চিকিৎসকদের চার দাবি, নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা
চিকিৎসককে মারধরের প্রতিবাদ এবং নিরাপত্তার দাবিতে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য 'কমপ্লিট শাটডাউন' চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসকরা।
আজ রোববার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (ঢামেক) নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক সার্জন আব্দুল আহাদ সংবাদমাধ্যমকে এই কর্মবিরতির কথা জানান।
তিনি বলেন, দেশের সমস্ত সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, চেম্বার ও চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে কমপ্লিট শাটডাউন চলবে। এই সময়ে কোনো সেবা দেওয়া হবে না।
চিকিৎসকরা চার দফা দাবি জানিয়ে বলেছেন, দাবি আদায় ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশে সবধরনের চিকিৎসাসেবা খাতে কমপ্লিট শাটডাউন চলবে।
চিকিৎসকদের দাবিগুলো হলো:
- হাসপাতালের মতো একটি জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে যে সকল ব্যক্তি বা কুচক্রী মহল এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িত তাদের সকলকে চিহ্নিত করে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করে দ্রুত বিচার আইনের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
- নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে অবিলম্বে দেশের সকল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য পুলিশের (আর্মড ফোর্স) মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
- নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে হাসপাতালে রোগীর ভিজিটর (ভিজিটর কার্ডধারী) ব্যতীত বহিরাগত ব্যক্তি বা মহল কোনোভাবেই হাসপাতালে ভেতর প্রবেশ করতে পারবে না, যা স্বাস্থ্য পুলিশের (আর্মড ফোর্স) মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
- হাসপাতালে রোগীর সেবাপ্রদানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অসংগতি/অবহেলা পরিলক্ষিত হলে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ প্রদানের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা যেতে পারে। তবে কোনোভাবেই আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না।
এই শাটডাউনের সময় চিকিৎসার অভাবে যদি কেউ মারা যায়, সেই দায় কার—এমন প্রশ্ন করা হলে সমন্বয়করা বলেন, 'সেই দায় সম্পূর্ণ প্রশাসনের। তারা যত দ্রুত এই দাবি মেনে নেবে, আমরাও তত দ্রুত চিকিৎসাসেবায় ফিরব।'
এর আগে চিকিৎসাধীন এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘিরে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে চিকিৎসকদের মারধর এবং আরেক ঘটনায় জরুরি বিভাগে ভাঙচুরের প্রতিবাদে কর্মবিরতি শুরু করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
এদিকে ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মো. বাচ্চু মিয়া আজ বেলা ১২টার দিকে টিবিএসকে জানান, সকাল থেকে জরুরি বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগের সেবা বন্ধ রয়েছে। এতে জরুরি সেবা নিতে আসা রোগীরাসহ সব রোগীরাই চরম বিপাকে পড়েছে বলে জানান তিনি।
গতকাল শনিবার (৩১ আগস্ট) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর দুটি হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) রাতে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহসানুল ইসলামকে (২৫)। তার মৃত্যু হয় শনিবার সকালে। ওই ঘটনায় আহসানুলের ইসলামের চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে তার স্বজনরা দায়িত্বরত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারধর করেন।
আবার গতকাল শনিবার রাতে খিলগাঁও থেকে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহতরা ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসেন। পরে অন্য গ্রুপের লোকজন চাপাতিসহ হাসপাতালে জরুরি বিভাগের ভেতরে ঢুকে পড়ে ভাঙচুর চালায়।
এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকেরা দোষীদের সিসি টিভি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের আলটিমেটাম দেন। তারপর আজ সকাল থেকে তারা কর্মবিরতিতে যান।