পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারে এনবিআরকে চিঠি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের
চলমান বন্যায় দেশের অন্তত ১১টি জেলায় কৃষি উৎপাদন ক্ষতির মুখে পড়ায় পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে। এতে কিছু স্থানে পণ্যগুলোর দাম বাড়ছে, এবং তা আরও বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় পণ্য তিনটির আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক প্রত্যাহার করে – আমদানি উন্মুক্ত করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) একটি চিঠি দিয়েছে।
বর্তমানে পেঁয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ আবগারী শুল্ক, ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রক শুল্ক বিদ্যমান রয়েছে। ডিম ও আলু আমদানিতে আবগারী শুল্ক ২৫ শতাংশ, নিয়ন্ত্রক শুল্ক ৩ শতাংশ এবং অগ্রিম আয়কর (এআইটি) রয়েছে ৫ শতাংশ করে। যা পুরোপুরি প্রত্যাহার করে আমদানি উৎসাহিত করতে পারলে স্থানীয় বাজারমূল্য কমানো সম্ভব হবে। এ পদক্ষেপ মূল্যস্ফীতিকেও কমাবে বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ঢাকার বাজারে আলু ও পেঁয়াজের দাম কয়েক মাস ধরেই চড়া। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৯ শতাংশ বেশি। প্রতি কেজি পেঁয়াজ কিনতে কমপক্ষে ১২০ টাকা লাগছে, যা গত বছরের তুলনায় ৩১.৪৩ শতাংশ এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৪৮.২৮ শতাংশ বেশি।
স্থিতিশীল ডিমের বাজারেও বন্যার কারণে সরবরাহ সংকট তৈরি হচ্ছে, বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোতে ডিমের দাম বাড়তে শুরু করেছে। প্রতি ডজন ডিম যেখানে ১৫৫-১৬০ টাকায় বিক্রি হতো সেটা আক্রান্ত এলাকাগুলোতে ১৭০ টাকায় উঠেছে, এবং দেশের অন্যান্য স্থানেও দাম বেড়ে যাবার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এই অবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম, পেঁয়াজ ও আলুর আমদানি উন্মুক্ত করে দিতে চায়। একইসঙ্গে চায় আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক প্রত্যাহার করা হবে, যাতে করে কম খরচে পণ্যগুলো আমদানি করে দেশের বাজারকে স্থিতিশীল রাখা যায়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, প্রতি বছর দেশে ৬-৭ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হলেও- বিশেষ অনুমতি ছাড়া ডিম ও আলু আমদানি হয় না। দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৮ লাখ টন এবং আলুর চাহিদা রয়েছে ৯০ লাখ টন। প্রতিদিন সারাদেশে প্রায় ৪ কোটি পিস ডিম উৎপাদন হয়। কিন্তু বন্যা আক্রান্ত ১১টি জেলায় ডিম ও মুরগির উৎপাদন অবকাঠামো ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি, অনেক মুরগি মারা গেছে বলে জানায় মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
সাম্প্রতিক বন্যায় দেশের ১১টি জেলা ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়। এসব জেলার কৃষি পণ্য ও পোল্ট্রি শিল্প মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। জেলাগুলোতে বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহেও কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে। কারণ এখনো পুরোপুরিভাবে সব জায়গা থেকে পানি নামেনি।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন পণ্য তিনটির আমদানি ও স্থানীয় উৎপাদন বিশ্লেষণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে।
এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত সরকার পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য ৫৫০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করেছে, এবং ৪০ শতাংশ বাড়তি রপ্তানি শুল্ক আরোপ করেছে। অন্যদিকে সবমিলে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রদান করতে হয় কাস্টমসকে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, দেশে গত বছরের তুলনায় এবারে ১২ লাখ টন আলুর উৎপাদন কম হয়েছে, যার একটি নেতিবাচক প্রভাব কয়েকমাস ধরেই বাজারে রয়েছে এবং দীর্ঘ সময় ধরে রেকর্ড পরিমাণ দামে আলু কিনতে হচ্ছে ভোক্তাকে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, শর্তসাপেক্ষে ডিম ও আলু আমদানিযোগ্য হলেও বর্তমানে এ দুটি পণ্য আমদানির অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। তাই সুনির্দিস্ট মেয়াদে পণ্য দুটি আমদানিতে শুল্ক রেয়াত সুবিধা প্রদান করা হলে- সরকারের কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আহরণে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা নেই।
কৃষি এবং মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলছে, মাছ ও গবাদিপশু খাতে এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতি ছাড়িয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া ধান, সবজি, ফল, গ্রীষ্মকালীন সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ লাখ মে. টনের। টাকার অংকে যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।