ভাঙচুর ঠেকাতে মেট্রোরেলকে জরুরি সেবা হিসেবে ঘোষণার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মেট্রোরেলকে জরুরি সেবা হিসেবে ঘোষণা করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। আজ রোববার (২৫ আগস্ট) মেট্রোরেল সচিবালয় স্টেশনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
মেট্রোরেলকে কেপিআই (কী পয়েন্ট ইনস্টলেশন) হিসেবে ঘোষণা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, "মেট্রোরেল যাতে ভাঙচুরের শিকার না হয়, সেজন্য এটাকে কেপিআই হিসেবে আপগ্রেড করার চেষ্টা করছি। এতে এর নিরাপত্তা বাড়বে এবং একে একটি জরুরি সেবা হিসেবে ঘোষণা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে কেউ এই সার্ভিসটাকে ব্যাহত করতে না পারে।"
ভাঙচুর বা ক্ষতি করার চেষ্টাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, "এখানে যে সমস্যা হয়ে গেছে, যেহেতু এটি গণ-আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিল, এখন প্রাথমিকভাবে সব মামলা তুলে নেওয়া হয়েছে।কিন্তু আপনারা সবাই জানেন, যারা দেশকে পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করেছে। তাদের পক্ষে এ ধরণের কাজ তো করা সম্ভব না। এটা দুস্কৃতিকারীদের কাজ। আপনাদের কাছে তাদের ভিডিও আছে, ফুটেজ আছে, আমরা এর জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেব"।
কোটাসংস্কার আন্দোলনের সময় মেট্রোরেলের স্টেশন ভাঙচুরের কারণে ৩৭ দিন ধরে রেল বন্ধ ছিল। রোববার সকালে মেট্রোরেল পুনরায় চালু হলে, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আগারগাঁও থেকে মেট্রোরেলে করে সচিবালয় স্টেশনে আসেন এবং সাংবাদিকদের সামনে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, "আপনারা জানেন এটি একটি জনপ্রত্যাশার সরকার। আমি উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরেই মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, তোমার প্রথম কাজ হবে মেট্রোরেল চালু করা। আমরা সেটাই করেছি। এখানে বোর্ড পুনর্গঠন করতে হয়েছে। বোর্ডের সভা ছিল, কিছু দাবি-দাওয়া ছিল, সেগুলো আমরা দেখেছি।"
"এর আগে ১৭ তারিখ মেট্রোরেল চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। এটা বড় অন্যায় কাজ করেছে। তিন লাখ যাত্রীকে জিম্মি করে কোনো দাবি আদায়ের চেষ্টা শুভ লক্ষণ নয়।"
দেশে দাবি-দাওয়ার মৌসুম চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখন সারা দেশে একটা দাবি দাওয়ার মৌসুম চলছে। সবাই দাবি দাওয়া চায়। সবাই চায় বৈষম্য দুর হবে, সবাই চায় বঞ্চনা থেকে তারা মুক্তি পাবেন। ১৬ বছরের বঞ্চনা… তো সরকারের ১৬ দিন হয়েছে, অনন্ত ১৬ মাস সময় দেন। আমরা আস্তে আস্তে এগুলো সবই বিবেচনা করব।
সব দাবি পূরণ করলে দেশে মূল্যস্ফীতি দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, "কিন্তু মনে রাখতে হবে, এসব দাবি-দাওয়ার সঙ্গে আর্থিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সরকারের যদি রাজস্ব না বাড়ে বা অন্যান্য আয় না বাড়ে, তাহলে অর্থ কোথা থেকে আসবে? যদি টাকা ছেপে দিতে হয়, তাহলে মুদ্রাস্ফীতি হবে, সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়বে। এটি অনভিপ্রেত ঘটনা এবং আমরা চাই ভবিষ্যতে এমন কিছু না ঘটুক।"
মেট্রোরেলের অন্যান্য লাইনগুলো কবে চালু হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, গত তিন-চার দিন আগে মেট্রোরেলের জাপানি বাস্তবায়নকারীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। অন্যান্য লাইন চালুর ব্যাপারে কাজ চলছে। আজ বিকালে জাপানের রাষ্ট্রদূত আমার সঙ্গে দেখা করতে আসবেন। কাজীপাড়া এবং মিরপুর-১০ এর লাইন কীভাবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চালু করা যায়, সে ব্যাপারে আলোচনা হবে। মেট্রোরেলের এমডিকে (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) বলেছি, ক্ষয়ক্ষতি কী হয়েছে তা নির্ধারণ করে একটি সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দিন, কখন এটি চালু হবে।