বন্যা-কবলিত এলাকায় ‘ইমার্জেন্সি হেলথ রেসপন্স টিম’ গঠনের আহ্বান বিশেষজ্ঞদের
বন্যা-কবলিত ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ বাড়তে থাকায় এসব এলাকায় 'ইমার্জেন্সি হেলথ রেসপন্স টিম' গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মহাখালির ব্র্যাক সেন্টার অডিটরিয়ামে আয়োজিত 'পোস্ট-ফ্লাড হেলথ চ্যালেঞ্জেস মাল্টি-স্টেকহোল্ডার রিভিউ অফ ফিল্ড রিয়ালিটিস অ্যান্ড অ্যাকশন প্রায়োরিটিস' শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান বক্তারা।
ব্র্যাক এবং ইউএইচসি ফোরামের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বন্যা-কবলিত এলাকায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে কলেরা স্যালাইন, কলেরায় আক্রান্ত রোগীর শিরায় প্রয়োগযোগ্য স্যালাইন, ডায়রিয়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ইমার্জেন্সি হেলথ রেসপন্স টিম গঠিত হলে— যেখানে যে সেবা প্রয়োজন, সেখানে তা এই টিমের মাধ্যমে দ্রুত সমন্বয় করে দেওয়া যাবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ বলেন, "বন্যা–পরবর্তী সময়ে তৈরি হওয়া অনেক সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর হচ্ছে পানিবাহিত ও মশাবাহিত রোগ মোকাবিলা। সেইসঙ্গে সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে।"
তিনি বলেন, "বন্যার পানি ধরাও নিরাপদ না। এ সময় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেয়। সেই সংকট থেকে তৈরি হয় পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব। এলাকায় স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।"
"একটি ইমার্জেন্সি হেলথ রেসপন্স টিম গড়ে তুলতে হবে। এই টিমের মাধ্যমে সমন্বয় করতে হবে— যেখানে যে সেবা প্রয়োজন, সেখানে তা দ্রুত পৌঁছে দিতে হবে," যোগ করেন তিনি।
এছাড়া, পোস্ট ট্রমা-ইনফেকশন, চর্মরোগ, পানি শূন্যতাসহ বন্যা-পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন রোগ এবং এসব রোগের ক্ষেত্রে বিশেষ করে শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডা. আহমেদ কবির বলেন, হাসপাতালগুলোয় ডায়রিয়া ও চর্ম রোগী বাড়েছে। ফলে চিকিৎসাকরা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
তিনি বলেন, "কলেরার স্যালাইনসহ ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। এখন আমাদের এখানে ২,০০০ ডায়রিয়া রোগী ভর্তি আছেন। সার্বিক বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আমরা জানিয়েছি দুই-তিনদিনের মধ্যে স্যালাইনসহ ওষুধ সরবরাহ করা হলে সংকট নিরসন হবে।"
জেলার ৫টি উপজেলায় বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ৬৪টি মেডিকেল টিম নিরলসভাবে কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে, কুমিল্লাহ জেলা সিভিল সার্জন নাসিমা আক্তার বলেন, "ভয়াবহ বন্যায় ডায়রিয়া, চোখের সংক্রমণ, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে কুমিল্লায়।"
কুমিল্লা এরিয়া কমান্ডার ও জিওসি ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম বলেন, "এই সংকটের সময়ে কোথায় কোথায় গর্ভবতী নারী আছেন, তা নিয়ে আমাদের ডেটাবেজ করতে হবে। একটি টিম থাকবে— যাদের কাছে নৌকা থাকবে, ডাক্তারও থাকবে। প্রয়োজনে রোগীর কাছে ডাক্তার নিয়ে আসার ব্যবস্থা থাকতে হবে।"
মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম বলেন, "বন্যাকবলিত এলাকার উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র যেন ফ্যাংশনাল (কার্যকর) হয়, সেখানে যেন ডাক্তারদের উপস্থিতি থাকে– তা নিশ্চিত করতে হবে। জরুরি প্রয়োজনে সেখানে অন্য জায়গা থেকে ডাক্তার আনার ব্যবস্থা থাকতে হবে।"
ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ও ইউএইচসি ফোরামের আহ্বায়ক ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, "বিগত সরকার পতনের পরপরই বন্যা; এই ধরনে বড় পরিবর্তন যখন হয়, তখন বন্যা মোকাবিলায় কিছুটা ঘাটতি থাকতে পারে। এখন দ্রুত স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনের বিষয়গুলো সচল হওয়া দরকার।"
"স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রশাসনকেও নির্ভয়ে কাজ করার পরিবেশ দিতে হবে। সার্বিকভাবে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে," যোগ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে ব্র্যাক হেলথ প্রোগ্রামের সহযোগী পরিচালক ডা. শায়লা ইসলাম, সাম্প্রতিক আকস্মিক বন্যার বিস্তৃত প্রভাবের বর্ণনা দেন। সেখানে দেখা যায়, দেশের ১১টি জেলাজুড়ে ৫.৮ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্যায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭১ জনে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ।