ভেঙে পড়তে পারে গাজী কারখানার পোড়া ভবনটি, এখনও কোনো মরদেহের সন্ধান মেলেনি
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের তৃতীয় দিনেও ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি দমকল বাহিনীর সদস্যরা। নিখোঁজ স্বজনদের অপেক্ষার প্রহর আরও বাড়ল। তবে ভেতরে পাঠানো ফায়ার সার্ভিসের ড্রোনের ফুটেজে কোনো মরদেহের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
বুধবার (২৮ আগস্ট) সকাল থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে কারখানার ভেতরে। মঙ্গলবার মধ্যরাতেও একবার জ্বলে উঠেছিল আগুন। ভেতরে জমে থাকা তাপ থেকে আগুন জ্বলে উঠছে বিভিন্ন স্থানে। ভবনের চার, পাঁচ ও ছয় তলার ফ্লোর ধসে পড়েছে। কিছুক্ষণ পরপরেই বিকট শব্দে খসে পড়ছে ভবনের পলেস্তারা এবং দেয়ালের ইট। এমন পরিস্থিতিতে ভেতরে প্রবেশ করে উদ্ধারকাজ চালানো অসম্ভব বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
দুপুর সাড়ে ৩টায় গাজী টায়ার কারখানা পরিদর্শনে আসে জেলা প্রশাসনের গঠিত ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি। পরিদর্শন শেষে বিকাল ৫ টায় সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমান বলেন, 'এই ভবনটির বিষয়ে বিশেষজ্ঞদলের মতামত নেবো আমরা। আমরা জিজ্ঞাস করব আমাদের স্থানীয় উদ্ধারকর্মীরা এখানে উদ্ধারকাজ চালাতে পারবে কি না? তারা যদি না পারে তাহলে আরও এক্সপার্ট এনে উদ্ধার কাজ চালানোর সুপারিশ করব।'
নিখোঁজদের বিষয়ে তিনি বলেন, 'যারা বলছেন তাদের স্বজনরা নিখোঁজ রয়েছে তাদের নাম আমরা লিপিবদ্ধ করে রেখেছি। তবে নির্ধারিত সংখ্যাটা আমরা এখনই বলতে পারছি না। ভেতরে পাঠানো ড্রোন ভিডিওতে কোনো মৃতদেহের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এমনও হতে পারে প্রচুর দাহ্য পদার্থ এবং দীর্ঘ সময় আগুন জ্বলে থাকার কারণে মৃতদেহ অক্ষত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। প্রায় ২২ ঘন্টা ব্যাপক আগুন ছিল, এরপরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পরেও দফায় দফায় আগুন জ্বলে উঠেছিল। আমরা যখন ভেতরে প্রবেশ করতে পারব তখন আমরা নিশ্চিত হতে পারব আদৌও ভেতরে কেউ ছিল কিনা। তবে যদি একজন মানুষও নিখোঁজ থাকে, সেটি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখব।'
উদ্ধার অভিযানের ভবিষ্যৎ জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এই মুহুর্তে আমাদের কাছে থাকা সর্বশেষ তথ্য হচ্ছে ভবনের তিনটি ফ্লোর ধসে পড়েছে। ধসে পড়া ফ্লোরের ভেতরেও কিছুটা আগুন আছে। আজও (বুধবার) ফায়ার সার্ভিসের পক্ষে উদ্ধার কাজ চালানো সম্ভব নয়। তবে তারা এই ফোর্স ও যন্ত্রপাতি দিয়ে আদৌও উদ্ধার অভিযান চালাতে পারবেন কি না সেই বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সিদ্ধান্তের পরে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এদিকে বুধবারও গাজী টায়ারের গেটের সামনে অপেক্ষমান স্বজনদের ভিড় দেখা গেছে।
কথা হয় রাহিমা নামের এক নারীর সাথে। তিনি জানান, 'তার দুই ভাই শাহাদাৎ ও সাব্বির এসেছিল গাজী টায়ার কারখানায়, যখন লুটপাটের মহোৎসব চলছিল। দীর্ঘ সময় তাদের ফিরে আসতে না দেখে ঘটনাস্থলে আসেন ভগ্নিপতি জমির আলী। এরপর থেকে তাদের তিনজনের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তার ধারণা ভেতরে আটকে মারা যেতে পারেন তাদের তিনজন।'
এদিকে ঘটনার দিন মাইকিং করে লোকজন জড়ো করার কথা জানিয়েছে কারখানার পেছনে অবস্থিত খাদুর গ্রামের বাসিন্দারা।
তারা জানান, ২৫ আগস্ট বেলা ১২টার দিকে রূপগঞ্জের রূপসী খাদুন গ্রামের মসজিদগুলো থেকে একে একে শুরু হয় মাইকিং। বলা হয়, আপনাদের যাদের জমি রয়েছে গাজীর কারখানার ভেতর, সবাই একত্র হন। আমরা আমাদের দখল করা জায়গা বুঝে নেব।' নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসিন্দারা মাইকিং করার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ঘোষণার পর থেকেই বাড়তে থাকে উত্তেজনা। খাদুন গ্রামের বাসিন্দারা দুপুরের পর কারখানার পূর্ব দিকে জড়ো হতে শুরু করে। বেলা ৩টার দিকে একদল মানুষ ভেতরে প্রবেশ করে লুটপাট শুরু করে। এর কিছু সময় পরেই বরাব এবং বরপা থেকে দুটি গ্রুপ এসে লুটপাট চালানো শুরু করে।
তবে কারখানার কোনো শ্রমিক নিখোঁজ নেই বলে নিশ্চিত করেছেন গাজী টায়ার্সের কর্মকর্তারা।
কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, গত ৫ তারিখ থেকে আমাদের কারখানা বন্ধ। গত ২৫ তারিখ ভেতরে কয়েকজন অ্যাডমিন বিভাগের লোকজন ছিলেন। মাইকে ঘোষণা দিয়ে কারখানায় হামলা চালানো হয়। আমাদের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নিখোঁজ হয়নি। যারা নিখোঁজ হয়েছে তারা লুটপাট করতেই এসেছিল এখানে।