যাল বিষয়।'
গণভবন, সংসদ ভবন, ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে যে ভাংচুর, লুটপাট হয়েছে, সে বিষয়ে কি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো ব্যক্তিগত সম্পদ, রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এটা আমি নিন্দা করি। আমি আশা করব, আমাদের স্টুডেন্টরা আছে এখনও রাস্তায়, তারা আর এমনটা হতে দেবে না। রাষ্ট্রের সম্পদ তৈরি করতে বহু টাকা খরচ হয়েছে। যা হয়েছে তা সঠিক হয়নি। তবে এটাও মনে রাখতে গণঅভ্যুত্থান কোনো সীমাবদ্ধতার মধ্যে হয় না।
সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি প্রত্যেকটি নাগরিকদের কর্তব্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর গায়ে যেন কোনো হাত না পড়ে। যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ আছেন এটা তাদেরও দায়িত্ব। আপনি (সংখ্যাগরিষ্ঠ) যদি তা না করেন– সেজন্য আপনাকেও জবাব দিতে হবে। 'বৃহত্তর সোসাইটিকে অনুরোধ করবো, তারা (সংখ্যালঘুরা) আপনাদের ভাই। একসাথে বড় হয়েছেন। তাদের পাশে থাকুন। যেকোন নিপীড়িত লোকদের পাশে থাকুন।'